গুলিস্তান গোলাপশাহ মাজারের পাশের ফুটপাথ থেকে অজ্ঞান পার্টির চার সদস্যকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হলেন নাহিদ হাসান, বিপ্লব, আজিজুল ইসলাম ও ইউসুফ।
তাদের কাছ থেকে পুলিশ বেশকিছু চেতনানাশক নকটিন ট্যাবলেট উদ্ধার করে। ২২ জুলাই গোয়েন্দা পুলিশের এসআই সুশংকর মল্লিক বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৫৮। এক মাস না যেতেই নাহিদ হাসান ও বিপ্লব ১৪ ও ১৬ আগস্ট জামিন পান। তারা এখন মুক্ত। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের এক নম্বর গেটের সামনে থেকে ১ আগস্ট অজ্ঞান পর্টির ১০ সদস্যকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বেশকিছু চেতনানাশক ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় গোয়েন্দা পুলিশের উপ-পরিদর্শক অসিত দাস বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় মামলা করেন। মামলা নম্বর-৫।
এ মামলার আসামি মনির হোসেন, জামাল, আরিফ হোসেন, মিঠু, লিটন ও ফরিদ হোসেন ১৪ ও ১৬ আগস্ট জামিন পেয়েছেন। শুধু এরাই নন, কারাগারে বন্দী ভয়ঙ্কর অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা দলে দলে জামিনে বেরিয়ে যাচ্ছেন। ফলে আতঙ্ক বাড়ছে অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের নিয়ে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ঈদের আগেই এসব ভয়ঙ্কর অজ্ঞান পার্টি সক্রিয় হয়ে ওঠে। বিশেষ করে কোরবানি ঈদের মৌসুমে এদের সদস্য যেমন বাড়ে, তেমন আক্রান্তের সংখ্যাও বাড়ে আশঙ্কাজনকহারে। মূলত এদের টার্গেট থাকে গরু ব্যবসায়ী। প্রতিবার এই মৌসুমে অসংখ্য গরু ব্যবসায়ী তাদের খপ্পরে পড়ে সর্বস্ব খোয়াচ্ছেন। কখনো এরা প্রাণ দিচ্ছে ভয়ঙ্কর এই চক্রের খপ্পরে পড়ে। গত এক সপ্তাহে অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে দুই ডজন পথচারী শুধু রাজধানীতেই অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। খুইয়েছেন নগদ টাকা ও মূল্যবান সামগ্রী। আদালতসংশ্লিষ্টরা বলছেন, জামিনে যারা ছাড়া পাচ্ছেন, অবশ্যই আইনের মধ্যে থেকেই। পুলিশি তদন্তের দুর্বলতার সুযোগ নেয় আসামিপক্ষ। তখন জামিন দেওয়া ছাড়া বিকল্প কোনো পথ থাকে না।
তবে পুলিশ বলছে, অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের জামিন পাওয়া বিষয়টি আদালতের এখতিয়ার। পুলিশের কাজ তাদের গ্রেফতার করে আদালতে হাজির করা। মামলার তদন্ত করে প্রতিবেদন দেওয়া। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী সে কাজটি করে যাচ্ছে নিয়মিত। গত ২৪ ঘণ্টায় অজ্ঞান পার্টির ৫৭ সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অনুসন্ধানে জানা যায়, বিগত কয়েক দিনের মধ্যে এই ভয়ঙ্কর চক্রের বেশ কয়েকজন সদস্য জামিনে ছাড়া পেয়েছেন। এর মধ্যে শাহবাগ-১৬ (৮)১৮ নম্বর মামলার আসামি রুমা আক্তার বীথি ও জেসমিন, শাহবাগ-৭৬ (৭) ১৮ নম্বর মামলার আসামি জাহিদ মৃধা, মিলন মোল্লা, মনির পেদা ও লিটন খন্দকার, শাহবাগ-১০ (৭) ১৮ নম্বর মামলার আসামি দীপক চৌহান জামিন পেয়েছেন। গত সপ্তাহের দুই দিনে আদালত থেকে তারা জামিন পান। ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) মো. সাইফুজ্জামান হিরো, মহানগর হাকিম কাজী কামরুল ইসলাম, মহানগর হাকিম মো. ফহাদ বিন আমিন চৌধুরী ও মহানগর হাকিম সুব্রত ঘোষ শুভর আদালত থেকে তারা জামিন পান।
সূত্র জানায়, জামিন পাওয়ার পর শুনানির আদেশ শুনেই সঙ্গে সঙ্গে মোবাইল ফোনে অন্য সদস্যদের চাঙা রাখতে আদালত থেকেই জানিয়ে দেওয়া হয়। পরে তড়িঘড়ি করে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কারাগারে জামিননামা পাঠিয়ে মুক্ত করা হচ্ছে।
পুলিশসূত্র জানায়, জামিনে ছাড়া পেয়ে ওই আসামিরা কী করছেন সে বিষয়ে খবর নেই তাদের কাছে। কারণ এসব ভাসমান আসামি ভাড়া বাসা পরিবর্তন করে ফেলেন। তাই তাদের খুঁজে পাওয়া ও তদারকি করা খুবই কষ্টকর। তবে নিয়মিত অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের গ্রেফতার করা হচ্ছে, তবু কমছে না। কারণ, কারাগারে যাওয়ার কিছুদিন পরই দলের লোক তাদের মুক্ত করে আনেন। হাসপাতালসূত্র জানায়, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে প্রায় প্রতিদিনই অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ছে সাধারণ মানুষ। তারা ভর্তি হচ্ছে হাসপাতালে। ভয়ঙ্কর এই চক্রের হাত থেকে সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরাও রেহাই পায় না। অজ্ঞান পার্টির হাতে মানুষ শুধু সর্বস্বান্তই হচ্ছে না; চেতনানাশক ওষুধে সংজ্ঞা হারানোর পর তাদের চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ও স্বাভাবিক হতেও মাসের পর মাস লেগে যাচ্ছে। এমনকি অজ্ঞান পার্টির কবলে পড়ে অনেকে চিরতরে স্বাস্থ্যঝুঁকিও বহন করছেন। চিকিৎসকরা বলছেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা যেসব ওষুধ ব্যবহার করছে তা খুবই বিপজ্জনক। এসব ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় মানুষ মারা যেতে পারে। আক্রান্ত অনেকেরই স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসাও দুষ্কর হয়ে উঠতে পারে।
গতকাল ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন বলেন, অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা বিভিন্ন উৎসব সামনে রেখে বেপরোয়াভাবে তাদের কার্যক্রম চালায়। বিভিন্ন বাসযাত্রীকে অচেতন করে তাদের অর্থ হাতিয়ে নেয়। এই অজ্ঞান পার্টির তৎপরতা ঈদের সময় আরও বেড়ে যায়। রাজধানী থেকে আটক অজ্ঞান পার্টির ৫৭ সদস্যকে জেরা করে জানা যায়, প্রথমে তারা কোনো ব্যক্তিকে টার্গেট করে সখ্য স্থাপন করেন। এরপর তাদের অন্য সদস্যরা টার্গেট ব্যক্তি ও তাদের সদস্যকে ট্যাবলেট মেশানো খাবার খেতে ডাকেন। এতে টার্গেট ব্যক্তি খেতে রাজি হলে তাকে ট্যাবলেট মেশানো খাবার খাওয়ান এবং নিজেরা সাধারণ খাবার খান। খাবার খাওয়ার পর টার্গেট ব্যক্তি অচেতন হলে তারা তার মূল্যবান জিনিসপত্র নিয়ে দ্রুত চলে যান। এ ক্ষেত্রে অজ্ঞান পার্টির সদস্যরা খাবারে চা, কফি, জুস, ডাবের পানি, পান, ক্রিম জাতীয় বিস্কিট ইত্যাদি ব্যবহার করেন।