গাজীপুর: ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন বিশ্বের সঙ্গে একাকার। পুরো পৃথিবী এখন ডিজিটাল। বিশ্বের সকল মানুষ এখন এক সেকেন্ডেই সকলের কাছে পৌঁছে যেতে যারে। তাই মানুষের কর্মকান্ড করার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্ক থাকা উচিত। বিশেষ করে ছবি তোলার ক্ষেত্রে। ছবি তোলার সময় এখন যথেষ্ট সাবধান হতে হবে কারণ একটি ছবি হতে পারে সারাজীবনের কাল।
সম্প্রতি গাজীপুরের কালিয়াকৈর উপজেলার মুচি জসিম নামে এক ব্যাক্তি নিহত হন কাপাসিয়ায়। ক্রসফায়ার না সন্ত্রাসীদের বন্দুক যুদ্ধে জসিম নিহত হয়েছেন তা এখনো পরিস্কার হয়নি। তবে তার গায়ে একাধিক গুলির চিহৃ ছিল। ময়না তদন্তের পর লাশ কালিয়াকৈরে এলাকাবাসী দাফন করতে দেয় নি। কারণ জসিমের বাড়ি ছিল কিশোরগঞ্জে। জুতার দোকানে কাজ করার সুবাধে তিনি কালিয়াকৈরে আসেন আর বনের জায়গা দখল করেন ৩০০ বিঘা। ওই জায়গায় তিনি গড়ে তোলেন সুরম্ম প্রাসাদও। বিক্রি করেন বনের জমি প্লট আকারে। হয়ে যান কোটি কোটি টাকার মালিক।
কালো টাকার মালিক হওয়ার সাথে সাথে তার নামে প্রায় ২০টির মত মামলা হয়। দুই মামলায় সাজাও হয়। বাকী মামলায় গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী হলেও তিনি পালিয়ে থাকেন নি বা কারাগারেও যাননি। কারণ জেলা পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তার সাথে ছিল তার সুসম্পর্ক। বিভিন্ন অনুষ্ঠানে মুচি জসিম পুলিশ সুপারের সাথেও ছিলেন। তার মৃত্যুর পর এ রকম অনেক ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয়। যাদের সাথে মুচি জসিমের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ হয় তাদের মধ্যে পুলিশের বড় কর্তা ব্যাক্তিরা ছাড়াও গাজীপুর সিটি মেয়র আলহাজ জাহাঙ্গীর আলমের ছবিও আছে।
মেয়রের সাথে মুচি জসিমের ছবিটি বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, কোন বড় অনুষ্ঠানের প্রথম সাঁড়িতে মেয়রের সাথে সাদা পোষাক পড়া মুচি জসিম। মেয়র ও মুচি জসিমের ছবিটি প্রমান করে যে, মেয়র থেকে জসিম অনেক বেশী উৎফুল্ল ছিলেন। কিসের যেন শক্তির মাত্রা অনেক বেশী ছিল জসিমের গায়ে।
জানা গেছে, গাজীপুর জেলা পুলিশের আয়োজনে কমিউনিটি পুলিশিং এর একটি অনুষ্ঠানে একাই একটি ব্যানার বহন করেছিলেন মুচি জসিম। ওই ব্যনারের প্রধান নেতা জসিম তা ষ্পষ্ট বুঝা যায় ওই ছবিতে।
সুতরাং এটা ষ্পষ্ট যে, জসিম একজন দাগী অপরাধী এবং কোটি কোটি কালো টাকার মালিক হওয়ায় তার সামাজিক মর্যাদাও প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। আর সেই জন্যই মুচি জসিম হয়ে গিয়েছিলেন একজন নেতা। যে নেতা সরকারী বেসরকারী অনুষ্ঠানে ১৮টি মামলার গ্রেফতারী পরোয়ানা মাথায় নিয়েও বীরের বেশে যোগদান করতে পেরেছিলেন।
কিন্তু বিধিবাম হল যখন তার মৃত্যু হল। তার মৃত্যুর পর লাশটি পর্যন্ত কালিয়াকৈরে তার অবৈধ সম্রাজ্যে দাফন করা যায় নি, এলাকাবাসীর বাঁধার মুখে। অবেশেষে কিশোরগঞ্জে নিয়ে তার লাশ দাফন করতে হয়। আর প্রশাসনও মুচি জসিমের মৃত্যুর পর তার দখল করা বনবিভাগের জমি উদ্ধারে অভিযান চালায়। গুঁড়িয়ে দেয় তার অবৈধস্থাপনা সহ সুরম্ম প্রাসাদও।
একটি দৈনিক পত্রিকা মুচি জসিমের পরিবার ও তার মেয়ের সাক্ষাৎকার প্রকাশ করেছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়, জসিমের মেয়ে গণমাধ্যম কে বলেছেন, সরকারী পৃষ্টপোষকতায় তার বাবা জসিম অপরাধী হয়েছিলেন। জসিমের মেয়ে তার বাবার বিচার চায় এবং তার বাবাকে যারা অপরাধী করেছিল তাদেরও বিচার চায়।
সুতরাং আমাদের সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে দায়িত্বশীল কোন ব্যাক্তি যেন আরো সতর্ক থাকেন। কোন অপরাধী যেন তাদের সংশ্লিষ্টতায় অপরাধ সংঘটন করতে না পারেন, সেদিকে নজর রাখতে হবে। কোন অপরাধী ভয়ানক আকার ধারণ করতে যেন না পারে এবং অপরাধী আঁচ করতে পারা মাত্রই তাকে যেন আইনের আওতায় আনা হয়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
মনে রাখা উচিত, দায়িত্বশীল মানুষ দায়িত্বশীল না হলে দায়িত্বহীনতার সংস্কৃতি মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে। আর তখন সাধারণ মানুষ দায়িত্ববোধ হারিয়ে ফেললে অপরাধের উৎসব শুরু হতে পারে। তাই সকলকে সতর্ক ও সচেতন থাকা উচিত। অপরাধকে ঘৃনা করে অপরাধীকে আইনের আওতায় আনার চেষ্টা প্রত্যেকের দায়িত্ব ও কর্তব্য।