বাংলাদেশের নির্বাসিত লেখক তসলিমা নাসরিন সম্প্রতি নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্ট থেকে একটি স্ট্যাটাসে তার গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি ও আত্মগোপনে থাকার স্মৃতিচারণ করেছেন। ৮ জুলাই, রবিবার এক স্ট্যাটাসে এ বিষয়ে কথা বলেছেন তিনি।
১৯৯৪ সালে আত্মগোপনে থাকা সময়ের একটি ছবি পোস্ট করে তসলিমা নাসরিন লিখেছেন,
‘জুন, ১৯৯৪ সাল। আত্মগোপন অবস্থায় আমি। খালেদা জিয়ার সরকার আমার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করার পর আত্মগোপন করার পরামর্শ দিয়েছিলেন ল’ইয়ার। আত্মগোপনের পক্ষে ছিলাম না আমি। গ্রেফতার করলে করবে, বলেছিলাম।
লইয়ার বললেন, পুলিশ তো নয়ই, জেলও নাকি আমার জন্য নিরাপদ নয়, ধর্মান্ধ পুলিশ বা কয়েদি আমাকে খুন করতে পারে। কেন গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়েছিল? সরকার আমার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল, তাই। কেন মামলা করেছিল? আমার লেখালেখি নাকি ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর মনে আঘাত দিয়েছিল, তাই। ধর্মান্ধরা ঢাকা শহরে প্রায় প্রতিদিন মিছিল করছিল আমার ফাঁসির দাবিতে। মিছিলে দশ বিশ এমনকী পঞ্চাশ হাজার লোক হতো। আমি অন্তরীণ থাকা অবস্থায় সারা দেশ থেকে ঢাকায় আসার জন্য লং মার্চ করেছিল মোল্লারা, মানিক মিয়া এভিনিউতে জনসভা হয়েছিল চার লক্ষ লোকের।
একটিই দাবি, তসলিমার মৃত্যুদণ্ড চাই। পুলিশ আমাকে খুঁজে পাচ্ছে না, মোল্লারা ঘোষণা করে দিয়েছে, বাড়ি বাড়ি ঢুকে আমাকে খুঁজবে ওরা। আমাকে পেলে আইন নিজের হাতে তুলে নেবে। আমি কি সে কারণেই উদ্বিগ্ন? চোখে মুখে কি ভয় আমার? ভয় যদি পাবো, তবে এত ভয়ংকর ঘটনা ঘটার পর কেন আমি দেশেই থাকতে চেয়েছিলাম? জামিন পাওয়ার পর গভীর রাতে পুলিশই তো তুলে নিয়ে গিয়ে বিমানে বসিয়ে দিল!
এই যে গত চব্বিশ বছর দেশে ফিরতে চাইছি, কোনও সরকারই দিচ্ছে না ফিরতে, ভয় পেলে ফিরতেই বা চাইতাম কেন?’