তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় আলোকচিত্রী শহিদুল আলমকে সাত দিনের জন্য রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর হাকিম মোহাম্মাদ আছাদুজ্জামান নূর এই আদেশ দেন।
আসামি শহিদুল আলমকে বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে আদালতে হাজির করে পুলিশ। রিমান্ড আবেদনে বলা হয়, আসামি শহিদুল আলম তাঁর ফেসবুক টাইমলাইনের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গণমাধ্যমে কল্পনাপ্রসূত অপপ্রচার চালাচ্ছেন। এর মাধ্যমে জনসাধারণের বিভিন্ন শ্রেণিকে শ্রুতিনির্ভর (যাচাই-বাছাই ছাড়া কেবল শোনা কথা) মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে উসকানি দিয়েছেন, যা রাষ্ট্রের জন্য ক্ষতিকর। সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ ও অকার্যকররূপে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উপস্থাপন করেছেন।
রিমান্ড আবেদনে আরও বলা হয়, আসামি শহিদুল আলম আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিসহ জনমনে ভীতি ছড়িয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র এবং তা বাস্তবায়নের জন্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে প্রচার করেছেন। তবে শহিদুল আলমের পক্ষে আইনজীবী সারা হোসেন ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া রিমান্ড বাতিল চেয়ে জামিন আবেদন করেন। এই দুই আইনজীবী আদালতকে বলেন, শহিদুল আলমকে রিমান্ডে নেওয়ার কোনো যৌক্তিকতা নেই। তাঁরা আদালতকে বলেন, শহিদুল আলমকে ধরে নিয়ে গিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে।
এ সময় আইনজীবী সারা হোসেন শহিদুল আলমের কাছ থেকে তাঁর বক্তব্য শোনার জন্য আদালতের কাছে আবেদন করেন। আদালতের অনুমতি নিয়ে শহিদুল আলম কীভাবে গ্রেপ্তার হন, কীভাবে তাঁকে নির্যাতন করা হয় সেই বর্ণনা তুলে ধরেন। আদালতের কাছে শহিদুল আলম দাবি করেন, গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার পরপরই তাঁকে গাড়িতে তোলা হয়। তখন তাঁর চোখ বেঁধে ফেলা হয়। হাতে পরানো হয় হ্যান্ডকাপ। শহিদুল আলম আদালতকে বলেন, ‘আমাকে দুই ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসা করা হয়। আমাকে সারা রাত হ্যান্ডকাপ পরিয়ে রাখা হয়।’
শহিদুল আলমকে খালি পায়ে আদালতে তোলা হয়। আইনজীবী সারা হোসেন ও জ্যোতির্ময় বড়ুয়া আদালতকে বলেন, শহিদুল আলম একজন খ্যাতিমান আলোকচিত্রী। এ সময় শহিদুল আলমের আইনজীবীরা উচ্চ আদালতের নির্দেশনা পড়ে শুনিয়ে আদালতকে বলেন, পুলিশ এভাবে কাউকে নির্যাতন করতে পারে না।
সারা হোসেন আদালতকে বলেন, শহিদুল আলমকে যাঁরা গ্রেপ্তার করেছেন তাঁরা তাঁদের পরিচয় দেননি। ১২ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যাওয়ার কথা জানাতে হয়, তা জানানো হয়নি। সারা হোসেন তখন আদালতকে এ ঘটনা তদন্ত করার দাবি তুলে ধরেন আদালতের কাছে।
অবশ্য আদালতের কাছে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির পরিদর্শক আরমান আলী দাবি করেন, আসামি শহিদুল আলম কল্পনাপ্রসূত কথা বলতে পছন্দ করেন। তাঁর সহযোগী আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তাঁকে রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা প্রয়োজন। আদালত তখন এই পুলিশ কর্মকর্তার কাছে জানতে চান, ‘আসামি শহিদুলের ফেসবুকের আকসেস নিতে পেরেছেন কি না?’ তখন তিনি জানান, আসামির মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়েছে। কিন্ত ফোনের পাসওয়ার্ড জানা যায়নি।
তখন আইনজীবী সারা হোসেন আদালতকে বলেন, কেন পুলিশ শহিদুল আলমের ১০ দিনের রিমান্ড চাইছে? সবই তো পুলিশ পেয়ে গেছে। উভয় পক্ষের কথা শুনে শহিদুল আলমের সাত দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এজলাস ত্যাগ করেন বিচারক।
পরে শহিদুল আলমের আইনজীবী সারা হোসেন সাংবাদিকদের কাছে বলেন, ‘আগামীকাল এই রিমান্ড আদেশ স্থগিত চেয়ে হাইকোর্ট আবেদন করা হবে।’