ঢাকা: ঢাকায় দুই কলেজ শিক্ষার্থী নিহত হওয়াকে কেন্দ্র করে টানা অষ্টম দিনের মতো গণপরিবহন বন্ধ রয়েছে। এতে দেশজুড়ে দুর্ভোগে পড়েছেন মানুষ। চরম দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন রাজধানীতে অফিসগামীরা।
আজ রোববার সকাল থেকেই রাজধানীর সড়কগুলো গণপরিবহন শূন্য। হাজার হাজার কর্মজীবী মানুষ সড়কে দাড়িয়ে তীর্থের কাকের মতো অপেক্ষা করছেন গণপরিবহনের জন্য। দীর্ঘ অপেক্ষার পরও মিলছে না কাঙ্খিত যানবাহন। চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদেরকে।
বিমানবন্দর সড়কে সকাল ৮টা থেকে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন ফার্মগেটগামী যাত্রী রাসেল সিকদার। সকাল সাড়ে ৯টায় তার অফিস সময় হলেও ঘড়িতে বাজে ৯টা। নির্দিষ্ট সময়ে গন্তব্যে পৌছতে পারবেন কিনা এ নিয়ে ভারি চিন্তিত তিনি। রাসেল সিকদার বলেন, সড়কে ব্যক্তিগত গাড়ি ছাড়া অন্য কোনো পরিবহন নেই। ভোর থেকেই হাজার হাজার অফিসগামী যাত্রী এই ভিআইপি সড়কে অপেক্ষা করলেও দেখা মিলছে না কোনো ধরনের গণপরিবহনের।
হাউজ বিল্ডিং থেকে বিমানন্দর মোড়, খিলক্ষেত, বনানী ও মহাখালীর বিভিন্ন পয়েন্টে দেখা গেছে, হাজার হাজার অফিসগামী যাত্রী বাসের জন্য বসে দাড়িয়ে অপেক্ষা করছেন বাসের জন্য। বাস না পেয়ে সিএনজি ও মটর সাইকেলের দ্বারস্থ হচ্ছেন তারা। তবে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও মিলছে না এসব যানবাহন। কারণ, ইন্টারনেট বিভ্রাট থাকায় ওবার বা পাঠাও অ্যাপস থেকে কোন বাইক পাওয়া যাচ্ছে না।
মহাখালীতে দীর্ঘ সময় ধরে বাসের জন্য অপেক্ষা করছেন রাশেদা খান। তিনি বলেন, সড়কে বাস নেই। সিএনজিও অতিরিক্ত ভাড়া হাঁকছে।
এইচ এম ফারুক হোসেন ছুটছেন মতিঝিল থেকে মোহাম্মদপুরের অফিসে। রিকশা-ভ্যানে অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও স্বস্তি নেই। নাকাল হয়েই তিনি গত কদিন অফিস করছেন। যেখানে বিশ টাকা ভাড়ায় বাসে যাতায়াত করেন সেখানে তার খরচ হচ্ছে এখন দুই থেকে তিনশত টাকা।
একই অবস্থা ফার্মগেট ও কারওয়ানবাজার মোড়ের। সেখানেও দেখা গেছে হাজার অফিসগামী যাত্রীরা বাসের অপেক্ষায়। গণপরিবহন কয়েকদিন ধরে বন্ধ থাকলেও এভাবে কেন অপেক্ষা বাসের জন্য। উত্তরে অনেক যাত্রী জানান, গণপরিবহন যে বন্ধ থাকবে তা তো জানানো হয়নি। প্রতিদিন সকালে নির্দিষ্ট সময়ে অফিসে যেতে হয়। এভাবে বাস বন্ধ রাখার কোনো কারণ খুজে পাচ্ছেন না বলে যাত্রীরা অভিযোগ করছেন।
খোঁজ নিয়ে দেখা যায়, অন্যান্য দিনের মতো মহাখালী, সায়েদাবাদ, গাবতলী বাস টার্মিনাল থেকে রাতেও কোনো আন্ত:নগর ও দূরপাল্লার বাস ঢাকার বাইরে চলাচল করেনি। টার্মিনালগুলোতে গাদাগাদি করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে সব ধরনের বাস।
ছাত্রবিক্ষোভের পর থেকেই অঘোষিতভাবে গণপরিবহন শূন্য হতে থাকে রাজধানী। দেশের প্রায় সব জেলার বাস গতদিনের মতোই বন্ধ রয়েছে। নিরাপত্তাহীনতার কারণ দেখিয়ে গত শুক্রবার রাজশাহী থেকে সব আন্তঃজেলা ও দূরপাল্লার বাস চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। তবে সন্ধ্যা থেকে নৈশকালীন বাসগুলো চলছিল। রোববার থেকে রাতেও বাস চলাচল বন্ধের সিদ্ধান্ত হয়েছে। ফলে রাজশাহী থেকে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২৯ জুলাই রোববার দুপুরে কালশি ফ্লাইওভার থেকে নামার সময় মুখে জাবালে নূরের বাসের চাকায় পিষ্ট হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যায় রমিজ উদ্দিন কলেজের দুই শিক্ষার্থী। এ ছাড়া আহত হয় আরও ১৩ জন শিক্ষার্থী। এরপর থেকেই নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনে নামেন কলেজের শিক্ষার্থীরা।