গাজীপুর: ২০১৭ সালের ৩০ অক্টোবর গাজীপুরে জুয়ার আসরে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনায় দুই ব্যাক্তি খুন হন। এই ঘটনায় জয়দেবপুর থানায় অজ্ঞাত আসামী করে মামলা হয়। নিতহ দুই ব্যাক্তির মধ্যে একজনের লাশ ময়না তদন্ত ছাড়াই নিয়ে যায় আত্মীয় স্বজন।
সংঘর্ষের ওই ঘটনার পর পুলিশ আগুন দিয়ে জুয়ার আসর পুড়িয়ে দিয়েছে। এ ছাড়া ওই ঘটনা তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছিল।
নিহতরা হলেন, আবদুল কাদের (৫৩)। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী কেন্দুয়া এলাকার বাসিন্দা। শ্রীপুর বরমী বাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় ফল ও পানের ব্যবসা করতেন তিনি। আরেকজন আব্দুল আজিজ (৫০)। তিনি ঢাকার সাভারের উত্তর রাজাসন এলাকার মৃত মাইন উদ্দিনের ছেলে।
পুলিশ ও এলাকাবাসী জানায়, গাজীপুর সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি কয়েকদিন আগে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়ার আসর বসায়। জুয়ার বোর্ডে জমা দেওয়া টাকা নিয়ে জুয়াড়ি ও বোর্ড পরিচালনাকারীদের মধ্যে রাতে সংঘর্ষ ও ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় দৌঁড়ে পালানোর সময় কয়েকজন ব্যক্তি পাশে হাজেরার বাড়ির ময়লা পানি ও আবর্জনার গর্তে পড়ে যান। ঘটনার পরপর স্থানীয় লোকজন ওই গর্ত থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ১০ থেকে ১২ জনকে উদ্ধার করে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে পাঠান। এদের মধ্যে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর আজিজুর রহমান নামের সাভারের এক ব্যবসায়ীকে মৃত ঘোষণা করেন কর্তব্যরত চিকিৎসক। তিনি ঢাকার সাভারের উত্তর রাজাসন এলাকার মৃত মাইন উদ্দিনের ছেলে।
এদিকে জুয়ার আসরে আসা শ্রীপুরের ব্যবসায়ী আবদুল কাদের ওই ঘটনার পর থেকে নিখোঁজ হয়। স্বজনরা বিভিন্ন স্থানে খোঁজ করেও তাঁর সন্ধান পাননি। ১ নভেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয়রা ময়লার ওই ডোবায় এক ব্যক্তির লাশ দেখতে পায়। খবর পেয়ে ছেলে আকতার হোসেন ঘটনাস্থলে এসে তাঁর বাবার লাশ শনাক্ত করেন।
পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়।
অপরদিকে হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নাজমুল ইসলাম জানান, ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে পুলিশ ওই জুয়ার আসরে অভিযান চালিয়ে প্যান্ডেলের কিছু অংশ ভেঙে দেয় এবং আগুন লাগিয়ে পুড়ে দেয়।
এ ব্যাপারে ওই সময় গাজীপুরের জেলা প্রশাসক ড. দেওয়ান মোহাম্মদ হুমাইয়ুন কবির জানান, সোমবার রাতের ওই ঘটনার ব্যাপারে, এক ব্যক্তির লাশ কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়া হাসপাতাল থেকে নিয়ে যাওয়ার ঘটনা সম্পর্কে ও ঘটনার সঙ্গে কারা জড়িত সে বিষয়ে তদন্তের জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রাহেনুল ইসলামকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি মঙ্গলবার গঠন করা হয়েছে। কমিটিকে আগামী তিন কার্যদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন গাজীপুরের এনডিসি কুদরত-ই-খুদা জুয়েল ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট রাসেল মিয়া।
উল্লেখ্য, সদর উপজেলার বাঘের বাজার এলাকায় স্থানীয় কয়েকজন ব্যক্তি কয়েকদিন আগে অশ্লীল নৃত্য ও জুয়া খেলার আসর পরিচালনা করে আসছিল। টিন দিয়ে অস্থায়ীভাবে বেড়া নির্মাণ করে এবং সামিয়ানা টানিয়ে ওই আসরে একাধিক জুয়ার বোর্ড পরিচালিত হতো। জেলা প্রশাসন এর আগে বিভিন্ন সময়ে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করে উচ্ছেদ অভিযান চালায়। আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিলেও তা আবার শুরু হয়।
রাতের ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ী আজিজুরের লাশ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমতি না নিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই হাসপাতাল থেকে নিয়ে যায় স্বজনরা। হাসপাতাল থেকে লাশ গায়েবের বিষয়টি দুপুরে প্রকাশ পেলে হাসপাতালের পক্ষ থেকে জয়দেবপুর থানায় একটি জিডি করা হয়েছে।
স্থানীয়রা বলছেন, দুটি খুনের ঘটনায় অজ্ঞাতনামা আসামী করে মামলা হয়েছে। প্রকৃত আসামীদের আড়াল করতেই অজ্ঞাত নামা আসামী করা হয়। সূত্র বলছে, যারা জুয়ার সাথে সংশ্লিষ্ট, তাদের আসামী করে বাদীপক্ষ লিখিত এজাহার দিলেও তা রেকর্ড হয়নি। রেকর্ড হয়েছে অজ্ঞাতনামা একটি এজাহার।
কাল আসছে খুনের নেপথ্যে——