কোম্পানীগঞ্জ (নোয়াখালী) প্রতিনিধি: সরকারের ১০ বছরের অপশাসনের পূঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তিনি বলেছেন, পুলিশ আমাকে জানিয়েছে বাড়ি থেকে যেন বের না হই। এতে বোঝা যায় এখন রাষ্ট্র চালাচ্ছে পুলিশ। আমি বাড়ি আসার পর থেকে আমার বাড়ি থেকে ফেরার পথে বিএনপির বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের ২৯ জন নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। এদের মধ্যে ১১ জন সংখ্যালঘু রয়েছে। গতকাল দুপুর ১২টায় নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জে মানিকপুরস্থ তার নিজ বাড়িতে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মওদুদ আহমদ বলেন, সরকার গণতন্ত্রের কথা বললেও জনগণের মৌলিক অধিকার ও গণতন্ত্র হরণ করছে। সরকার দিশেহারা হয়ে কখন যে কী বলছে তারা নিজেরাও জানে না। আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবি করে আসছি দীর্ঘদিন থেকে। সেটি সহায়ক সরকার হোক আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার হোক। বিএনপির নেতাকর্মীদেরকে পুরনো ও নতুন মামলা সাজিয়ে আসামি করা হয়েছে। আমি এ গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায়।
মওদুদ আহমদ বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় আমার ক্ষমতার আমলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ বড় বড় কাজগুলো আমিই করেছি। এর মধ্যে মুছাপুর রেগুলেটর, উপজেলা ভবন, সাব-রেজিস্ট্রি অফিস ভবন, সহকারী কমিশনার ভূমি অফিস, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নতুন ভবন করে ৩০ শয্যা থেকে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে উন্নীত করা হয়। আমার প্রতিপক্ষের বন্ধুরা হয়তো বা এগুলো না জেনে বলছেন, আমি নাকি কিছুই করিনি। ওদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৯৮৬ সালে বসুরহাট হাইস্কুল, সরকারি মুজিব কলেজ, মাকসুদা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও কবিরহাট কলেজকে সরকারীকরণ করা হয়। আমরা সব সময় চেষ্টা করছি সহনশীলতার রাজনীতি করার।
আমার ষাট বছরের রাজনৈতিক জীবনে এরকম রাজনৈতিক পরিস্থিতি দেখিনি। আমরা রাজনীতি করি জনগণের জন্য কল্যাণের জন্য। ১৯৫৬ সালে ১৬ বছর বয়সে আমি কারাবরণ করেছিলাম। এমন কোনো আন্দোলন নেই যে আমি অংশগ্রহণ করিনি। আমি আওয়ামী লীগ করিনি। বঙ্গবন্ধুর আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার জন্য বিলেত থেকে আইনজীবী স্যার টমান্স উইলিয়ামকে এনেছিলাম মামলা পরিচালনা করার বিষয়ে। আগড়তলা ষড়যন্ত্র মামলা থেকে বঙ্গবন্ধু অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন। বেগম জিয়াকে নিয়ে সমালোচনা করা ছাড়া সরকারের রাতে ঘুম হয় না। তারা ভেবেছিল বেগম জিয়াকে যদি কারাগারে রাখা যায় তাহলে বিএনপি নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। যত অত্যাচার, অবিচার, নির্যাতন, নিপীড়ন, নিষ্পেশন বিএনপিকে করা হোক না কেন, বিএনপি আগের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের প্রধান দাবি হলো ৩টি। তাহলো বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। সংসদ ভেঙে দিতে হবে। সংসদ রেখে নির্বাচন হতে পারে না।
ব্যারিস্টার মওদুদ বলেন, এই অযোগ্য, অথর্ব, অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন কমিশন দিয়ে নির্বাচন হবে না। তারা ৫টি সিটি নির্বাচনে প্রমাণ করে দিয়েছে তাদের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন হবে না। তাদের পদত্যাগ করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে। দেশে ন্যূনতম গণতান্ত্রিক পরিবেশ নেই। গণতান্ত্রিক অধিকার নেই। এ সরকার পেশিবাদী সরকার, এ সরকার স্বৈরাচারী সরকার।
মওদুদ বলেন, বেগম জিয়ার মুক্তির ব্যাপারে সরকার আর কোনো আইনি হস্তক্ষেপ না করলে, এই মাসের মধ্যে বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। নিম্ন আদালতের ক্ষমতা চলে গেছে নির্বাহী বিভাগের কাছে। নিম্ন-আদালতের বিচারকরা সরকারের নিয়ন্ত্রণে। সেজন্য বেগম জিয়ার মুক্তি লাভে বিলম্ব হচ্ছে। যেদিন বেগম জিয়া মুক্তি পাবেন। সেদিন বাংলাদেশে গণজোয়ার সৃষ্টি হবে। সরকারের ১০ বছরের অপশাসনের পুঞ্জীভূত ক্ষোভের বিস্ফোরণ ঘটবে।
সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, বসুরহাট পৌরসভা যুবদলের সভাপতি শওকত হোসেন সগির, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের সভাপতি ফজলুল কবির ফয়সল প্রমুখ।