ঢাকা: ভারী বৃষ্টির কবলে পড়েছে সারা দেশ। সকাল, দুপুর, বিকেল, সন্ধ্যা—এমনকি রাতভর বিরামহীন বৃষ্টি ঝরছে। গতকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা থেকে আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত সারা দেশে সবচেয়ে বেশি ২৪০ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড উপজেলায়। এর মধ্যে আজ সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টায় এখানে বৃষ্টি হয়েছে ২০৮ মিলিমিটার। এই ১২ ঘণ্টায় রাজধানী ঢাকায় বৃষ্টি হয়েছে ৫৯ মিলিমিটার। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, বৃষ্টির এই ধারা চলবে আরও দুই থেকে তিন দিন।
অতিবৃষ্টির কারণে পাহাড়ি ঢলে সীতাকুণ্ডের নিম্নাঞ্চল পানিতে ডুবে গেছে। এ কারণে উপজেলার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ১২ হাজার পরিবার। সীতাকুণ্ড উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, পাহাড়ধসের ঝুঁকি থাকায় ভাটিয়ারি ইউনিয়নের পাহাড় থেকে ১৬ পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।
সীতাকুণ্ড আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের পর্যবেক্ষক মাহিনুল ইসলাম বলেন, আজ মঙ্গলবার সকাল ছয়টা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ২০৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। এ ছাড়া ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২৪০ দশমিক ৪ মিলিমিটার।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভারী বৃষ্টির কারণে সীতাকুণ্ড উপজেলার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে গেছে। বৃষ্টির পানিতে প্লাবিত হয়ে ভেসে গেছে কিছু পুকুরের মাছ। ধানখেতসহ ফসলের মাঠও পানিতে টইটম্বুর। বৃষ্টির কারণে দিনমজুরেরা কাজে যেতে পারেননি। এখানকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিও কম ছিল।
কুমিরা আবাসিক বালিকা স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ মো. নাসির উদ্দিন বলেন, বৃষ্টি এত বেশি হয়েছে যে ছাত্রীদের উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল। এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের কার্যালয়সহ শ্রেণিকক্ষগুলোও ডুবে যায়।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. ইসমাইল হোসেন বলেন, অতিবৃষ্টিতে পাহাড়ধসের আশঙ্কায় ভাটিয়ারি থেকে ১৬ পরিবারকে নিরাপদে সরিয়ে আনা হয়েছে।
সীতাকুণ্ড উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তারিকুল আলম বলেন, ইতিমধ্যে সীতাকুণ্ডে ১৫০ পরিবারকে শুকনো খাবারের প্যাকেট দেওয়া হয়েছে। প্রতি প্যাকেটে পাঁচ কেজি চাল, এক কেজি ডাল, দুই লিটার সয়াবিন তেল, ১২টি করে দেশলাই প্যাকেট ও মোমবাতি, আধা কেজি মুড়ি, এক পোয়া চিরা দেওয়া হয়। এ ছাড়া জেলা প্রশাসনের কাছে নগদ ২ লাখ টাকা ও ২০ টন চাল বরাদ্দ চাওয়া হয়েছে। এসব পাওয়া গেলে অসচ্ছল ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে ত্রাণসহায়তা দেওয়া হবে।
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, আজ দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে সীতাকুণ্ডে। ১২ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ২০৮ মিলিমিটার। দেশের বেশির ভাগ এলাকাতে টানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হয়েছে। আগামী দু-তিন দিন বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে। তবে আজকের মতো টানা বৃষ্টি না-ও হতে পারে।