গ্রাম বাংলা ডেস্ক ঢাকা: শক্ত শর্তসাপেক্ষে অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ শিল্পখাতে কালো টাকা ব্যবহারের সুযোগ দেওয়ার সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ অর্থনীতি সমিতি।
২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেট প্রতিক্রিয়ায় অর্থনীতি সমিতি শনিবার বিকেলে রাজধানীর ইস্কাটনে সংগঠনটির মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মলনে এ সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সমিতির সভাপতি ড. আবুল বারকাত ও সাধারণ সম্পাদক ড. তৌফিক আহমদ চৌধুরী।
এতে বলা হয়, কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয়ের বিষয়টি স্পর্শকাতর। দেশে পুঞ্জিভূত কালো টাকার আনুমাণিক পরিমাণ হবে ৫ থেকে ৭ লাখ কোটি টাকা (অর্থমন্ত্রণালয়ের মতে, জিডিপির ৪২ থেকে ৮০ শতাংশ), যা উদ্ধার করা প্রয়োজন। দেশে যেহেতু উৎপাদনশীল বিনিয়োগের চাহিদা অনেক বেশি, সেহেতু শক্ত শর্তে কালো টাকার গন্তব্যস্থল হিসেবে অবকাঠামো খাতের রাস্তাঘাট-ব্রিজ-বিদ্যুৎকেন্দ্রসহ শিল্পখাতের কথা (বিশেষত শিল্পের বিকেন্দ্রীকরণ) ভাবা যেতে পারে। এছাড়া সরকার এ বিষয়ে একদিকে যেমন একটি শ্বেতপত্র প্রকাশ করতে পারে, অন্যদিকে একটি কমিশন গঠন করতে পারেন।
এছাড়া ব্যাংকিং শৃংখলা নিশ্চিত করাসহ বাংলাদেশ ব্যাংকের মুদ্রানীতি ও ঋণনীতি হতে হবে বিনিয়োগবান্ধব। একইসঙ্গে বিনিয়োগ পরিবেশ উন্নতিকল্পে বাংলাদেশ সরকারকে উপযুক্ত রাজস্ব নীতিমালা প্রণয়ন করা জরুরি।
কৃষিখাতের অর্জনগুলো ধরে রাখার জন্য নিশ্চিত করা জরুরি যেন কৃষি ভর্তুকি ও ভর্তুকিবৈষম্য হ্রাস পায়। কৃষি ও কৃষক ভাবনার যর্থাথতা বিচারে ৫০ হাজার ভূমিহীন পরিবারের মধ্যে বন্দোবস্ত দেওয়া সম্ভব ১০ হাজার একর কৃষি জমি। এর পাশাপাশি ২০ হাজার জলাহীন প্রকৃত মৎস্যজীবী পরিবারের মধ্যে ৫ হাজার একর খাস জলাশয় বন্দোবস্ত করাও সম্ভব।
অর্থনীতি সমিতি চূড়ান্ত ভূমি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। একই সঙ্গে বলেছে টিনধারীর (Tax Identification Number) (ব্যক্তিগত ও কোম্পানি) রিটার্ন জমা দেওয়ার বাধ্যবাধকতা থাকা উচিত। প্রতিবছর একটি নির্দিষ্ট ফি প্রদানের মাধ্যমে টিন নবায়ন করা যেতে পারে। দেশে আনুমাণিক ৫০ জন ব্যক্তি বছরে এক কোটি টাকা বা তদুর্ধ্ব ব্যক্তিগত আয়কর দেন।
সমিতির হিসাবে, বছরে কমপক্ষে এক কোটি টাকা বা তদুর্ধ্ব ব্যক্তিগত আয়কর দেওয়ার যোগ্য মানুষের সংখ্যা এদেশে কমপক্ষে ৫০ হাজার। অর্থাৎ, এদের কাছ থেকেই বছরে কমপক্ষে ৫০ হাজার কোটি টাকা আহরণ সম্ভব।
অন্যদিকে দারিদ্র্যের তথ্যভাণ্ডার গড়ে তোলার লক্ষ্যে চূড়ান্ত বাজেটে বরাদ্দসহ দিক নিদের্শনা থাকা জরুরি বলেও মনে করে সংগঠনটি।
জাতীয় শিক্ষানীতি ২০১০ বাস্তবায়নে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দ রাখার সঙ্গে সঙ্গে চূড়ান্ত বাজেটে শিক্ষার স্তরভেদে প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চ, বিশেষায়িত, ভোকেশনাল প্রভৃতি এবং মূলধারা ও মাদ্রাসা শিক্ষার বাজেট বরাদ্দ ভিন্ন দেখানো উচিত।
এদিকে নদীর দখল-দূষণ প্রতিকারে ‘জাতীয় নদী কমিশন’ গঠনের সুপারিশ বাস্তবায়ন করা উচিত বলে জোর দিয়ে আইন সমিতি বলেছে, পরিবেশবান্ধব বাজেটের জন্য প্রয়োজন প্রভাবশালী স্বার্থগোষ্ঠীর পরিবেশবিরোধী অন্যায় কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে রাজনৈতিক অঙ্গীকার। বিষয়টি চূড়ান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত হওয়া জরুরি। আবার সিগারেট ও বিড়ির ক্ষেত্রে গড়পড়তা খুচরা মূল্যের উপর ৭০ শতাংশ এক্সাইজ করারোপ করা, মাতৃমৃত্যু কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় কমিয়ে আনতে বরাদ্দ কমপক্ষে দ্বিগুণ করা প্রয়োজন।
এছাড়া মানবসম্পদ, ভৌত সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সমন্বিত অর্থনৈতিক-রাজনৈতিক-সামাজিক ফলপ্রদ ব্যবস্থাপনা নিয়ে প্রায়োগিক ভাবনার সংস্কৃতি গড়ে তুলতে হবে। সে অনুযায়ী কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন ও তা ফলপ্রদতার সঙ্গে বাস্তবায়নের তাগিদ দেয় সংগঠনটি।
সংবাদ সম্মেলনে বাজেটে বেশ কিছু সাহসী, স্বচ্ছ, লক্ষ্য নির্দিষ্ট এবং বাস্তবায়নযোগ্য পদক্ষেপ রয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। তাই এ বছরের বাজেট আশাসঞ্চারণকারী দলিল বলে মন্তব্য তাদের।
এসময় অর্থনীতি সমিতির অন্য নেতারা উপস্থিত ছিলেন।