রাজশাহী: মামলা, গ্রেপ্তারের বেড়াজালে অনেকটা নাজেহাল রাজশাহীর বিএনপি। তফসিল ঘোষণার পর থেকে গ্রেপ্তারের মাত্রা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, তাদের পক্ষে যেসব নেতা-কর্মী মাঠে কাজ করছেন পুলিশ টার্গেট নিয়ে তাদেরকেই গ্রেপ্তার করছে। তফসিল ঘোষণার পরে কমপক্ষে দেড় শতাধিক নেতাকর্মীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অপর দিকে জামায়াতের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে তাদেরও ৩০ জনের বেশি নেতা বর্তমানে জেলে আছেন। নির্বাচনী কার্যক্রমে যাতে অংশ নিতে না পারেন সেজন্যই তাদের আটকে রাখা হয়েছে।
জামায়াত বিএনপি মেয়রের
পক্ষে প্রকাশ্যে কাজ না করলেও তাদের ১৪ জন পুরুষ এবং ২ মহিলা কাউন্সিলরের জন্য মাঠে সরব। যেসব ওয়ার্ডে জামায়াত তাদের প্রার্থী দিয়েছে সেই সব ওয়ার্ড জামায়াতের সভাপতি সেক্রেটারিসহ গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের ইতিমধ্যেই পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। মামলায় ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট সহ বিএনপি নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করে রাজশাহী, কাঁটাখালী, পুঠিয়া, নাটোর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, গোদাগাড়ি, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলার জেল হাজতে পাঠানো হয়েছে।
বিএনপি প্রার্থী মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল বলেন, নির্বাচনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ ততই ভোটের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ছে। ভোটের দৌড়ে পিছিয়ে পড়ে থেকে নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার জন্য সরকারদলীয় প্রার্থী মরণ কামড় দেয়ার অপেক্ষায় রয়েছে। ভোট জালিয়াতী, কারচুপি ও জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টির জন্য ইতিমধ্যে সরকারদলীয় প্রার্থী অন্যান্য জেলা থেকে ৪০-৪৫ হাজার সন্ত্রাসী ভাড়া করে রাজশাহীতে রেখেছে। বুলবুল আরো বলেন, এদের কাজে লাগিয়ে জোর করে রায় নিজের পক্ষে নেয়ার স্বপ্নে বিভোর সরকার দলীয় প্রার্থী। কিন্তু এই স্বপ্ন কোনোদিন বিএনপি ও ২০ দলীয় জোট করতে দেবে না। যত বড় সন্ত্রাসীই হোক না কেন রাজশাহীর মাটিতে কোনোরকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাইলে সমুচিত জবাব দেয়া হবে বলে হুঁশিয়ারি দেন বুলবুল।
তিনি বলেন, রাজশাহী কারো নিকট লিজ বা বিক্রি করে দেয়া হয়নি। রাজশাহী কারো পৈত্রিক সম্পত্তিও নয়। এটা সকল জনগণের শহর। রাজশাহী শান্তির শহর। এখানে কোনো ধরনের অশান্তি সৃষ্টি করতে কাউকে দেয়া হবে না। তিনি বলেন, এ পর্যন্ত কোনো মামলা ও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা ছাড়াই ১৫০ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেপ্তার করে সিটির বাহিরের থানায় বিভিন্ন ধরনের মামলা দিয়ে আটক করেছে পুলিশ। এর মধ্যে ৩০-৩৫ জন পোলিং এজেন্ট রয়েছে। প্রতিদিন নেতাকর্মীদের বাড়িতে রাতের অন্ধকারে হামলা দিয়ে গ্রেপ্তার করছে এবং বাড়িতে তাদের না পেলে বাড়ির অন্য সদস্যদের হয়রানি ও অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে পুলিশ।
তিনি বলেন, রাজশাহীতে সরকারদলীয় প্রার্থীর নির্দেশে ছাত্রলীগ, যুবলীগ ও তাদের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। তারা বিএনপির গণসংযোগ ও পাড়া মহল্লায় নির্বাচনী প্রচারণায় বাধা দিচ্ছে। শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন এবং নারী কর্মীদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করছে। এনিয়ে রাজশাহী নির্বাচন কমিশনে প্রতিনিয়ত অভিযোগ করলেও তারা নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এ ছাড়াও বিএনপির নির্বাচনী অফিস ভাঙচুর অব্যাহত রয়েছে। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি আরো বলেন এই নির্বাচন গণতন্ত্র ও বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির নির্বাচন। এই নির্বাচন জনগণের ভাত ও ভোটের নির্বাচন। এই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে জয় লাভ করে পুনরায় সিটি করপোরেশনে বসে নগরবাসীর উন্নয়ন করবেন বলে দৃঢ় প্রত্যয় করেন। নগরবাসী সেবা অব্যাহত রাখতে জনগণের নিকট তিনি পুনরায় দোয়া ও ধানের শীষে ভোট প্রার্থনা করেন।
বিএনপির পক্ষ থেকে একটি তালিকা গণমাধ্যকর্মীদের দেয়া হয়েছে। সেখানে বিএনপির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গ্রেপ্তারকৃত নেতাদের রাজশাহী মহানগরীর বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হলেও পরে তাদের রাজশাহীর বিভিন্ন থানা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিএনপি বলছে যেসব মামলায় তাদের গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে তার সবই মিথ্যা। মূলত নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে দূরে রাখতেই তাদের এই গ্রেপ্তার আয়োজন। মামলায় ধানের শীষ প্রতীকের পোলিং এজেন্ট সহ বিএনপি নেতা ও কর্মীদের গ্রেপ্তার করে রাজশাহী, কাঁটাখালী, পুঠিয়া, নাটোর, চাঁপাই নবাবগঞ্জ, গোদাগাড়ি, পাবনাসহ বিভিন্ন জেলার জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।
সোলাইমান আলী এবং সাইফুল ইসলাম সাফী, সাবদুল আলী সাবদুল, টিপু সুলতান, মামুনুর রশিদ মামুন, হাসিব, ডোমন, মারুফ হোসেন, সাইফুল ইসলামকে পূর্বের মামলায় নাটোরের বিভিন্ন থানা থেকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। বোরহান উদ্দীন হিটন, মো. আবু, মো. ফাহিম, মোবারক, মাজদার, টেনি, জিল্লু, ফরহাদ, ভুগোল, সৈকত, শফিকুল ইসলাম, জিসান, জব্বার, শাওন, মনু, ডামন এবং মেহেরুল ইসলাম শের আলীকে বোয়ালিয়া মডেল থানা, আসাদুল হক, দেলোয়ার হোসেন, আবিদ হাসান আসকান, রিপন রেজা, মাসুদ রানা, একরামুল হোসেন, মো. আবদুল লতিফ, আবদুল কাসেম, শামিম উদ্দীন, নাজমুল ইসলাম শিশির, মাইনুল হক হারু, মজিবর রহমান, লুতফর রহমান, হাফিজ, জয়নাল আবেদিন, শহিদুল ইসলাম, আবদুল জলিল মোল্লা, সোবহান মোল্লা, আবদুল মালেক, বাবুল হোসেন, মুজিবুর রহমান, জামিল উদ্দীন, জাহাঙ্গীর আলম বাবলুকে পুঠিয়া থানা, নুরুল ইসলাম নুরু, আমিনুল ইসলাম, জহুরুল ইসলাম, মাইনুল রনি, সাইরুর, মামুন, মোশারফ, আসলাম সাহকে কাশিয়াডাঙ্গা থানা, নুরুল ইসলাম, সাজ্জাদুল হক, দিলদার আলী জনি, আমিনুল ইসলাম, গোলাম নবী গোলাপ, হাফিজুল ইসলাম আপেলকে রাজপাড়া থানায় আটক দেখানো হয়েছে।
বিএনপি বলছে এসব নেতাকর্মী নির্বাচনের মাঠে সরব ছিল। তাদের সিটি এলাকা থেকেই গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। পরে ডিবির জেলা কার্যালয় সেখান থেকে বিভিন্ন জেলা এবং থানায় তাদের পাঠিয়ে গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছে।
রাজশাহী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট শফিকুল হক মিলন বলেন, নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর তাদের নেতাকর্মীদের নামে নশকতা মামলাসহ বিভিন্ন ধরনের সাতটি মামলা দিয়েছে। তারপরও ধানের শীষের জোয়ার ঠেকাতে পারছে না আওয়ামী লীগ। ফলে আওয়ামী লীগ আরো মরিয়া হয়ে উঠেছে। তিনি আরো বলেন, এসব বিষয় নিয়ে নির্বাচন কমিশনের বিএনপির পক্ষ থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মোট ২৯টি অভিযোগ দেয়া হয়েছে। কমিশন সেই অভিযোগগুলো আমলে নিচ্ছে না বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এদিকে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মুখপাত্র সিনিয়র সহকারী কমিশনার ইফতেখায়ের আলম বলেছেন, নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবেই অনেকেই গ্রেপ্তার হচ্ছে। নির্বাচন উপলক্ষে তারা কোনো গ্রেপ্তার করছেন না। পূর্বের মামলার আসামিদেরকেই কেবল গ্রেপ্তার করা হচ্ছে।