ভয়াবহ বিপর্যয় সুন্দরবনকে কোথায় নিয়ে ঠেকাবে?

কৃষি, পরিবেশ ও প্রকৃতি সম্পাদকীয়

001ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে সুন্দরবন। এ বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা খুবই দুরূহ কাজ। যত দূর খবর পাওয়া গেছে, শ্যালা নদীতে ফার্নেস অয়েলবাহী ট্যাংকারডুবির কারণে তেল ছড়িয়ে পড়ছে কিলোমিটারের পর কিলোমিটার এলাকাজুড়ে।

এতে চরম হুমকিতে পড়েছে প্রায় ৩৭৫ প্রজাতির বন্য ও জলজ প্রাণী। এর মধ্যে ৩২ প্রজাতির স্তন্যপায়ী, ৩৫ প্রজাতির সরীসৃপ, ৩০০ প্রজাতির পাখি এবং ৮ প্রজাতির উভচর প্রাণী রয়েছে বলে পত্রিকায় খবর বেরিয়েছে।

জনপ্রিয় অনলাইন পত্রিকা রাইজিংবিডির খবর অনুযায়ী, বন্য ও জলজ প্রাণী ছাড়াও ৩৩৪ প্রজাতির গাছগাছালি, ১৬৫ প্রজাতির শৈবাল এবং ১৩ প্রজাতির অর্কিডও পড়েছে একই ধরনের হুমকিতে। কারণ, ম্যানগ্রোভ বনের এসব উদ্ভিদ শ্বাসমূল দিয়ে অক্সিজেন গ্রহণ করে থাকে। ডুবে যাওয়া ট্যাংকার থেকে প্রায় সাড়ে তিন লাখ লিটার ফার্নেস অয়েল দ্রবীভূত হওয়ায় ওই এলাকার পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে গেছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পানিতে অক্সিজেনের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণে এসব উদ্ভিদ স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশ্বাস নিতে পারছে না। এ জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে, সুন্দরবনে ভয়াবহ বিপর্যয় নেমে আসছে। যে বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠা আমাদের পক্ষে খুবই কষ্টসাধ্য ব্যাপার।

পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুযায়ী ট্যাংকার ডুবে যাওয়ায় সুন্দরবনের শ্যালা, চাঁদপাই, দুধমুখী ও ধানসারি নদীসহ আশপাশের নদ-নদী ও শাখা-প্রশাখার খালগুলোতে বিপুল পরিমাণ ফার্নেস অয়েল ছড়িয়ে পড়েছে। এরই মধ্যে প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে তেলমিশ্রিত পানিতে মরে ভেসে উঠছে মাছসহ নানা ধরনের জলজ প্রাণী। এই বিপর্যয়ের প্রভাব শুধু জলজ প্রাণীর ওপরই পড়ছে না, সুন্দরবনের সুন্দরী, গেওয়া, পশুর, গরান ও গোলপাতাসহ প্রায় ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদও এখন মারাত্মক হুমকির মুখে।

খবর থেকে আরো জানা গেছে, সুন্দরবন এলাকার ৪৫০টি নদ-নদী ও খালে এই তেল ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে করে প্রায় ১ হাজার ৮৭৫ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে জীববৈচিত্র্যের মারাত্মক ক্ষতি হতে পারে।

কিন্তু আমরা সবাই জানি, সুন্দরবনে যে অফুরন্ত প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন ওই এলাকার কয়েক লাখ মানুষ। তারা মৎস্য সম্পদসহ সুন্দরবনের মধু সংগ্রহ করে আসছেন যুগ যুগ ধরে।

দুর্ঘটনাজনিত এবং মনুষ্যসৃষ্ট এই বিপর্যয় এখন সুন্দরবনকে কোথায় নিয়ে ঠেকাবে, তা অনুমান করা সত্যিই কষ্টসাধ্য বিষয়।

উল্লেখ্য, মঙ্গলবার ভোরে ঘন কুয়াশার কারণে এমভি টোটাল নামের একটি জাহাজের ধাক্কায় তেলবাহী এমভি ওটি সাউদার্ন স্টার সেভেনের তলা ফেটে যায়। ধীতর ধীরে ডুবে যায় ট্যাংকারটি। এতে থাকা ৩ লাখ ৫৭ হাজার ৬৬৪ লিটার তেল পানিতে ছড়িয়ে পড়ে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *