যানজট আর ভাঙাচোড়া সড়কের কারণে দুর্ভোগের শেষ নেই ঢাকা-বগুড়া মহাসড়কের যাত্রীদের। এই সড়কে রওনা হয়ে যানজটের কারণে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারছে না কেউই।
বিকল্প পথ হিসেবে ট্রেন যোগাযোগ থাকলেও বরাদ্ধ আসন রয়েছে দুটি পৃথক ট্রেনে মাত্র ৭৩টি। অথচ গত কয়েক বছরে বগুড়া থেকে ঢাকাগামী যাত্রীর সংখ্যা ৪ গুণ বাড়লেও আসন সংখ্যা বাড়েনি। ঢাকাগামী যাত্রীদের মহাসড়ক হয়ে বাসের উপর নির্ভর করে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে শতশত যাত্রী।
জানা যায়, বগুড়া থেকে মহাসড়কে ঢাকার দুরুত্ব প্রায় ২০০ কিলোমিটার। এই পথ পাড়ি দিতে সাধারণত সময় লাগে ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা। যানজট হলে এ পথে সময় লাগে ১০ থেকে ১১ ঘণ্টা। কখনো কখনো ১২ ঘণ্টারও বেশি সময় লাগে। ঈদের সময় উভয় পথে সময় লাগে ১৮-২০ ঘন্টারও বেশি। বাসের ভাড়া সাড়ে ৩ শত টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৫০০ টাকা।
বগুড়া থেকে প্রতিদিন বাস চলাচল করে দেড় শতাধিক। আর কাউন্টার রয়েছে অর্ধশত। বাকিবাসগুলো বিভিন্ন বাস স্টপ থেকে ছেড়ে যায়।
অপরদিকে বগুড়া রেলওয়ে স্টেশন থেকে দুটি ট্রেন ছেড়ে যায়। দুপুর দেড়টায় লালমনি এক্সপ্রেস বগুড়া স্টেশন থেকে ছেড়ে রাত্রি সাড়ে ৮টায় ঢাকা কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে যায়। আপর ট্রেন টি রংপুর এক্সপ্রেস রাত্রি ১১ টায় ছেড়ে ভোর ৬টায় ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছে যায়। প্রায় ৪০০ কিলোমিটার ঘুরে ৮ ঘণ্টায় ঢাকায় নামিয়ে দেয় যাত্রীদের। ট্রেনের ভাড়া ৩০০ টাকা থেকে শুরু করে মান অনুযায়ি সরকারিভাবে ভাড়া নির্ধারণ করা রয়েছে। ট্রেনের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকায় সাধরণ চেয়ার কোচে যাত্রীদের চাপ বেশি। একদিকে নিরাপত্তা অন্যদিকে সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে ট্রেনের আসন চাহিদা বেড়েছে। বগুড়া স্টেশন থেকে দুটি ট্রেনের মধ্যে রংপুর এক্সপ্রেসে আসন বরাদ্ধ রয়েছে মাত্র ৪০টি। আর লালমনি এক্সপ্রেসে রয়েছে ৩৩টি। অথচ বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনে দুই বেলায় প্রতিদিন ২০০ ট্রেনযাত্রী ভিড় করে ঢাকা যাওয়ার জন্য। কিন্তু তারা ট্রেনের আসন না পেয়ে ফেরত চলে যায়। আবার কেউ কেউ বিনা আসনে টিকিট ক্রয় করে ঢাকায় যাচ্ছেন।
বগুড়া শহরের ইন্সুরেন্স অফিসের কর্মকর্তা শরীফ মজুমদার জানান, তিনি ঢাকায় ট্রেনে করে যাতায়াত করেন। মহাসড়কে যানজট থাকে বলে ট্রেনে চলাচল করনে। ট্রেনের টিকিট নিতে হলে ২ থেকে ৩দিন আগে থেকে যোগযোগ করে ট্রেনের টিকিট সংগ্রহ করতে হয়। বগুড়া থেকে ঢাকা যাওয়ার ট্রেনে সাধারণ যাত্রীদের চাপ রয়েছে।
বগুড়া রেলওয়ে স্টেশনের স্টেশন মাস্টার বেঞ্জুরুল ইসলাম জানান, দুটি ট্রেনে বগুড়া স্টেশন থেকে ঢাকা যাওয়ার জন্য ৭৩টি আসন বরাদ্দ রয়েছে। এর বেশি বরাদ্দ নেই। এই আসনের বিপরীতে প্রতিদিন তার চাহিদা থাকে আনুমানিক ২০০টি টিকিট। ট্রেনের ভ্রমণ আগের থেকে অনেক উন্নত হয়েছে। ট্রেনে নিরাপত্তা এবং সময়মত গন্তব্যে পৌঁছাতে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।
বগুড়া সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সাধারণ সম্পাদক আবু সাঈদ সিদ্দিকী জানান, বগুড়া একটি অর্থনৈতিক জোন। এ জেলায় প্রতিদিন যেমন উত্তরের মানুষগুলো ভিড় করে তেমনি বগুড়া থেকে ঢাকায় যাচ্ছে হাজারো মানুষ। এই মানুষগুলো সবাই বাসের টিকিট পায় না। ট্রেনে করে অনেকেই যাচ্ছে নিরাপত্তার স্বার্থে। কিন্তু এই ট্রেনের টিকিটও সংকট থাকে। জেলার মানুষের চাহিদা মত আসন বরাদ্ধ দেয়া হোক বগুড়ায়।