জাতিসংঘের তদন্তে যখন বলা হচ্ছে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী গণহত্যা চালিয়েছে তখন চীন উল্টো সুর ধরেছে। তারা বলেছে, রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হলে তা সঙ্কট সমাধানে সহায়ক হবে না। বেইজিং থেকে এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। সোমবার জাতিসংঘের ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন রোহিঙ্গা ইস্যুতে তাদের প্রথম রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। এতে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের কর্মকর্তাদের চালানো নির্যাতনের জন্য গণহত্যার অভিযোগে বিচারের আহ্বান জানানো হয়েছে। এমন আহ্বানে মিয়ানমার বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা জোরালো হয়েছে।
ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের কাছে সুপারিশ করেছে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা, কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে টার্গেটেড অবরোধ দেয়া এবং সন্দেহভাজনদের বিরুদ্ধে বিচারের ব্যবস্থা করতে অথবা তাদেরকে হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের মুখোমুখি করাতে। কিন্তু মিয়ানমারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে চীনের। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও কর্মকর্তারা সন্ত্রাস বিরোধী অভিযান চালানোর দাবি করে। মিয়ানমারের সেই দাবির প্রতি সমর্থন রয়েছে চীনের। এর আগে রোহিঙ্গা ইস্যুতে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে একটি প্রস্তাব উত্থাপন হয়েছিল। কিন্তু সেই প্রস্তাব আটকে দেয় চীন ও রাশিয়া। সর্বশেষ জাতিসংঘ ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশনের রিপোর্টের বিষয়ে চীনা পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র হুয়া চুনিংয়ের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চান। তিনি মঙ্গলবার নিয়মিত ব্রিফিং করছিলেন। এ সময় তিনি বলেন, রাখাইনে রোহিঙ্গা ইস্যুটি ঐতিহাসিক, ধর্মীয় ও জাতিগত দিক থেকে অতি জটিল। তাই আমি মনে করি এ বিষয়ে একতরফা সমালোচনা অথবা চাপ প্রয়োগ করা সমস্যা সমাধানে প্রকৃতপক্ষে কোনো সহায়ক হবে না।
এক বছর আগে মিয়ানমারের সেনাদের নৃশংস দমনপীড়নে রাখাইন থেকে কমপক্ষে ৭ লাখ রোহিঙ্গা পালিয়ে এসে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। তারা এখনো বাংলাদেশেই অবস্থান করছেন। এ পর্যন্ত তাদেরকে ফেরত নেয়া নিয়ে অনেক দেনদরবার হয়েছে। কিন্তু কোনো অগ্রগতি দেখা যাচ্ছে না। এ বিষয়ে চীনা ওই মুখপাত্র বলেন, এরই মধ্যে মিয়ানমার ও বাংলাদেশের মধ্যে আলোচনায় ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। একটি চুক্তি হয়েছে দু’বছরের মধ্যে স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবর্তন নিয়ে। হুয়া চুনিং বলেন, আলোচনা ও শলাপরামর্শের মাধ্যমে রাখাইনের এই সমস্যা সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমার ও বাংলাদেশকে নিয়ে যথাযথ গঠনমুলক ভূমিকা অবলম্বন করা।