গ্যালারিতে কখনো তিনি নাচছেন। কখনো ঝিমাচ্ছেন। কখনো তাকে দেখা যাচ্ছে প্রার্থনা করছেন। কখনো দর্শকদের হাতের আঙ্গুল উঁচিয়ে অভিবাদন জানাচ্ছেন। তারপর যখন খেলা শেষ তখন দেখা গেল তাকে চেয়ার থেকে ধরে উঠিয়ে নেয়া হচ্ছে। স্টেডিয়ামের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
বিশ্বকাপে তার দিকে তাক করা অনেক ক্যামেরা। তিনি কি করছেন, তার অভিব্যক্তি কি- তা ধারণ করতেই এমন আয়োজন। তিনি যে অন্য কেউ নন! তিনি ফুটবলের রাজপুত্তুর দিয়েগো ম্যারাডোনা। ১৯৮৬ সালে বিশ্বকাপ ট্রফি তিনিই আর্জেন্টিনাকে উপহার দিয়েছিলেন। তারপর নিজে দলের কোচ হয়েছেন। তারও আগে খেলেছেন বিশ্বকাপ। কিন্তু সেই ১৯৮৬ সালের পর আর্জেন্টিনা আর সফল হতে পারে নি। তবু ম্যারাডোনা ম্যারাডোনাই। তিনিই আর্জেন্টিনার সবচেয়ে বড় ফ্যান বা ভক্ত। তিনিই বেশি উল্লাস করেছেন আর্জেন্টিনা গোল করার পর। আবার উল্টোটাও ঘটেছে। আর্জেন্টিনা গোল হজম করার পর বিমর্ষ হয়েছেন তিনি। তাকে নিয়ে এভাবেই লিখেছে আর্জেন্টিনার পত্রিকা বুয়েনস এয়ারস টাইমস। এতে বলা হয়েছে, নাইজেরিয়ার বিরুদ্ধে আর্জেন্টিনা যখন ২-১ গোলে বিজয়ি হয় তখন গ্যালারিতে ম্যারাডোনার পারফরমেন্স ছিল দৃষ্টিনন্দন। বুয়েনস এয়ারস টাইমস আরো লিখেছে, ম্যারাডোনা আর্জেন্টিনার বিশ্বকাপ মিশনের এক নম্বর ভক্ত হতে পারেন। কিন্তু আবার তিনিই প্রমাণ করেছেন তিনি সেখানে অনাকাঙ্খিত। মাঝে মাঝে বিব্রতকর অবস্থার সৃষ্টি করেছেন। হতাশা প্রকাশ করেছেন। দল যখন বিশ্বকাপ লড়াইয়ে জেতার চেষ্টা করছেন তখন তার এই অভিব্যক্তি দলের ওপর ছায়া ফেলেছে। তাই বৃটিশ টিভিতে খেলা শেষে ইংল্যান্ডের সাবেক স্ট্রাইকার গ্যারি লিনেকার বলেছেন, ম্যারাডোনা একটি হাস্যকর বিষয় হয়ে উঠছেন। এটা নিয়ে আমি ভীত। ম্যারাডোনার মতে, ভাল খবর হলো, তিনি সেইন্ট পিটার্সবুর্গ স্টেডিয়ামে এক উন্মাতাল রাত কাটানোর পর বলেছেন, তিনি ঠিক আছেন। ওই সময়ে তাকে চিকিৎসা করাতে হয়েছে। ওই খেলার সময়ে মাঝে মাঝেই তাকে দেখা গেছে চোখ বন্ধ করে বসে আছেন। নাইজেরিয়ার সঙ্গে ম্যাচ শুরুর আগে তাকে দেখা গেছে ভিআইপি বক্সের সামনে তিনি নাইজেরিয়ান একজন ভক্তের সঙ্গে নাচছেন। এসব বিষয় বিব্রতকর। গ্যালারিতে অসুস্থ হয়ে পড়া ম্যারাডোনা চিকিৎসা নেয়ার পর নিজের ইন্সটাগ্রামে লিখেছেন, আমি সবাইকে বলতে চাই ভাল আছি। নাইজেরিয়ার সঙ্গে খেলার বিরতির সময় আমার কাঁধে প্রচন্ড ব্যথা হয়। একজন চিকিৎসক আমাকে পরীক্ষা করেন। তিনি আমাকে সুপারিশ করেন যে, দ্বিতীয়ার্ধের খেলার আগেই আমার উচিত বাসায় ফিে যাওয়া। কিন্তু ম্যারাডোনা যান নি। তিনি গ্যালারিতেই বসে থাকেন। দেখেন খেলার ৮৬ তম মিনিটে মারকোস রোহো গোল করে। তখন ম্যারাডোনা তার হাতের মধ্যমা উঁচিয়ে আক্রমাণাত্বকভাবে গোল সেলিব্রেট করেন। তিনি যেন, তাকে যারা অনুসরণ করছেন তাদেরকে ওভাবে আঙ্গুল দেখাচ্ছিলেন। মাঠে থাকা নিয়ে ৫৭ বছর বয়সী ম্যারাডোনা লিখেছেন, আমি মাঠে থাকাটাই বেছে নিয়েছিলাম। কারণ, আমরা সর্বোপরি ওই খেলায় একটি রিস্কে ছিলাম। এ অবস্থায় কি করে আমি গ্যালারি থেকে চলে যেতে পারি। মারকোস রোহো গোল করার কিছুক্ষণ পর চূড়ান্ত বাঁশি বাজান রেফারি। তখনও ম্যারাডোনা সুস্থ নন। তাকে গ্যালারি ছেড়ে ভিআইপি বক্সে যেতে অন্যদের সাহায্য নিতে হয়। এর কয়েক ঘন্টা পরে তাকে বিমানবন্দরে হাস্যোজ্বল দেখা যায়। এমন ছবি টুইটারে প্রকাশ করেছেন কলম্বিয়ান টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক। ম্যারাডোনা তার ইন্সটাগ্রামের ম্যাসেজের শেষে লিখেছেন, আমি সবার প্রতি চুম্বন উপহার দিয়েছি। সমর্থন দেয়ার জন্য ধন্যবাদ।