আত্মরক্ষার জন্য মানুষ অভিযোগ করেন। অভিযোগ অনেক সময় সঠিক হয় আবার মিথ্যাও হয়। প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে যাওয়ার নজীর অহরহ। তবে রাষ্ট্র ও আইন চায় ন্যায় বিচারের স্বার্থে অভিযোগ সঠিক হউক। অভিযোগ সঠিক না হলে ন্যায় বিচার নিশ্চিত সম্ভব হয় না। তাই ন্যায় বিচারের জন্য তৈরী প্রত্যেক আইনেই অপরাধের যেমন শাস্তি আছে, তেমনি মিথ্যা অভিযোগের জন্যও শাস্তি রয়েছে। এটাই ন্যায় বিচার।
সম্প্রতি কোটা বিরোধী আন্দোলনকে কেন্দ্র করে রাজনীতি শুরু হয়েছে। আন্দোলনের বর্তমান পরিণতি অনেকটা ধূসর রঙ ধারণ করলেও বিষয়টি জাতীয় থেকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রুপ নিতে যাচ্ছে, এটা অনেকটাই পরিস্কার।
পর্যবেক্ষনে দেখা যায়, আন্দোলন শুরুর পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একটি অডিও ক্লিপ নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ক্ষমতাসীন আওয়ামীলীগ বলছে, তারেক রহমান কোটা আন্দোলনকে উস্কানী দিয়ে সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চায়।
কথা উঠেছে, জাতীয় সংসদে মন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী আন্দোলনকারীদের রাজাকারের বাচ্চা বলেছেন। এটা নিয়েও তুমুল হৈ চৈ। পক্ষে-বিপক্ষে নানা কথা। এই কথার সাথে অনেকটা একমত হয়েও সরকারী দলের বিভিন্ন দায়িত্বশীল নেতা বক্তব্য দিয়েছেন। সব মিলিয়ে কোটা আন্দোলন একটি বড় ইস্যুতে পরিণত হয়েছে এটা পরিস্কার।
এ দিকে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে জঙ্গিবাদি কর্মকাণ্ডের মিল আছে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান।
রোববার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে ক্যাম্পাসে উদ্ভূত পরিস্থিতির ব্যাখা দিতে গিয়ে এ মন্তব্য করেন তিনি।
রাতের বেলা বিভিন্ন হল থেকে নারী শিক্ষার্থীদের মিছিল করা নিয়েও সমালোচনা করেন উপাচার্য। তিনি বলেন, তালেবান নেতা মোল্লা ওমর ও উসামা বিন লাদেনের মতো ভিডিও বার্তা পাঠানো হচ্ছে। জঙ্গিরা যেভাবে শেষ অস্ত্র হিসেবে নারীদের ব্যবহার করে, সেভাবে কোটা আন্দোলনেও ছাত্রীদের ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় এসব মেনে নেবে না। ফৌজদারি অপরাধ করলে আইনের শাসন কার্যকর হতে হবে।
কোটা আন্দোলনের সঙ্গে কোনো জঙ্গি সংগঠনের যোগাযোগ আছে কিনা- সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের উত্তরে ঢাবি ভিসি আখতারুজ্জামান বলেন, কোন সংগঠন জানি না। কিন্তু ফেসবুকে যে ভিডিও দেখেছি, সে ভিডিও জঙ্গিদের ধরনের। সেখানে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করার কথা বলা হয়েছে। এসব দেখে মনে হয়েছে অশুভ কোনো শক্তির তৎপরতা রয়েছে।
কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে ক্যাম্পাস অস্থিতিশীল করতে লন্ডন থেকে উস্কানি দেয়া হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন ঢাবি ভিসি।
অধ্যাপক ড. মো. আকতারুজ্জামান বলেন, অশুভ শক্তির তৎপরতায় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন চলছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অশুভ শক্তি ঢুকতে চাচ্ছে। তার প্রমাণ হিসেবে ভিসি বলেন, লন্ডন থেকে ফোন করে তাদের এক সহকর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে। ফায়দা নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কোনো অশান্ত পরিবেশ বরদাশত করা হবে না।
ভিসির এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে কোটা আন্দোলনকারীদের সব কাজই ‘জঙ্গিবাদের বহিঃপ্রকাশ’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) উপাচার্য (ভিসি) ড. আখতারুজ্জামানের এমন বক্তব্যের সঙ্গে আওয়ামী লীগ পুরোপুরি একমত নয় বলে জানিয়েছেন দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
সোমবার (০৯ জুলাই ২০১৮) দুপুরে রাজধানীর বনানীর সেতু ভবনে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।
সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, আন্দোলনের সময় ভিসির বাড়িতে যে হামলার ঘটনা ঘটেছে তা পুরোপুরি জঙ্গি স্টাইলে হয়েছে। কিন্তু পুরো আন্দোলন জঙ্গিবাদের বহিঃপ্রকাশ বলে তিনি যেবক্তব্য দিয়েছেন তার সঙ্গে ঢালাওভাবে আমি কিংবা আওয়ামী লীগ একমত নয়।
কোটা আন্দোলন নিয়ে ভিসির বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ দিয়ে ও বক্তব্য প্রত্যাহার চেয়ে দেশে-বিদেশে অনেক তোলপাড় চলছে বর্তমানে।
বাংলাদেশ সরকার বলছে, বাংলাদেশে জঙ্গীবাদের যে সকল ঘটনা ঘটছে তা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এটার সাথে আন্তর্জাতিক জঙ্গীবাদের কোন সম্পর্ক নেই বলে বার বার বলছে আমাদের সরকার। এই অবস্থায় ঢাবি ভিসির বক্তব্য বলে দেয়, বাংলাদেশে জঙ্গী আছে, জঙ্গীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েও লেখাপড়া করেন এবং জঙ্গীরা ভিসি মহোদয়ের বাসায়ও হামলা করেছেন। তাহলে ঢাবি ভিসির বক্তব্য প্রমান করে বাংলাদেশ একটি জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র এটা সত্য, যা সরকারের সঙ্গে বিপরীত।
সবশেষ বলা যায়, বাংলাদেশ কি জঙ্গীবাদী রাষ্ট্র কি না, বা বাংলাদেশ কি জঙ্গীবাদের ঝুঁকিতে আছে কি না, ঢাবি ভিসির বক্তব্য বিবেচনায় এনে সরকারের পক্ষ থেকে একটি পরিস্কার প্রেসনোট দেয়া উচিত। তাহলে জাতি বুঝতে পারবে তারা জঙ্গীবাদের ঝুঁকিমুক্ত না ঝুঁকিতেই বসবাস করছে।
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
এডিটর ইনচীফ
গ্রামবাংলানিউজটোয়েন্টিফোরডটকম