তুচ্ছ ঘটনার জেরে পটুয়াখালীর কুয়াকাটায় ৬ষ্ঠ শ্রেণির এক স্কুলছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যার ঘটনায় তার সৎ মা সালমা বেগমকে গ্রেফতার করেছে মহিপুর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার পাশের বাড়ির কাওসার ঘরামীকে (২৪) প্রথম গ্রেফতার করে পুলিশ।
শুক্রবার বিকেলে গ্রেফতারকৃত আসামিদের কলাপাড়া সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫ দিনের রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা। আদালত কোন আদেশ বা শুনানির জন্য দিন ধার্য করেননি।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই মো. এনায়েত হোসেন জানান, ঘটনার আসল রহস্য বের করার জন্য জিজ্ঞাসাবাদ করতে গ্রেফতারকৃত কাওসার ও নিহত ইভার সৎ মা সালমা বেগমকে গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে হাজির করে ৫ দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। নিহত ইভার সৎ মা ঘটনার সাথে জড়িত কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তদন্তকারী কর্মকর্তা বলেন, ঘটনার স্থান একই ঘরে এবং যে ঘটনা ঘটেছে তা অন্তত আধা ঘণ্টাব্যাপী ঘটতে পারে। তাই তার (সালমা বেগম) ভূমিকা রহস্যজনক বলে তাকে গ্রেফতার করে রিমান্ড চাওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ পাওয়ার পর পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
মহিপুর থানার ওসি মো. মিজানুর রহমান জানান, ঘটনার সময় ইভার সৎ মা সালমা বেগম একই ঘরে থাকায় তার ভূমিকারহস্য জনক বলে পুলিশের কাছে মনে হয়েছে। তার খুব কাছাকাছি ঘটনা ঘটেছে তাই ঘটনার দায়মুক্তি এড়াতে পারেন না সালমা। তাই আসল ঘটনা বের করতে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
তবে এ ঘটনায় ৩-৪ জন জড়িত বলে ধারনা করা হচ্ছে। তাদেরকে গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
স্ত্রী সালমা বেগমকে গ্রেফতার করা হয়েছে জানতে চাইলে মামলার বাদী ইসমাইল ঘরামী বলেন, আমার মনে হয় না আমার স্ত্রী সালমা এ ঘটনায় জড়িত। কারণ ইভার যখন দেড় বছর বয়স তখন ওর মায়ের মৃত্যু হয়। দ্বিতীয় বিয়ে করার পর থেকেই সালমা ওর আপন মায়ের মতই লালন পালন করে আসছে ইভাকে। একদিনের জন্যও তাদের মধ্যে ঝগড়া-ঝাটি আমি লক্ষ্য করিনি। এমনকি সালমার বাবার বাড়িকেই ইভা নিজের মামার বাড়ি বলে মনে করেছে। তবে ঘটনা যারা ঘটিয়েছে সু-পরিকল্পিতভাবেই ঘটিয়েছে বলে আমি মনে করি। পুলিশ বার বারই আমাকে বলছে তোর স্ত্রী এ ঘটনা জানে। পুলিশের কাছে আমি একটি কথাই বলেছি, স্যার এ ঘটনায় যেন কোন নির্দোশ ব্যক্তি হয়রানি না হয়। তাই এ ঘটনায় যদি আমার স্বজনরাও কেউ জড়িত হয় তাকেও ছাড় দেবেন না।
প্রসঙ্গত, গত মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সংলগ্ন মহিপুর ইউনিয়নের সেরাজপুর গ্রামে সুরভী আক্তার ইভাকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। মহিপুর কো-অপারেটিভ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৬ষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রী ছিল ইভা। ঘটনার সময় বাবা ইসমাইল ঘরামী বাড়িতে ছিলেন না। পরে মা সালমা বেগমের ডাক চিৎকারে এলাকার লোকজন এসে ইভাকে রক্তাক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে কুয়াকাটা হাসাপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। বুধবার বিকেলে এ ঘটনায় বাবা বাদী হয়ে অজ্ঞাতনামা ৪-৫ জনকে আসামি করে মহিপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা নং-১৪।