মতিউর রহমান চৌধুরী: লিখতে মন চায়। আবার চায় না। কেন চায় না, সংবাদ মাধ্যমের পাঠককূলকে খোলাসা করে বলার প্রয়োজন নেই। তারা জানেন এবং বোঝেন। তারপরও কথা থেকে যায়? সংবাদ মাধ্যমের কাজ কি তাহলে! বিশ্বব্যাপী এখন এই প্রশ্ন ক্রমশ: জোরালো হচ্ছে। কারণ দেশে দেশে শাসকেরা ভিন্নমতকে অপছন্দের তালিকায় নিয়ে গেছেন।
তারা শুধু প্রশংসা শুনতে চান। উন্নয়ন সাংবাদিকতাই তাদের পছন্দ। এখানেও প্রশ্ন থেকে যায়। কেউ যদি উন্নয়নের পেছনের গল্প খুঁজেন তখনই যত সব বিড়ম্বনা। মামলার জালে তাকে ফেলে দেয়া হয়। নানা কিসিমের জাল। এর মধ্যে নতুন যোগ হচ্ছে আইসিটি। আগে জানতাম কারো মান গেলে তিনি নিজেই ফরিয়াদ জানাতেন। নিতেন আইনের আশ্রয়। এখন দেখছি অন্য যে কেউ ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তি না হয়েও মান উদ্ধারের চেষ্টা করেন। সফলও হয়ে যান। এ কেমন আইন? সহকর্মীদের বকাঝকা করি। বলি কত কিছুই তো ঘটে চলেছে। চোখ বুজে থাকার অর্থ কি? দুয়েকজন জবাব দেন। বলেন, লিখে চাকরি হারাবো নাকি! মানে খোঁজার চেষ্টা করি। বলি চাকরিতো সম্পাদকের কথায় যায় বা যেতে পারে। আবার পারে না। মজার কথা বললেন একজন সহকর্মী। সম্পাদক জানার আগেই চাকরি খতমের ঘটনা নতুন কি? বিশেষ বিশেষ বার্তায় চাকরি চলে যায়। নিজে এর প্রতিবাদ করে পদত্যাগ করেছি অন্তত দুবার। সহকর্মী খুশি হলেন না। বললেন, চারদিকে খোঁজ নিয়ে দেখুন কি হচ্ছে? ইদানিং অবশ্য আমি বেশি খবর রাখি না। রাখলে অসুস্থ হয়ে যেতে পারি। এই যখন অবস্থা একজন সহকর্মী বললেন, নিজেরাই লিখি না। সে আবার কি? নিজের কথা যেমন ভাবি, তেমনি সহকর্মীদের কথাও। যদি কোন প্রতিক্রিয়া হয়। কাগজ যদি সঙ্কটে পড়ে তখন সবাই বলবে কী দরকার ছিল? হালে ‘ইদানিং’ শব্দটা বেশ পরিচিতি পেয়েছে। বিশেষ করে নিউজ রুমে। এ থেকে আমরা কী বুঝলাম। সহকর্মীরা সেলফ সেন্সরশিপ বড্ড বেশি রপ্ত করে ফেলেছেন। তারা নিজেরাই ঠিক করেন, কোনটা যাবে, না যাবে। সম্পাদকের কাজ গৌন। নিজের জীবন দিয়ে যখন দেখি তখন হতাশ হই। আমি তো লিখে চাকরি হারিয়েছি একাধিকবার।
সেল্ফ সেন্সরশিপের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দেইনি। অনেকে বলতেন পাগলামি। আমি বিনীতভাবে তাদের বলতাম এটা যদি পাগলামি হয়ে থাকে তাহলে মহান এই পেশায় এসেছিলাম কেন? ঢাকা শহরে আলু-পটলের ব্যবসা করলেও এই পয়সা রোজগার করা সম্ভব! সেলফ সেন্সরশিপ কাবু করে ফেলেছে সংবাদ মাধ্যমকে। এর মধ্যে যদি ফেইক নিউজ ভর করে! কোনটা আসল কোনটা নকল সংবাদ তা বাছাই করা কঠিন। জীবনের শুরুতে দেখেছিলাম সাংবাদিক ইউনিয়নগুলো কি পেশাদারিত্ব দেখায়। এখন তারা নিজেরাই বিভক্ত। রাজনীতি তাদের গ্রাস করেছে। তাই বলে কি আগে সাংবাদিকরা রাজনীতি করতেন না? অবশ্যই করতেন। প্রয়াত মানিক মিয়া, জহুর হোসেন চৌধুরী, আবদুস সালাম কিংবা এবিএম মূসার ভেতরে রাজনীতি ছিল। বলা হয়ে থাকে মানিক মিয়ারা রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করতেন। এখন দল আগে এরপরে সাংবাদিকতা। এর সুযোগ নিচ্ছেন শাসকেরা। আমরাও কমিটমেন্ট ভুলে গিয়ে মিছিলে যোগ দিচ্ছি। যে মিছিল আমাকে দিচ্ছে বাড়তি সুবিধা। পরিস্থিতির দ্রুত অবনতি দেখছি। আর ভাবছি কী দরকার এ নিয়ে ভাববার। সব ভুলে আমিও তো সেলফ সেন্সরশিপ চর্চা করতে পারি। ক্ষমা করবেন পাঠক।
২৫শে জুলাই ২০১৮