চট্টগ্রাম: সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখির জন্য ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের হুমকির মুখে ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতত্ত্ব বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. মাইদুল ইসলাম। গতকাল সোমবার তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে নিরাপদ স্থানে চলে গেছেন বলে প্রথম আলোকে জানিয়েছেন।
কোটা সংস্কার ও শিক্ষক মাইদুল ইসলামের পক্ষে ফেসবুকে লেখালেখি করায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্রসংগঠনের রোষানলে পড়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক খ. আলী আর রাজীও।
এই দুই শিক্ষকের চাকরিচ্যুতির দাবি জানিয়েছে ছাত্রলীগ। মঙ্গলবার বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীকে দেওয়া এক স্মারকলিপিতে এ দাবি জানানো হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ আলমগীর টিপু স্বাক্ষরিত এই স্মারকলিপিতে এই দুই শিক্ষককে ক্যাম্পাসে অবাঞ্ছিত করার কথাও উল্লেখ করা হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বর্তমানে ছাত্রলীগের কোনো কমিটি নেই। গত বছরের ৬ ডিসেম্বর ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। তবে বিলুপ্ত কমিটির নেতারাই ক্যাম্পাসে সক্রিয় রয়েছেন।
মো. মাইদুল ইসলাম বেশ কিছুদিন ধরে নিজের ফেসবুকে কোটা সংস্কারের পক্ষে লেখালেখি করছেন। পাশাপাশি এ আন্দোলনে যুক্ত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার বিরুদ্ধেও তিনি সরব হন। সর্বশেষ তিনি ঢাকায় শিক্ষকদের ওপর হামলার ছবিও শেয়ার করেন।
এসব ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে গত রোববার দুপুরে সমাজতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি এস এম মনিরুল হাসানের কাছে মাইদুল ইসলামের বিরুদ্ধে নালিশ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। প্রত্যক্ষদর্শীদের সূত্রমতে, এ সময় ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ জন নেতা-কর্মী বিভাগের সভাপতির কক্ষে গিয়ে হট্টগোল করেন। পরে এস এম মনিরুল হাসান বিষয়টি দেখবেন বলে আশ্বস্ত করার পর নেতা-কর্মীরা চলে যান।
নালিশের পাশাপাশি ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা ফেসবুকে মাইদুল ইসলামের ছবি শেয়ার করে নানা মন্তব্য করছেন। অনেকে তাঁকে দেখে নেওয়ার হুমকিও দেন।
এসব ঘটনায় নিরাপত্তাহীনতার জন্য ক্যাম্পাস ছাড়ার কথা বলেন মাইদুল ইসলাম। মঙ্গলবার তিনি প্রথম আলোকে বলেন, পরিবার নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ ক্যাম্পাসে বসবাস করে আসছিলেন তিনি। হুমকির কারণে সোমবার তিনি ক্যাম্পাস ছেড়ে গেছেন। গতকাল বিশ্ববিদ্যালয়ে যাননি তিনি।
তবে এখনো থানায় কোনো সাধারণ ডায়েরি বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে কোনো অভিযোগ করেননি বলে জানিয়েছেন মাইদুল ইসলাম। পরিস্থিতি বুঝে তিনি পদক্ষেপ নেবেন বলে জানান।
অপর দিকে শিক্ষক খ. আলী আর রাজীও নিরাপত্তাহীনতায় ভোগার কথা জানিয়ে গতকাল বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে চলাচল করতে পারছি না।’ গতকাল তিনিও বিভাগে যাননি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে তিনি কোথায় অবস্থান করছেন, তা জানাতে চাননি। তিনি বলেন, ‘শিক্ষকদের কথা বলার স্বাধীনতায় যাঁরা হস্তক্ষেপ করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধে তিনি লড়ে যাবেন।’
কোটা সংস্কার নিয়ে ফেসবুকে লেখালেখির কারণে গত রোববার চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিমেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন অনুষদের শিক্ষার্থী মীর মোহাম্মদ জুনায়েদকে সাময়িকভাবে বহিষ্কার করে কর্তৃপক্ষ।
তবে ছাত্রলীগের হুমকির বিষয়ে এক শিক্ষকের ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়া ও আরেক শিক্ষকের নিরাপত্তাহীনতার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি আলমগীর টিপু গতকাল রাতে প্রথম আলোকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলনসংক্রান্ত কোনো ঝামেলা নেই। তবু দুই শিক্ষক ফেসবুকে উল্টোপাল্টা লেখালেখি করে বিশ্ববিদ্যালয়কে গরম করে দেওয়ার চেষ্টায় আছেন। এ ছাড়া তাঁরা সরকারকে নিয়েও কটূক্তি করেন। তাঁরা এসব করতে থাকলে আমরা প্রথমে প্রতিবাদ করব, তারপর প্রতিহত করব।’
বিষয়টি নিয়ে জানতে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরীর মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরেননি। ফোন ধরেননি সহ-উপাচার্য শিরীণ আখতারও।
প্রক্টর মোহাম্মদ আলী আজগর চৌধুরী বলেন, শিক্ষকেরা ক্যাম্পাসে আসতে পারছেন না-এ ধরনের তথ্য জানা নেই। কোনো শিক্ষক এখনো অভিযোগ করেননি। অভিযোগ করলে বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হবে।