কাঁচা মরিচের ভালো দাম পাচ্ছেন না মেহেরপুরের চাষীরা। তাদের উৎপাদিত কাঁচা মরিচ কিনে নিয়ে অন্যত্র বিক্রি করে লাভবান হচ্ছেন মধ্যস্বত্ত্বভোগিরা।
লাভের আশায় হাজার হাজার টাকা খরচ করে কাঁচা মরিচ চাষ করে ক্ষতির মুখে পড়েছেন এ জেলার চাষীরা। বাধ্য হয়ে কাঁচা মরিচ তুলে অনেক চাষী রবি শষ্য চাষের দিকে ঝুঁকছেন।
মেহেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব মতে এবছর মেহেরপুরে ২ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ হয়েছে। যা গত বছরের তুলনায় অনেক বেশি। এছাড়া অন্যান্য বছরের তুলনায় জমিতে কাঁচা মরিচের ফলনও ভাল হয়েছে।
মেহেরপুর সদর উপজেলার রায়পুর-খন্দকারপাড়া গ্রামের মাঠে খন্দকারপাড়া গ্রামের চাষী বগা এক বিঘা, ভম্বল ১০ কাঠা, জাবেদ ১০ কাঠা, মাফির এক বিঘা, পাঁচু এক বিঘা, খোকন মীর ১৫ কাঠা, সবদুল ২ বিঘা, মুস্তাকিম এক বিঘা ও মিয়া ২ বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ করেছেন। এছাড়াও ওই মাঠে আরো অনেকে কাঁচা মরিচ চাষ করেছেন। চাষিরা জানালেন, বৈশাখ মাসের মাঝা-মাঝি সময়ে খেতে কাঁচা মরিচের চারা রোপন করা হয়। একবার রোপন করা খেত থেকে প্রায় সারা বছর কাঁচা মরিচ তোলা যায়। এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে কাঁচা মরিচের চাষ করতে সেচ, সার, চারা, কীটনাশক ও শ্রমিক খরচ সব মিলিয়ে চাষীদের ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। অনেক চাষী অগ্রহায়ণ মাসে জমিতে বীজ বুনে কাঁচা মরিচ চাষ করছেন। বীজ বুনে কাঁচা মরিচ চাষে খরচ কিছুটা কম হয়।
খন্দকারপাড়া গ্রামের চাষী আব্দুস সবুর জানান, গতবছর কাঁচা মরিচে ভাল লাভ হওয়ায় এবছর অনেক চাষী অনেক বেশি জমিতে মরিচ চাষ করেছেন। কিন্তু দাম পাচ্ছেন না তারা। আগাম চাষ করে কিছু কিছু চাষী লাভবান হলেও দেরিতে কাঁচা মরিচের চাষ করে জেলার প্রায় ৭৫ ভাগ চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
এদিকে ক্রেতা সাধারণের অনেকে জানিয়েছেন, এবছর কাঁচা মরিচে চাষী ক্ষতিগ্রস্ত হলেও খুচরা বিক্রেতাদের কাছ থেকে তাদের ১৬০ টাকা থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে কিনে খেতে হয়েছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে চাষীরা বস্তা ভরে নছিমন, করিমনে করে মরিচ মেহেরপুর বাজারে এনে বিক্রি করছেন। পাইকারী বিক্রি হচ্ছে মাত্র ৫ টাকা থেকে ৬ টাকা কেজি দরে।
অথচ খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে জানা গেছে, তারা পাইকারী বিক্রেতাদের কাছ থেকে ১৫ টাকা থেকে ১৮ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কেনেন। এরপর প্রতি কেজিতে এক টাকা করে খরচ দিতে হয় বাজারের লিজ গ্রহিতাদের। পরে তারা প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ ২৫ টাকা থেকে ৩০ টাকায় খুচরা বিক্রি করেন।
চাষীরা জানান, কাঁচা মরিচ চাষে প্রতি বিঘাতে ১৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা খরচ করেও লাভের মুখ দেখতে পাচ্ছেন না তারা। অথচ বিক্রির বেলায় হাত বদলের ক্ষেত্রে আড়ৎদার ও খুচরা ব্যবসায়ীরা প্রত্যেকে প্রতি কেজি কাঁচা মরিচে ১০ টাকা থেকে ১২ টাকা করে লাভ করছেন।
অভিযোগ করে চাষীরা বলেন, তাদের খেতে উৎপাদিত মরিচ তারা সরাসরি খুচরা ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করতে পারেন না। পাইকারী ও খুচরা ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে কাঁচা মরিচ কেনা-বেচা করায় চাষীর লাভ উঠছে তাদের ঘরে।
মেহেরপুর ছোট বাজারের সবজি ব্যবসায়ী আমজাদ হোসেন জানান, সিন্ডিকেট নয়। আসলে সবজিতে থাকে ঝুঁকি। এগুলো দ্রুত পঁচে যায়। তাই সবজি ব্যবসায়ীরা একটু বেশি দামে বিক্রি করে থাকেন।
মেহেরপুর খন্দকারপাড়ার চাষী মনিরুল ইসলাম জানান, তিনি এবছর ১০ কাঠা জমিতে কাঁচা মরিচ চাষ করে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন। তিনি তার খেত থেকে প্রথম দিকে মাত্র ৫ কেজি কাঁচা মরিচ তুলে ৯০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছিলেন। এরপর আর দাম পাননি।
তিনি বলেন, ‘মরিচের দাম না পেয়ে গাছ তুলে দিচ্ছি। এই খেতে তামাক, গম, আলু অথবা অন্য রবি ফসলের চাষ করব।’