ঢাকা: বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে কারাগারে রেখে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনে যাবে না বিএনপি। আজ শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি ও তাঁর সুচিকিৎসার দাবিতে’ আয়োজিত সমাবেশ দলটির নীতিনির্ধারকেরা এ কথা বলেন।
পাশাপাশি নির্বাচনে যেতে সরকারের পদত্যাগ, নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, ভোটের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া ও ভোটের সময় সেনাবাহিনী মোতায়েনেরও দাবি জানানো হয়।
গত ৮ ফেব্রুয়ারি থেকে খালেদা জিয়া কারাবন্দী রয়েছেন। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টের দুর্নীতি মামলায় পাঁচ বছরের সাজার রায় হওয়ার পর থেকেই তিনি নাজিমউদ্দিন রোডের কারাগারে বন্দী রয়েছেন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে দুপুর থেকেই বিএনপির নেতা–কর্মীরা সমাবেশস্থলে আসতে থাকেন। তাঁরা দলীয় প্রধান ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার মুক্তি চেয়ে ব্যানার, প্ল্যাকার্ড, ফেস্টুন বহন করেন। সমাবেশ কয়েক হাজার নেতা–কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশের জন্য কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে অস্থায়ী মঞ্চ করা হয়। সমাবেশের কারণে ফকিরাপুল মোড় থেকে নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত দুই পাশের সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সমাবেশে বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘নির্বাচন করতে হলে অবশ্যই ১ নম্বর শর্ত দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। নেত্রীকে কারাগারে রেখে কোনো নির্বাচন হবে না।’ সুষ্ঠু নির্বাচন হলে আওয়ামী লীগ ২০টির বেশি আসন পাবে না বলে উল্লেখ করেন। এ ছাড়া আটটি দল নিয়ে গঠিত বাম গণতান্ত্রিক জোটকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, আন্দোলন চালিয়ে যেতে হবে। মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রের জন্য, মানুষের অধিকার আদায়ের জন্য এবং সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য সব দল ও সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। এই সরকারের দুঃশাসন থেকে মুক্তির জন্য জাতীয় ঐক্য প্রয়োজন।
কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের তুলে নেওয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, মিথ্যা মামলা দিয়ে রিমান্ডে নেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, আজকে দেশের কোনো মানুষই নিরাপদ নয়। দেশে অবস্থিত বিভিন্ন দেশের দূতাবাস থেকেও এ কথা বলা হচ্ছে। ফখরুল বলেন, দেশের মানুষ পরিবর্তন চায়। আইনের শাসন চায়, কিন্তু পাচ্ছে না। রাজনীতিবিদেরা কথা বলতে পারছেন না। এ ধরনের অবস্থা চলতে পারে না। জাতীয় ঐক্যের মাধ্যমে আন্দোলন গড়ে তুলে এই সরকারকে বিদায় করতে হবে। ক্ষমতার জন্য নয়, বিএনপি আন্দোলন করছে দেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে আনতে এবং গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে।
সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও জ্যেষ্ঠ নেতা খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, ‘খালেদা জিয়া, একাদশ নির্বাচন, গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার—এক সুতায় গাঁথা। সোজা আঙুলে ঘি উঠবে না।’ সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, কাল সরকারি টাকা খরচ করে প্রধানমন্ত্রীর জন্য জনসভার আয়োজন করেছেন আমলারা। পুলিশ যদি বিএনপিকে আগে সমাবেশের অনুমতি দিত, তাহলে কালকের সমাবেশের চেয়েও বেশি লোক বিএনপির সমাবেশে হতো।
বর্তমান প্রক্রিয়ায় খালেদাকে মুক্ত করা না গেলে রাজপথে আন্দোলনে নামার কথা বলেছেন স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য মওদদু আহমদ। আর স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় সরকারের পদত্যাগ চেয়ে বলেন, এ সরকারের অধীনে বাংলাদেশে আর কোনো নির্বাচন নয়।
দেড় বছর পর বিএনপিকে ২৩টি শর্তে আজ এ সমাবেশের অনুমতি দেয় ঢাকা মহানগর পুলিশ। সর্বশেষ ২০১৬ সালের ৫ জানুয়ারি দলটি ঢাকায় দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করে।
সমাবেশে বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী ও সহপ্রচার সম্পাদক আমিরুল ইসলাম খান সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন। এতে আরও বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান এ জেড এম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ, জয়নুল আবদীন ফারুক, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল প্রমুখ।