সিলেট প্রতিনিধি :: সিলেট সিটি করপোরেশন (সিসিক) নির্বাচনে এখনও প্রার্থীদের প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হয়নি। তফসিল অনুসারে, প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার পরই প্রার্থীরা প্রচারণা শুরু করবেন। কিন্তু এই আচরণবিধি মানছেন না কেউই। প্রতীক বরাদ্দ পাওয়ার আগেই আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেয়র এবং কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা। কিন্তু আগেভাগেই প্রার্থীরা প্রচারণায় নামলেও সেদিকে দৃষ্টি নেই নির্বাচন কমিশনের।
সিটি করপোরেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬-এ স্পষ্ট উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কোন প্রার্থী বা তাহার পক্ষে কোন রাজনৈতিক দল, অন্য কোন ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান প্রতীক বরাদ্দের পূর্বে কোন প্রকার নির্বাচনি প্রচার শুরু করিতে পারিবেন না।’ আগামী ১০ জুলাই সিলেটে প্রতীক বরাদ্দ দেয়া হবে প্রার্থীদের। কিন্তু সিলেট সিটি নির্বাচনে এই বিধি মেনে চলার গরজ দেখাচ্ছেন না কোনও প্রার্থী।
বিশেষ করে মেয়র প্রার্থীরা আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে আছেন প্রথম সারিতে।
গত ১৩ জুন সিলেট সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এরপরই সম্ভাব্য প্রার্থীরা জোরেশোরে নামেন মাঠে। আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জামায়াতের সম্ভাব্য প্রার্থীরা ওই সময় থেকেই নগরীতে গণসংযোগ শুরু করেন। ২২ জুন আওয়ামী লীগ মেয়র প্রার্থী হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে মনোনয়ন দেয়। ২৭ জুন বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য ও সদ্য সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দলীয় মনোনয়ন পান। সিলেট মহানগর জামায়াতের এহসানুল মাহবুব জুবায়ের দলীয় সমর্থনে স্বতন্ত্র থেকে নির্বাচন করছেন। এছাড়া বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিমসহ আরো পাঁচ মেয়র প্রার্থী নির্বাচনে লড়ছেন। এদের কেউই আচরণবিধি মানছেন না।
গত ২৮ জুন নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মেয়র প্রার্থীরা। সেদিন দলীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে রীতিমতো শোডাউন করে আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ে যান তারা। অথচ আইনে বলা হয়েছে, পাঁচজন সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র জমা দেয়া যাবে। ওইদিন আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি আওয়ামী লীগের প্রার্থী কামরান এবং বিএনপির প্রার্থী আরিফকে জিজ্ঞেস করা হলে তারা নেতাকর্মীদের নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ‘যেসব নেতাকর্মী এসেছেন, তারা আমাদের সাথে আসেননি। তারা হয়তো অন্য কোন প্রার্থীর সাথে এসেছেন।’
সেদিন আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলীমুজ্জামানও আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি ‘দেখেননি’ বলে মন্তব্য করেন।
আওয়ামী লীগের প্রতীক নৌকা ও বিএনপির প্রতীক ধানের শীষ নিশ্চিত থাকায় এ দুই দলের মেয়র প্রার্থীরা প্রতীকের পক্ষেই ভোট চাইছেন নগরবাসীর কাছে। তারা প্রতিদিনই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ছুটে যাচ্ছেন। ‘কুশল বিনিময়ের’ আড়ালে তারা নিজ নিজ প্রতীকের পক্ষে ভোট প্রার্থনা করছেন। বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী বদরুজ্জামান সেলিম, জামায়াতের প্রার্থী জুবায়ের, ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী ডা. মোয়াজ্জেম হোসেন, সিপিবি-বাসদের প্রার্থী আবু জাফরসহ অন্যান্য মেয়র প্রার্থীরাও বিধি লঙ্ঘন করে নানা কৌশলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। এমনকি কেউ কেউ মতবিনিময়, পুনর্মিলনী সভা এসবের আড়ালে নির্বাচনী প্রচারণা চালাচ্ছেন।
কাউন্সিলর প্রার্থীরাও আছেন মাঠে। তারা প্রতীক না পেলেও নিজ নিজ ওয়ার্ডের ভোটারদের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন। এছাড়া সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকেও প্রচারণায় ব্যস্ত প্রার্থীরা। অবশ্য প্রার্থীদের কেউই নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়টি স্বীকার করছেন না।
আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান বলেন, ‘আগে যেভাবে নগরবাসীর খোঁজখরব নিতাম, এখনও সেভাবেই নিচ্ছি। আমি কোন এলাকায় গেলে মানুষ ভিড় করে। এটাকে নির্বাচনী প্রচারণা বলা যাবে না।’
বিএনপির মেয়র প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘নির্বাচনী আইনের প্রতি আমরা শ্রদ্ধাশীল। প্রতীক পাওয়ার পরই প্রচারণা শুরু করব। এর আগে প্রচারণায় নামার প্রশ্নই ওঠে না।’
প্রার্থীদের আচরণবিধি লঙ্ঘনের বিষয়ে জানতে চাইলে সিলেট সিটি নির্বাচনের সহকারি রিটার্নিং অফিসার মো. আলাউদ্দিন বলেন, ‘আমি কোন মন্তব্য করতে পারব না।’
এদিকে, আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলে গত সোমবার কামরানের বিরুদ্ধে ইসিতে অভিযোগ দিয়েছেন আরিফ। পরদিন মঙ্গলবার ইসিতে একই অভিযোগ আরিফের বিরুদ্ধে করেছেন কামরান। এছাড়া আচরণবিধি লঙ্গণের অভিযোগে জামায়াতের প্রার্থী জুবায়েরকে মঙ্গলবার শোকজ করেছে ইসি। এই প্রথম আচরণবিধি বিষয়ে ইসির তৎপরতা দেখা গেল।