সড়ক নিরাপত্তা আরও জোরদারে আগামীকাল সোমবার এ সম্পর্কিত নতুন আইন মন্ত্রিসভায় উঠছে। সোমবার সকাল ১০টায় সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে।
শিক্ষার্থীদের নিরাপদ সড়ক বাস্তবায়নের দাবিতে আন্দোলনের মধ্যেই আইনটি মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য তোলা হচ্ছে। এরপর এটি সংসদে তোলা হবে।
এর আগে গত বছরের মার্চে ‘সড়ক পরিবহন আইন-২০১৮’ এর খসড়ার নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়।
গত ২৯ জুলাই রাজধানীর বিমানবন্দর সড়কের জাবালে নূর পরিবহনের বাস চাপায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হন। পরের দিন থেকে রাজধানীর সড়কে অবস্থান করে বেপরোয়া বাস চালকের ফাঁসি, রাস্তায় ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল এবং ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালানো বন্ধসহ ৯ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলনে নামে শিক্ষার্থীরা। রবিবারও অব্যাহত ছিল শিক্ষার্থীদের সেই আন্দোলন। এ নিয়ে আন্দোলন অষ্টম দিনে গড়িয়েছে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম জানান, ইনশাল্লাহ আগামীকাল সোমবার আইনটি মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হবে।
সড়কে নিরাপত্তা নিয়ে শিক্ষার্থীদের ৯ দফা আন্দোলনের মুখে এর আগে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের জানান, তাদের দাবি পূরণ করা হচ্ছে।
প্রস্তাবিত সড়ক পরিবহন আইন বাস্তবায়ন হলে শিক্ষার্থীদের অনেক দাবিই পূরণ হয়ে যাবে।
উল্লেখযোগ্য কী আছে নতুন আইনে
গত বছরের মার্চ মাসে সড়ক পরিবহন আইনটির খসড়া অনুমোদন করেছিল মন্ত্রিসভা। এরপর সেটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয় যাচাই-বাছাইয়ের জন্য। দীর্ঘ ১৪ মাস পরে ছাত্র বিক্ষোভের মধ্যে আইন মন্ত্রণালয় সেটির ভেটিং শেষ হয়।
মন্ত্রিসভায় যখন আইনটির খসড়া অনুমোদন করা হয়েছিল তখন মন্ত্রিপরিষদ সচিব সাংবাদিকদের যে বিষয়গুলো জানিয়েছিলেন তার কয়েকটি নিচে তুলে ধরা হলো।
১. প্রস্তাবিত আইন অনুযায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্সে পেতে হলে অষ্টম শ্রেণী পাশ করতে হবে। আগে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও প্রয়োজন ছিল না।
২. চালকের সহকারীকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষাগত যোগ্যতা থাকতে হবে।
৩. গাড়ি চালানোর জন্য বয়স অন্তত ১৮ বছর হতে হবে। অবশ্য একই বিধান আগেও ছিল।
৪. গাড়ি চালানোর সময় মোবাইল ফোনে কথা বললে এক মাসের কারাদণ্ড এবং ২৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে।
৪. চালকদের পয়েন্ট কাটার বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত আইনে। একজন চালক প্রতিবার আইন অমান্য করলে তার পয়েন্ট বিয়োগ হবে এবং এক পর্যায়ে লাইসেন্স বাতিল হবে।
৫. ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং পঞ্চাশ হাজার টাকা পর্যন্ত জরিমানার বিধান রয়েছে।
৬. গাড়ি চালিয়ে উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে হত্যা করলে ৩০২ অনুযায়ী মৃত্যুদণ্ডের বিধান আছে প্রস্তাবিত আইনে।
৭. বেপরোয়াভাবে গাড়ি চালানোর কারণে কিংবা প্রতিযোগিতা করে গাড়ি চালানোর কারণে মৃত্যু ঘটালে তিন বছর কারাদণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে।
৮. নতুন আইনে সড়কে পাল্লা দিয়ে গাড়ি চালানো বা রেস করার ফলে দুর্ঘটনা ঘটলে তিন বছরের কারাদণ্ড অথবা ২৫ লাখ টাকা জরিমানারও বিধান রাখা হয়েছে।
৯. আইনে লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে ৬ মাসের কারাদণ্ড বা ৫০ হাজার টাকার জরিমানা হতে পারে এবং এক্ষেত্রে পরোয়ানা ছাড়াই চালককে গ্রেপ্তারও করা যাবে।
১০. লাইসেন্সবিহীন গাড়ি চালানোসহ নানা অপরাধে এই আইনে শাস্তির বিধান থাকলেও, দুর্ঘটনার কারণে মৃত্যু বা ফৌজদারি অপরাধের অভিযোগ থাকলে তার বিচার ফৌজদারি আইনেই হবে।