কুষ্টিয়া:রানা মণ্ডলের বয়স ১৯ বছর! এই বয়সে একটি দুটি নয়, চার-চারটি বিয়ে সেরে ফেলেছেন। তিন স্ত্রী তাঁকে ছেড়ে চলেও গেছেন। সর্বশেষ গত শুক্রবার চতুর্থ বিয়ে করেন। অবশ্য এর মাশুলও দিতে হচ্ছে রানাকে। রানার বাবাকে পুলিশ থানায় নিয়েছে। পলাতক রানাও।
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার ফুলবাড়িয়া ইউনিয়নের ফুলবাড়িয়া গ্রামের রাশেদুল মণ্ডলের ছেলে রানা মণ্ডলের নাম এখন গ্রামের মানুষের মুখেমুখে। সোমবার বিকেলে সরেজমিনে রানার গ্রামে তাঁর পরিবার ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা হয়। রানা রাজমিস্ত্রি। পরিবারের সদস্যদের দাবি, রানার বয়স ২৫। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্মসনদ নিয়েই বিয়ে করেছেন। ইউনিয়ন পরিষদে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অত্যন্ত কৌশলে গোপন করে বাড়ানো হয়েছে বয়স।
মিরপুর থানায় রানার বাবা রাশেদ মণ্ডলের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, রানা লেখাপড়া বেশি দূর করতে পারেননি। রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে ভেড়ামারা উপজেলায় প্রথম বিয়ে হয় রানার। বিয়ের তিন মাসের মধ্য প্রথম সংসার ভেঙে যায়। এরপর মিরপুর উপজেলার কঢ়ুবাড়িয়া গ্রামে দ্বিতীয় বিয়ে করে। সেই স্ত্রীও পাঁচ মাস পর ছেড়ে চলে যান। এরপর ফের দৌলতপুর উপজেলার খলিসাকুন্ডি গ্রামে তৃতীয় বিয়ে করলেও সংসার টেকেনি। এরপর সর্বশেষ চলতি মাসের ২০ জুলাই ভেড়ামারায় দশম শ্রেণিপড়ুয়া এক মেয়েকে বিয়ে করেন রানা। এ বিয়ের পর এলাকায় আলোচিত হয়ে ওঠেন রানা।
এলাকার মাতবর ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক আলী আসমত বলেন, এর আগে বিয়ে নিয়ে বেশ কয়েকবার বিচার-সালিস হয়েছে। এরপরও বিয়ে করেই চলেছেন। তাঁরা কাউকে না জানিয়ে একের পর এক রাতের আঁধারে নাবালক ছেলেকে বিয়ে দিচ্ছে। জন্মনিবন্ধন জালিয়াতি করে এ কাজ করে আসছে পরিবারটি।
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন থেকে ২০১৬ সালের ২৭ জুলাই একটি জন্মনিবন্ধন নেন রানা মণ্ডল। সেই জন্মনিবন্ধনে বয়স দেখানো হয়েছে ২১ বছর। বয়স প্রমাণের জন্য কোনো কিছু জমা দেওয়া হয়নি ইউনিয়ন পরিষদে। ইউনিয়নের তৎকালীন চেয়ারম্যান খন্দকার টিপু সুলতান ও সচিবের অনুরোধে ইউনিয়ন পরিষদের ইউসিডি কর্মী সুজন হোসেন এ জন্মনিবন্ধন রানার নামে ইস্যু করেন।
এই জন্মনিবন্ধন সব বিয়েতে ব্যবহার করেছেন রানা। রানার বাবা হাটবাজারে পিঁয়াজু বিক্রি করেন। তিনি বলেন, ‘ছেলের জন্ম তারিখ আমার মনে নেই। তবে আমার মেয়ের বয়স বর্তমানে ১১ বছর। মেয়ের থেকে ছেলের বয়স আট থেকে নয় বছর বেশি।’ গত দেড় বছরে ছেলে চারটি বিয়ে করেছে জানিয়ে বলেন, ‘প্রথম দুই বউ চলে যাওয়ার পর আমি বিয়ে দিতে চাইনি। তার মায়ের পীড়াপীড়িতে বিয়ে দিয়েছি। বিয়ের আগে ইউনিয়ন সচিবের মাধ্যমে সনদটি নিয়েছে।’
বাড়িতে রানার মা রেহেনা খাতুন রেনু বলেন, ‘ছেলের বিয়ে আমি দেব, তাতে আপনাদের সমস্যা কোথায়। ছেলে বিয়ে করতে চায় বিয়ে দিয়েছি—এখানে বাইরের লোকের এত মাথাব্যথা কেন।’
রানার সহপাঠী আজাদুর রহমান বলে, ‘রানা আমার সঙ্গে দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়েছে। সেটা ছিল ২০০৯ সাল। আমি এ বছর এসএসসি পাস করেছি। আমার বয়স এখন ১৬ বছর চলছে।’
ফুলবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আবদুস সালাম বলেন, ‘আমার সময়ে এ কাজ হয়নি। আগের চেয়ারম্যানের সময় সনদ জালিয়াতি করে কাজটি করেছে রানার পরিবার। এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
এদিকে বয়স না হওয়ায় ছেলেকে একাধিক বিয়ে দেওয়ায় রানার বাবা রাশেদ মণ্ডলকে সোমবার বিকেলে পুলিশ আটক করেছে। ঘটনার পর থেকে পলাতক রয়েছেন রানা মণ্ডল। রাশেদ মণ্ডলের দাবি, ছেলের শারীরিক সমস্যা আছে। এ জন্য বারবার বিয়ে দেওয়া হয়েছে।
মিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এস এম জামাল আহমেদ বলেন, ‘বিষয়টি খুবই স্পর্শকাতর। দেড় বছরে একটি ছেলে চারটি বিয়ে করেছে। সেটা আবার বাল্যবিবাহ। বিষয়টি খুবই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। সনদ জালিয়াতি করলে সবার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমার উপজেলার বাইরে তিনটি বিয়ে করেছে। আরেকটি বিয়ে করেছে আমার উপজেলার মধ্যে।’