নারায়ণগঞ্জ:নারায়ণগঞ্জ ইয়াবা ও মাদক বিক্রির টাকাসহ জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বরখাস্ত ও পলাতক এক সাবেক সহকারী উপপরিদর্শককে (এএসআই) গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। সদর উপজেলার সিদ্ধিরগঞ্জে মো. সালাউদ্দিনকে (৩৮)
এক সহযোগীসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১১। তাঁদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ১০ হাজার ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩৫০ টাকা, ডিবি পুলিশের একটি জ্যাকেট, পুলিশের আইডি কার্ড এবং তাঁর ব্যবহৃত সাদা রঙের প্রাইভেট কার জব্দ করেছে। আজ মঙ্গলবার ভোর পৌনে চারটার দিকে মৌচাক এলাকা থেকে র্যাব তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
আজ দুপুরে সিদ্ধিরগঞ্জের আদমজীনগর এলাকায় র্যাব–১১–এর সদর দপ্তরে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর আশিক বিল্লাহ্ এক প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সহকারী পরিচালক নাজমুল হাসান, মশিউর রহমান প্রমুখ।
গ্রেপ্তার ব্যক্তিরা হলেন ডিবি পুলিশের বরখাস্ত এএসআই সালাউদ্দিন এবং তাঁর গাড়িচালক রনি (৩২)।
সংবাদ সম্মেলনে মেজর আশিক বিল্লাহ জানান, টেকনাফ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবার চালান গ্রহণ করতে বরখাস্ত সালাউদ্দিন সিদ্ধিরগঞ্জের মৌচাক এলাকায় অবস্থান করছে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১১–এর একটি দল ভোর পৌনে চারটার দিকে সিদ্ধিরগঞ্জ মৌচাক বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে সাদা প্রাইভেট কারসহ পলাতক মাদক ব্যবসায়ী জেলা গোয়েন্দা পুলিশের বরখাস্ত সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) সালাউদ্দিন ও তাঁর গাড়ির চালক মো. রনিকে গ্রেপ্তার করে। এ সময় তাঁর গাড়ি তল্লাশি চালিয়ে ১০ হাজার ইয়াবা বড়ি, মাদক বিক্রির নগদ ২ লাখ ৮৩ হাজার ৩০০ টাকা, একটি পুলিশের আইডি কার্ড ও চারটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।
প্রাথমিক অনুসন্ধানে গ্রেপ্তার আসামি এএসআই সালাউদ্দিন স্বীকার করেন, নারায়ণগঞ্জ ডিবিতে থাকা অবস্থায় তাঁর সঙ্গে টেকনাফের কিছু মাদক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরপর টেকনাফ থেকে নিষিদ্ধ মাদক ইয়াবা আমদানি করে নারায়ণগঞ্জসহ ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ ও বিক্রি করতেন এ ছাড়া এএসআই সালাউদ্দিন আরও জানান, তিনি বিভিন্ন এলাকায় ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে বাসা ভাড়া নিতেন এবং সেই বাসা ব্যবহার করে তাঁর গাড়িচালক রনি ও অন্য সহযোগীদের মাধ্যমে ইয়াবা মজুত ও বিক্রি করতেন।
এর আগে গত ২৩ জুলাই র্যাব-১১–এর একটি অভিযান দল সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কদমতলী এলাকায় মাদকবিরোধী অভিযান চালিয়ে এএসআই সালাউদ্দিনের ভাড়া বাসা থেকে ৫ হাজার ৬০০ ইয়াবা বড়ি ও মাদক বিক্রির ৯ লাখ ৫ হাজার টাকা উদ্ধার করে। এ সময় সালাউদ্দিনের সহযোগী সুমনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। এ ব্যাপারে র্যাব বাদী হয়ে মামলা করে। ওই মামলার পর থেকে সালাউদ্দিন পলাতক ছিলেন। গ্রেপ্তার সুমনের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, র্যাব ওই দিনই সিদ্ধিরগঞ্জ থানার কদমতলী এলাকায় ফ্রেন্ডস টাওয়ার ও সদর থানার নগরখানপুর এলাকায় ডিবির বরখাস্ত এএসআই সালাউদ্দিনের দুটি ভাড়া বাসায় অভিযান চালিয়ে ৫ হাজার ৬২০টি ইয়াবা ও মাদক বিক্রির ৯ লাখ ৪০০ টাকা উদ্ধার করে। তাঁর বিরুদ্ধে আরও দুটি মাদকের মামলা রয়েছে। ডিবি পুলিশ থেকে বরখাস্ত হওয়ার পরও সালাউদ্দিন নিজেকে ডিবির এএসআই পরিচয় দিয়ে মাদক ব্যবসাসহ আইনবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছিল। তিনি জানান, এ ঘটনায় তার বিরুদ্ধে মাদক আইনে মামলাসহ আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলছে।
এদিকে মাদক ব্যবসার সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগে প্রায় আট মাস আগে জেলা গোয়েন্দা শাখা (ডিবি) থেকে বরখাস্ত হন এএসআই সালাউদ্দিন। এরপর থেকে সালাউদ্দিন পলাতক। পলাতক হলেও তিনি নারায়ণগঞ্জ ডিবি পুলিশের কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করে বেড়াতেন। স্থানীয় লোকজন তাঁকে সালাউদ্দিন স্যার ও ডিবি স্যার হিসেবে চিনত।