সুজনের সভাপতি ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা এম হাফিজ উদ্দিন খান বলেছেন, “সরকারের অঙ্গীকার ছিল একদিনও অনির্বাচিত সরকারের হাতে ক্ষমতা থাকবে না। অথচ সিটি নির্বাচনসহ জেলা পরিষদ নির্বাচন এখনও দেয়নি। তবে জাতীয় সংসদে ৩০০ আসনে নির্বাচন হতে পারে। তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন কেন হবে না। আসলে সরকার না চাইলে কখনো নির্বাচন হওয়া সম্ভব না।”
বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাব ভিআইপি লাউঞ্জে সুশাসনের জন্য নাগরিক(সুজন) আয়োজিত ‘ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন চাই’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে বক্তব্য দেন সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল, নির্বাহী সদস্য বিচারপতি কাজী এবাদুল হক, সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার, সাবেক কমিশনার ফরিদ উদ্দিন প্রমুখ।
হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, “সিটি নির্বাচন না দেয়ার কারণে দেশে নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কোন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে যেন সিটি নির্বাচন বন্ধ করা না হয়। সরকার যদি না চাই তবে কখনো সিটি নির্বাচন সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, জাতীয় সংসদে নির্বাচন হতে পারে তাহলে ঢাকা সিটি করপোরেশন ও জেলা পরিষদ নির্বাচন দেয়াও সম্ভব। যদি সরকার চাই তাহলেই নির্বাচন হওয়া সম্ভব।”
ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, “বর্তমানে সুস্পষ্ঠভাবে বোঝা যাচ্ছে ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন রাজনৈতিক স্বার্থের কাছে জিম্মি হয়ে গেছে। তারা যেভাবে ইচ্ছা সেভাবেই নির্বাচন দিচ্ছে। এতে অন্য কারো মতামতের কোন সুযোগ রাখছে না।”
বদিউল আলম বলেন, “স্থানীয় পর্যায়ে অনির্বাচিত শাসকের দ্বারা শাসন পরিচালিত হওয়ার কারনে সংবিধান লঙ্ঘন হচ্ছে। সংবিধানের ৫৯ অনুচ্ছেদে স্থানীয় নির্বাচনের কথা উল্লেখ থাকলেও স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত কোন সরকার জেলা পরিষদ নির্বাচন দেয়নি।”
তিনি বলেন, “রাষ্ট্র কী উদ্দেশ্যে, কার স্বার্থে পরিচালিত হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে না। আসলে নাগরিকের স্বার্থে নাকি অন্য কোন ব্যক্তির স্বার্থে সেটা স্পষ্ঠ নয়।”
ড. আসিফ নজরুল বলেন, “৫ জানুয়ারির নির্বাচনের পূর্বে সরকার অন্যান্য সিটি নির্বাচন দিয়ে কোনটায় জিততে পারেনি। তাই ঢাকা সিটির নির্বাচন দিলে তারা কতটা জনবিচ্ছিন্ন তা আরো স্পষ্ঠ হয়ে যাবে। এই জন্য কোনভাবেই তারা এই নির্বাচন দেবে না।”
৫ জানুরির নির্বাচনের পর থেকে জনসাধারণের মধ্যে নির্বাচনভীতি কাজ করছে উল্লেখ করে ড. আসিফ বলেন, “জনগণ মনে করেছিল ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার একটা নির্বাচন খেলা করবে। সেটাই করেছে। এখন তারা নির্বাচন দিলেও যা, না দিলেও তা। তেমন কোন পরিবর্তন হবে না।”
তিনি বলেন, “সরকার জনগনের রায়ে বিশ্বাস করে না।তারা প্রশাসনের ক্ষমতাকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকাকেই বেছে নিয়েছে।যে কারণে ঢাকার কোথাও বিরোধী দলকে দাড়াতে দিচ্ছে না।যে কোন মূল্যে তাদের প্রতিহত করার চেষ্টা করছে।”
ঢাবির এই শিক্ষক বলেন, “সরকার যে ঢাকা সিটির নির্বাচন দিচ্ছেন না এটা সংবিধান বিরোধী ও মানবতা বিরোধী। কারণ সংবিধানে উল্লেখ আছে নাগরিকদের বাক স্বাধীনতা প্রকাশ করার অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে।যা আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে আমরা করে থাকি।কিন্তু বর্তমান সরকার সেই অধিকার থেকে জনগণকে বিরত রাখছে।”