এইচএসসি ও সমমানে কয়েক বছরের তুলনায় পাসের হার কমে গেছে। পাসের হার কমার পাশাপাশি জিপিএ পাঁচ কমে গেছে ৮ হাজার ৭০৭টি।
অনুসন্ধানে দেখা গেছে, পাঁচ কারণে কমে গেছে বিভিন্ন শিক্ষাবোর্ডে উচ্চমাধ্যমিক এ শ্রেণির ফলাফল। এসব কারণের মধ্যে ইংরেজিতে উল্লেখ্যজনক হারে ফেল, মানবিকে খারাপ ফল, সাত বোর্ডে তুলনামূলক কম রেজাল্ট, মূল্যায়ন পদ্ধতির পরিবর্তন, প্রশ্নপত্র ফাঁস না হওয়া কারণ রয়েছে। পরিসংখ্যানে দেখা গেছে— বেশিরভাগ শিক্ষাবোর্ডে ইংরেজিতে তুলনামূলক কম পাস করেছে। ঢাকা বোর্ডের শিক্ষার্থীরা বাংলায় ৯৫ দশমিক ৯২ শতাংশ পাস করলেও ইংরেজিতে পাস করেছে ৭৫ দশমিক ৪৮ শতাংশ। দিনাজপুর বোর্ডে বাংলায় পাসের হার ৯৫ দশমিক ২৫ শতাংশ হলেও ইংরেজিতে পাস করেছে ৬৫ দশমিক ৫১ শতাংশ। যশোর বোর্ডে ইংরেজিতে ফেল করেছে ৩৫ শতাংশ শিক্ষার্থী। একইভাবে অন্যান্য বোর্ডের ছাত্রছাত্রীও কম পাস করেছে এ বিষয়ে। এ প্রসঙ্গে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, খারাপ ফল করার জন্য ছাত্রছাত্রীরা দায়ী নয়। মফস্বলের অনেক কলেজে ক্লাস হয় না, প্রশিক্ষিত শিক্ষকও নেই।
মফস্বলে বেশি খারাপ করছে শিক্ষার্থীরা। এর প্রভাব পড়ছে সার্বিক ফলাফলে। শিক্ষায় রাষ্ট্রীয় বিনিয়োগ বাড়ানোর পাশাপাশি শিক্ষক প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দেওয়ার কথা জানান তিনি। সাধারণ আট শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের মধ্যে দেখা গেছে— প্রায় সাতটি বোর্ডেই বিভিন্ন কারণে গত বছরের চেয়ে ফলাফল কমে গেছে। গতবারের চেয়ে ফলাফল বেশি খারাপ করেছে সিলেট ও যশোর বোর্ড। সিলেটে গতবারের চেয়ে ৯ দশমিক ৮৯ শতাংশ ফল কমেছে। যশোরে ফল কমেছে ৯ দশমিক ৬২ শতাংশ। এ ছাড়া দিনাজপুর বোর্ডে ৫ দশমিক ২৩ শতাংশ ফল কমে যাওয়ায় সার্বিক ফলাফলে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে। এ ছাড়া দেখা গেছে— সব শিক্ষাবোর্ডেই মানবিক বিভাগের শিক্ষার্থীরা খারাপ ফলাফল করেছে। ঢাকা শিক্ষাবোর্ডে বিজ্ঞানে ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করলেও মানবিকে পাস করেছে মাত্র ৫৫ দশমিক ২৩ শতাংশ। একইভাবে যশোর বোর্ড, চট্টগ্রাম বোর্ড, দিনাজপুর বোর্ড, সিলেট বোর্ডে মানবিকে যথাক্রমে ৪৮ দশমিক ১৪ শতাংশ, ৪৮ দশমিক ৩১ শতাংশ ও ৪৪ দশমিক ৮১ শতাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করেছে। অন্য বোর্ডগুলোতে খারাপ ফল করেছে মানবিকের শিক্ষার্থীরা। এ প্রসঙ্গে শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ গতকাল বলেন, অভিভাবকরা তুলনামূলক মেধাবী সন্তানদের বিজ্ঞানে পড়ান। কম মেধাবীদের মানবিকে ভর্তি করে দেন। তাই এ শিক্ষার্থীরা একটু খারাপ ফল করেছে। মন্ত্রী বলেন, শিক্ষকদের বাড়তি যত্ন নিয়ে মানবিকের শিক্ষার্থীদের পাঠদান করালে এ সমস্যা থাকবে না। কম ফলাফলের কারণ বের করে তা সমাধানে উদ্যোগী ভূমিকা গ্রহণ করতে বোর্ড চেয়ারম্যানদের নির্দেশ দেন নুরুল ইসলাম নাহিদ। এদিকে, গত বছরের চেয়ে এ বছর খাতা মূল্যায়নেও এসেছে পরিবর্তন। এর আগে বিভিন্ন বছর পরীক্ষার খাতা মূল্যায়নের ক্ষেত্রে শিক্ষকরা তেমনভাবে গুরুত্ব দিতেন না। একথা শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদও স্বীকার করেছেন। গতকাল শিক্ষামন্ত্রণালয়ে বক্তব্য প্রদানকালে নাহিদ বলেন, শিক্ষকরা যথাযথভাবে খাতা মূল্যায়ন করেছেন। তাই ফলাফলে একটু প্রভাব পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় ফল কমে যাওয়ার পেছনে প্রশ্ন ফাঁস না হওয়ার কারণও রয়েছে। আগের বছরগুলোতে এইচএসসিসহ পাবলিক পরীক্ষা চলাকালীন ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ত প্রশ্নপত্র। অনেক শিক্ষার্থী পরীক্ষার আগে পাওয়া প্রশ্ন দেখে ভালো ফল করত। কিন্তু ২০১৮ সালে কোনো প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ পাওয়া যায়নি। এতে অনেক ছাত্র যারা প্রশ্ন ফাঁসের আশায় থাকত তারা ভালো করতে পারেনি এমন মত শিক্ষাসংশ্লিষ্টদের। সার্বিকভাবে এইচএসসি ও সমমানে ফল কমে গেলেও এটি মানতে নারাজ সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধুরী। তিনি গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আমি মনে করি পরীক্ষার ফল স্থিতিশীল অবস্থার মধ্যে রয়েছে। আগে যেভাবে ছাত্রছাত্রীরা পাস করত তাতে মানুষের পরীক্ষা নিয়ে একটা অবিশ্বাসের জায়গা তৈরি হয়েছিল। সে পরিস্থিতি থেকে আমরা এখন বের হয়ে এসেছি বলে মনে করি। এখন পরীক্ষার খাতা ভালোভাবে মূল্যায়ন হচ্ছে। ছাত্ররা যথাযথ নম্বর পাচ্ছে।