ঢাকা: নৌমন্ত্রী শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং নিহত দুই শিক্ষার্থীর ঘাতক বাসচালকের ফাঁসিসহ ৯ দফা দাবিতে গড়ে ওঠা ছাত্র আন্দোলনকে ঘিরে রাজধানীর ৯ থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় হাজার হাজার অজ্ঞাত ব্যক্তিকে আসামি করা হয়েছে। তবে মোট আসামির সংখ্যা নিশ্চিত করতে পারলেও ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) জানিয়েছে- এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
গ্রেফতার আসামিদের ভাঙচুরসহ বিভিন্ন অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ফটোগ্রাফার শহীদুল আলম ও অভিনেত্রী কাজী নওশাবা আহমেদকে গ্রেফতার দেখানো হয়েছে সামাজিকমাধ্যম ফেসবুকে বক্তব্য দেয়ার অভিযোগে।
এদিকে আট দিনের টানা আন্দোলনে পুলিশ ও ছাত্রলীগসহ সরকারদলীয় নেতাকর্মীদের হামলায় তিন শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। এর মধ্যে গত দুদিনে শুধু সায়েন্স ল্যাবরেটরি ও ঝিগাতলাতেই দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন।
এ ছাড়া গত কয়েক দিনে আন্দোলনের খবর সংগ্রহকালে ধানমণ্ডির এ এলাকাসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে অন্তত ১৫ সাংবাদিক হামলার শিকার হয়েছেন। সাংবাদিকদের ক্যামেরা ভেঙে ফেলা ও মোবাইল ফোন কেড়ে নেয়ার ঘটনা ঘটেছে।
ডিএমপি সূত্রে জানা গেছে, গত কয়েক দিনের ঘটনায় রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায় ২৮টি মামলা হয়েছে।
মামলাগুলোর মধ্যে পুলিশের মিরপুর ও উত্তরা বিভাগে ৩টি করে, ওয়ারী বিভাগে ২টি, রমনা ও মতিঝিল বিভাগে ৬টি করে মামলা হয়।
এ ছাড়া শাহবাগ, তেজগাঁও, লালবাগ ও গুলশান বিভাগে একটি করে মামলা হয়েছে।
ডিএমপির উপকমিশনার (অপরাধ) মুনতাসিরুল ইসলাম এ তথ্য নিশ্চিত করেন।
জানা গেছে, শনিবার ধানমণ্ডি থানায় করা একটি মামলায় ২৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে। পরে রোববার এ থানায় আরও দুটি মামলা করা হয়েছে, যাতে ৭৫০ জনকে আসামি করা হয়েছে।
উত্তরা থানায় তিনটি মামলা করা হলেও কতজনকে আসামি করা হয়েছে, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। শাহবাগ থানায় একটি মামলার পাশাপাশি রোববার ছয়জনকে আটক করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, গত ২৯ জুলাই কুর্মিটোলায় জাবালে নূর পরিবহনের বাসচাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হন। এ ছাড়া আহত হন বেশ কয়েকজন। নিহত শিক্ষার্থীরা হল শহীদ রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের একাদশ শ্রেণির বিজ্ঞানবিভাগের ছাত্রী দিয়া খানম মীম ও দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র আবদুল করিম রাজীব।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিহতদের প্রত্যেক পরিবারকে এরই মধ্যে ২০ লাখ টাকার অনুদান দিয়েছেন।
এ ঘটনার প্রতিবাদে রাস্তায় বিক্ষোভে ফেটে পড়েন শিক্ষার্থীরা। তারা নৌপরিবহনমন্ত্রী ও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনের সভাপতি শাজাহান খানের পদত্যাগ এবং ৯ দফা দাবিতে টানা আট দিন ধরে আন্দোলন করছেন।
এ আন্দোলনের জের ধরে ঢাকার অভ্যন্তরীণ সড়কগুলোয় প্রথমে বাস চলাচল সীমিত হয়ে যায়। পরে বাস চলাচল একেবারেই বন্ধ করে দেন পরিবহন মালিক ও শ্রমিকরা। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন সাধারণ মানুষ।
সর্বশেষ শনি ও রোববার ধানমণ্ডিসহ রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতাকর্মীদের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ হয়। এর মধ্য দিয়ে আন্দোলন স্তিমিত হয়ে যায়। এর পর আজ সোমবার সকাল থেকে গণপরিবহন চলাচল শুরু করে।