রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের প্রফেসর ড. এ কে এম শফিউল ইসলাম লিলন হত্যায় নেপথ্যের নারী নাসরিন আখতার রেশমাকে প্রায় এক মাসেও খুঁজে পায়নি পুলিশ। আসামীরা এখনো গ্রেফতার না হওয়ায় আগামী শনিবার সকাল ১০টা থেকে বেলা ১২টা পর্যন্ত ২ ঘণ্টার কর্মবিরতি ঘোষণা দিয়েছে রাবি শিক্ষক সমিতি।
অধ্যাপক লিলন গত ১৫ নভেম্বর সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন। হত্যার ক্লু বের করতে পুলিশ ৫০জনকে আটক করে। আটককৃতদের মধ্যে ১১ জনকে গ্রেফতার দেখিয়ে জেলহাজতে পাঠানো হয়। গ্রেফতারকৃত ১১ জনকে পুলিশ রিমান্ডের জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করেন। পুলিশ তাদের কাছ থেকে কোনো ক্লু উদ্ধার করতে পারেনি।
গত ২১ থেকে ২৩ ডিসেম্বর র্যাব ঢাকা ও রাজশাহীতে অভিযান চালিয়ে আরো ৬ জনকে আটক করে। র্যাব পুলিশের কাছে হস্তান্তর করলে তাদেরকে গ্রেফতার দেখানো হয়। গ্রেফতারকৃতরা হচ্ছেন-জেলা যুবদলের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য কাটাখালী পৌর যুবদল নেতা আরিফুল ইসলাম মানিক, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদলের সাবেক যুগ্ম আহবায়ক আবদুস সালাম পিন্টু, যুবদল কর্মী সবুজ, আল মামুন, সিরাজুল ইসলাম কালু ও ইজিবাইক চালক ইব্রাহিম খলিল বাবু। ছয় আসামী কাটাখালি ও মির্জাপুর এলাকার শীর্ষ সন্ত্রাসী।
পুলিশ জানায়, র্যাব যে ৬ জনকে গ্রেফতার করেছে, তারা হত্যাকান্ডেয় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। গত ২৫ নভেম্বর ১৬৪ ধারায় তাদের জবানবন্দি রেকর্ড করতে আদালতে হাজির করা হয়। কিন্তু বিচারকের কাছে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে তারা অস্বীকৃতি জানায়।
রিমান্ডে আবদুস সালাম পিন্টু পুলিশকে জানায়, তার স্ত্রী নাসরিন আখতার রেশমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেন ড. শফিউল। তাই তিনি ড. শফিউলের ওপর চরম ক্ষুব্ধ হন। ক্ষুদ্ধ হয়ে ড. শফিউলের সাথে পিন্টু কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু, শফিউল তার (পিন্ট) সাথেও খারাপ আচরণ করেন বলে পুলিশকে জানায়। ঘটনাটি পিন্টু তার ঘনিষ্ঠ রাবি শাখা ছাত্রদলের সাবেক সহ-সভাপতি উজ্জলকে জানায়। ঘটনাটি জানার পর উজ্জল ড. শফিউলের সঙ্গে দেখা করেন। উজ্জলের সাথেও শফিউল খারাপ আচরণ করেন বলে তিনি (উজ্জল) পুলিশকে জানান। ক্ষুদ্ধ হয়ে তারা প্রতিশোধ নেওয়ার পরিকল্পনা নেন।
হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী উজ্জল কাটাখালি আ’লীগের সভাপতি আব্বাস আলীর ভাই মানিককে ভাড়া করেন। মানিক ও তার সাঙ্গপাঙ্গরা মিলে ড. শফিউলকে হত্যা করেন। এরপর থেকেই উজ্জল, রেশমা গা ঢাকা দিয়েছেন। হত্যার সাথে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডার জামাইবাবুও জড়িত। জামাইবাবু পিন্টুর খুব কাছের লোক বলে জানা গেছে।
রেশমা বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব শাখার সেকশন অফিসার হিসেবে কর্মরত। তিনি হিসাব শাখায় যে বিষয়টি দেখেন, তাতে কোনো শিক্ষকের সঙ্গে তার যোগাযোগ হবার কোনো সুযোগ
রেশমা সম্পর্কে রাবির হিসাব পরিচালক আশরাফ-উল-হুদা বলেন, ড. শফিউল নিহত হবার পর যেদিন থেকে রেশমার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, সেদিন থেকেই তিনি কর্মস্থলে অনুপস্থিত। রেশমা প্রথমে নৈমিত্তিক ছুটির জন্য দরখাস্ত করেছিলেন। তার নৈমিত্তিক ছুটি পাওনা না থাকায়, হিসাব শাখা থেকে তার আবেদনটি রেজিস্ট্রার দফতরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। অর্জিত ছুটির জন্য তাকে রেজিস্ট্রার অফিসে দরখাস্ত করতে বলা হয়। আর এ দরখাস্তও তিনি স্বশরীরে জমা না দিয়ে, ডেসপাসের মাধ্যমে পাঠান।
হিসাব পরিচালক বলেন, ড. শফিউল বা বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষকের সাথে অফিসিয়ালি রেশমার কোনো সম্পর্ক নেই। আর এখান থেকে একজন শিক্ষকের সাথে ঝামেলা হবারও কোনো প্রশ্নই আসে না। তবে যদি কারো ব্যক্তিগত সম্পর্ক থেকে ঝামেলা হয়ে থাকে, তাহলে হিসাব অফিসের জানার কথা নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. এন্তাজুল এম হক বলেন, যদি কারো ছুটি কার্যকর না হয়, তাহলে তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আগে সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে সে অফিসে আসছেন না, এমন অভিযোগ করতে হবে। পরে আমরা অফিসে নিয়মিত উপস্থিত হওয়ার জন্য তাকে আল্টিমেটাম দিয়ে চিঠি দিবো। তাতে না হলে সিন্ডিকেটের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
রেশমার চাচা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাডেমিক শাখার সহকারী রেজিস্ট্রার রাব্বেল হোসেন বলেন, রেশমা আমার ভাইয়ের মেয়ে। সে এখন কোথায় আছে কিভাবে আছে আমরা জানি না। সে এখন তার শশুরবাড়ির লোকজনের নিয়ন্ত্রণে আছে। আর ড. লিলনের সাথে আমাদের ও তার শশুর বাড়ির লোকজনের সাথে কোনো পারিবারিক সম্পর্ক নেই।
ওসি আলমগীর হোসেন জানান, বর্তমানে ড. লিলন হত্যাকা-ের ঘটনায় ১৯জনকে গ্রেফতার করে জেলহাজতে রাখা হয়েছে। পুলিশ উজ্জল, জামাইবাবু, ও রেশমাকে খুঁজছে। তাদের গ্রেফতার করার জন্য আইন-শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা সজাগ রয়েছেন। এ তিনজনকে গ্রেফতার করা গেলেই হত্যার বিচারকাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে বলে জানান তিনি।