ঢাকা: অবিলম্বে কারাগারে আদালত বসানোর প্রজ্ঞাপনকে বেআইনি দাবি করে তা বাতিল করার দাবি জানিয়েছেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবি সমিতির সভাপতি এডভোকেট জয়নুল আবেদীণ। এ প্রজ্ঞাপন বাতিল না করলে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও কথা বলেন তিনি। আজ বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান। সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি ভবনের শহীদ শফিউর রহমান হলে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, সরকার বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সুচিকিৎসা দেয়ার পরিবর্তে তাকে তিলে তিলে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিচ্ছে। খালেদা জিয়া শারীরিকভাবে খুবই অসুস্থ অবস্থায় কারা অভ্যন্তরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।
তার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে যে তিনি কারাগারের ভেতর যে কোনও দুর্ঘটনার সম্মুখিন হতে পারেন। জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচারকাজ পরিচালনার জন্য ঢাকা পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপনের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতি এ সংবাদ সম্মেলন করে। জয়নুল আবেদীন বলেন, গতকাল জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য ছিল। আমরা খালেদা জিয়াসহ অন্য দুই আসামির আইনজীবীরা যথানিয়মে যথাসময় বকশিবাজার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে অস্থায়ী আদালতে উপস্থিত হই। আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারি যে, বকশীবাজার আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে স্থাপিত অস্থায়ী আদালতের পরিবর্তে ঢাকার পুরান কেন্দ্রীয় কারাগারে খালেদা জিয়ার মামলা শুনানির জন্য অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। আমরা গেজেট প্রজ্ঞাপনে দেখলাম যে, আদালত স্থানান্তরের কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, আলীয়া মাদ্রাসা মাঠে এই মামলার বিচার কার্যক্রম চলাকালীন সময়ে এলাকাটি জণাকীর্ণ থাকে। তাই নিরাপত্তাজনিত কারণে আদালত কারাগারের ভেতরে স্থানান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, অথচ এখানেই তার একটি মামলার রায় হয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে আনা নাইকো, বড়পুকুরিয়া ইত্যাদি মামলার বিচার কার্যক্রম চলছে। খালেদা জিয়াকে কারাগারের ভেতরে ক্যামেরা ট্রায়ালের মাধ্যমে বেআইনিভাবে সাজা দেয়ার লক্ষ্যে বেআইনিভাবে একটি অস্থায়ী আদালত গঠন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। বলেন, যাতে সাধারণ জনগণ বিচারের নামে সরকারের বেআইনি কার্যক্রম দেখতে বা বুঝতে সক্ষম না হয়।
তিনি বলেন, সংবিধানের আর্টিকেল ৩৫(৩) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা মোতাবেক আদালত বলতে একটি উন্মুক্ত আদালতের কথা বলা হয়েছে। যেখানে যে কোনো পাবলিকের সাধারণভাবে প্রবেশাধিকার থাকে। কিন্তু কারাগারের যে ৭ নম্বর কক্ষটিকে আদালত হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে তা সংবিধানের ৩৫(৩) এবং ফৌজদারি কার্যবিধির ৩৫২ ধারা মোতাবেক কোনো উন্মুক্ত আদালত নয় বা হতে পারে না।
জয়নুল আবেদীন বলেন, কারা অভ্যন্তরে গঠিত আদালতটি মোটেই উন্মুক্ত আদালত না হওয়ায় এবং সেখানে পাবলিক ট্রায়াল হওয়ার কোনো সুযোগ না থাকায় এরূপ বেআইনি আদালতে খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মামলার বিচার কার্যক্রম চলার আইনগত কোনো সুযোগ নেই।
জয়নুল আবেদীন বলেন, বিএনপিসহ বাংলাদেশের প্রায় সব রাজনৈতিক দল, সুশীল সমাজ ও সাধারণ জনগণ গণতন্ত্র, আইনের শাসন, অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। তাই আগামী জাতীয় নির্বাচন থেকে খালেদা জিয়াকে দূরে রাখার অপকৌশল হিসেবে বর্তমান অবৈধ ও অগণত্রান্ত্রিক সরকার তার বিরুদ্ধে জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলাসহ প্রায় ৩৬টি মিথ্যা মামলা দায়ের করেছে। এছাড়াও একটি মিথ্যা মামলায় সম্পূর্ণ অন্যায়ভাবে সাজা দেয়ার ব্যবস্থা করে খালেদা জিয়াকে ঢাকা পুরাতন কেন্দ্রীয় কারাগারে বন্দি অবস্থায় রাখা হয়েছে। খালেদা জিয়ার অসুস্থতার বর্ণনা দিয়ে জয়নুল আবেদীন বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। তার একটি হাত ও একটি পা কোনও কাজ করে না এবং প্রায় অবশ অবস্থায় তিনি দিন পার করছেন। তিনি আথরাইটিস রোগে আক্রান্ত। কিছুদিন আগে তিনি জেলখানায় মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিলেন। তিনি ইউনাইটেড হসপিটালে তার চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা নেয়ার দাবি জানালেও তাকে কোনও চিকিৎসা দেয়া হয়নি। সমিতির সম্পাদক ব্যারিস্টার এএম মাহবুব উদ্দিন খোকনসহ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন- সমিতির সহসভাপতি গোলাম মোস্তফা ও গোলাম রহমান ভূঁইয়া, নিতাই রায় চৌধুরী, সানাউল্লাহ্ মিয়া, বদরুদ্দোজা বাদল, আমিরুল ইসলাম, গাজী কামরুল ইসলাম, একেএম এহসানুর রহমান, আহসান উল্লাহ, মেহেদী হাসানসহ আইনজীবীরা।
উল্লেখ্য, কারাবন্দি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে করা জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট মামলার বিচার কাজ সম্পন্ন করতে পুরাতন ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অস্থায়ী আদালত স্থাপন করা হয়েছে। মঙ্গলবার গেজেট প্রকাশের পর গতকাল বুধবার ওই আদালতে বিচার কাজও শুরু হয়।