সরকার পতনের আন্দোলন নিয়ে সিদ্ধান্তে আসতে পারছে না ২০ দলীয় জোটের প্রধান দুই শরিক বিএনপি-জামায়াত। এ নিয়ে চলছে দুই দলের মধ্যে মতপার্থক্য। বিএনপি চাচ্ছে সময় নিয়ে আন্দোলনকে চূড়ান্ত রুপ দিতে কিন্তু শর্টটাইম আন্দোলনের মাধ্যমেই সরকার পতনের কথা ভাবছে জামায়াতে ইসলামী। জামায়াতের এ কৌশলের সঙ্গে একমত জোটের বেশিরভাগ শরিক দলগুলো।
রোববার ২০দলীয় জোটের মহাসচিব পর্যায়ের বৈঠকে সরকার পতনের আন্দোলনের বিষয় নিয়েও আলোচনা হয়েছে। বৈঠক সূত্রে জানাগেছে, জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে দলটির কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদের সদস্য ডা. রেদওয়ান উল্লাহ শাহেদী শর্টটাইম আন্দোলনের কথা বলেছেন। তিনি বলেনছেন, “লংটার্মে সরকার পতনের আন্দোলন হয় না। শর্টটার্মে সরকার পতনের আন্দোলন চূড়ান্ত পর্যায়ে নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবরোধের মতো কর্মসূচি দিলেই ভাল। কারণ আমরা অবরোধ ডাকলে তো সরকার নিজেই সারাদেশ অবরোধ করে। আর এ ধরনের কর্মসূচি ধারাবাহিকভাবে দিলে সরকার দুর্বল হয়ে পড়বে।”
জামায়াত সূত্র জানায়, গ্যাস-বিদ্যুতের দাম বাড়ালে একটা হরতাল দিয়ে সরকার পতন হবে না। একটা টার্গেট নিয়ে মাঠে নামতে হবে। সরকারের পতন ঘটাতে হলে সিরিয়াস কর্মসূচি হাতে নিতে হবে। এবং ওই আন্দোলনে জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জামায়াতে ইসলামীর আন্দোলনের এ কৌশল নিয়ে জোটের বেশিরভাগ দলগুলো সহমত প্রকাশ করলেও বিএনপির লংটাইম সিদ্ধান্তের কারণে কেউ তা প্রকাশ করছেন না।
জোটের শরিক অন্যান্য দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে কথা বললে তারা বলেন, “অল্প সময়ে রাজপথের কঠোর আন্দোলন ছাড়া বিকল্প নেই। দীর্ঘমেয়াদী আন্দোলনে রাজপথের নেতাকর্মীদের ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনাও বেশি। এজন্য কম সময়ে পরিকল্পনামাফিক কঠিন আন্দোলনে যাওয়া উচিত।”
জোটের শরিক ইসলামী ঐক্যজোটের চেয়ারম্যান মাওলানা আব্দুল লতিফ নেজামী বলেন, “২৯ ডিসেম্বর মার্চ ফর ডেমোক্রেসী কিংবা চলো চলো ঢাকা চলোর মতো কর্মসূচি দিলে সরকারের পক্ষ থেকেই পুরো ঢাকাকে অবরুদ্ধ করে ফেলবে। এই অযুহাতে এবং কর্মসূচি পালনে বাধার প্রতিবাদে জোটের পক্ষ থেকেও লাগাতার অবরোধের মতো কর্মসূচি দেয়া যেতে পারে। এভাবে কয়েকদিন চলতে থাকলে সরকার এমনিতেই দূর্বল হয়ে পড়বে।”
বিএনপি সূত্র জানায়, আন্দোলনকে ধাপে-ধাপে কঠিন করার পরিকল্পনা রয়েছে বিএনপির। এর পাশাপাশি দেশি-বিদেশি চাপের মুখে রাখবে সরকারকে। বিএনপি মনে করছে, সরাসরি কঠিন আন্দোলনে গেলে সরকার ওই আন্দোলনকে দমানোর জন্য নেতাকর্মীদের ওপর মামলা, হামলা ও নির্যাতন বাড়িয়ে দেবে। এবং আন্দোলনের সহিংসতার দায়ভারও ২০ দলীয় জোটের উপর প্রভাব ফেলবে। ফলে দেশি-বিদেশি বন্ধু মহল বিরুপ মনোভব নিতে পারে। তাই সাবধানে তারা আন্দোলনকে চুড়ান্ত রুপ দিতে চাইছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঢাকা মহানগর জামায়াতে ইসলামীর একজন কর্মপরিষদ সদস্য বলেন, “লংটাইম আন্দোলনের জন্য যে ধৈর্য, সাহস ও সামর্থ থাকা দরকার তা আমাদের অনেক দলেরই নেই। বিগত আন্দোলন চলাকালে বেশিরভাগ নেতাই নেতাকর্মীদের খোঁজ পর্যন্ত রাখেনি। কর্মীদের বন্ধুকের সামনে রেখে নেতারা পালিয়ে গেছে। এধরনের নেতাদের সংখ্যাই জোটের মধ্যে বেশি। তাহলে লংটাইম আন্দোলনে তারা কেন ঝুঁকি নিবে।”
শিবিরের কেন্দ্রীয় সম্পাদক পর্যায়ের এক নেতা বলেন, “সারাদেশের মানুষ আন্দোলনের জন্য মুখিয়ে আছে। আমরা গণতান্ত্রিক, নিয়মতান্ত্রিক আন্দোলন কথা বক্তব্য দিয়েই শেষ করেছি। এসব দিয়ে আর হবে না। এখন সরকারের পতন দেখতে হলে একটি শক্ত ধাক্কা দিতে হবে। যদি সেটা পারা যায় তাহলেই সরকার পতন হবে।”
গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম বাড়ালেই কঠোর আন্দোলনে যাবে এমন সিদ্ধান্ত হয়েছে জোটের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের বৈঠকে। এজন্য দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেয়ার সাথে সাথেই হরতাল দিয়ে লাগাতার কর্মসূচি পালন শুরু হবে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে। পাশাপাশি সরকার পতনের এক দফা আন্দোলনে যাওয়ারও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে কবে দাম বাড়াবে আর কবে আন্দোলন হবে তা নিয়ে জোটের নেতাদের মধ্যেই একধরনের সমালোচনা আর হাস্যরসের সৃষ্টি হয়েছে।
দলের নেতাকর্মীদের মধ্যেও এ নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। নেতাকর্মীরা বলছেন, “সরকার যদি গ্যাস ও বিদ্যুতের দাম না বাড়ায় তাহলে ২০ দলীয় জোট আন্দোলনে যাবে না। এটা যদি বিএনপির কৌশল হয়ে থাকে তাহলে সরকারও ক্ষমতায় থাকার জন্য দাম বাড়াবে না।”
দলের অপর স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া জানান, “আমি ওইসব বৈঠকে উপস্থিত ছিলাম না বলে আমি এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করতে পারব না।” যারা ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তাদের কাছে জিজ্ঞাসা করার কথাও বলেন তিনি।