১৯৩৮ সালে একবার রঙ হারিয়েছিল বিশ্বকাপ। ৮০ বছরের ব্যবধানে ২০১৮ সালে বিশ্বকাপ আরও একবার বিবর্ণ হলো।
১৯৩৮ সালে তৃতীয় বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছিল জার্মানি। তখন ফুটবল মহাযজ্ঞ সবে পাখা মেলা শুরু করেছে, তার ওপর হিটলারের জার্মানি বিশ্ব শাসনের পাঁয়তারা করছে, এমন অবস্থায় বিশ্বকাপ থেকে ফুটবল দলের বিদায় খুব বেশি প্রভাব ফেলেনি জার্মানদের ওপর। কিন্তু রাশিয়া বিশ্বকাপে ম্যানুয়েল নিওয়ার, থমাস ক্রোজদের বিদায়ে হৃদয় ভেঙে চৌচির হয়ে গেছে জার্মানির। বিষাদের কালো মেঘে ঢাকা পড়েছে বার্লিন থেকে শুরু করে মিউনিখ নগরী পর্যন্ত, এমনকি শহরতলিগুলোও। ১৯৫৪, ১৯৭৪, ১৯৯০ ও ২০১৪ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির প্রথম র্াউন্ড থেকে ছিটকে পড়ার বেদনায় মুষড়ে পড়েছেন পাওয়ার ফুটবলের সমর্থকরা। গ্রুপে মেক্সিকো এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কাছে হারে বিস্ময়বিমূঢ়তা, লজ্জা, ক্ষোভ আর দুঃখকাতরতা গ্রাস করেছে জার্মানিকে। বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা প্রথম রাউন্ড থেকে বিদায় নিয়েছে এবারই প্রথম নয়। ১৯৫৮ ও ১৯৬২ সালে বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল ও ১৯৬৬ সালে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপে প্রথম রাউন্ডের বেড়া টপকাতে পারেনি। ২০০৬ সালের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ইতালির বিশ্বকাপ থেমে গিয়েছিল প্রথম রাউন্ডে ২০১০ সালে দক্ষিণ আফ্রিকা বিশ্বকাপে।
২০১৪ সালে ব্রাজিল বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে আটকে গিয়েছিল আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন স্পেন। বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের বিদায়ে বারবার রঙ হারিয়েছে বিশ্বকাপ। ছন্দ হারিয়েছে। কিন্তু এবারের মতো বেদনায় মুষড়ে পড়েননি কেউ। প্রথম ম্যাচে মেক্সিকান সে াতে ভেসে গিয়েছিল চারবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা। প্রথম ম্যাচে হারলেও আশা টিকেছিল জোয়াকিম লো’র জার্মানির। পরের ম্যাচে সুইডেনের বিপক্ষে ২-১ গোলের জয়টি আসে ক্রোজের অন্তিম মুহূর্তের জাদুতে। শেষ ম্যাচে এশিয়ার ‘সুপার পাওয়ার’ দক্ষিণ কোরিয়ার বিপক্ষে খেলতে নামার আগে পঞ্চম বিশ্বকাপের স্বপ্ন বুকে ধারণ করে টিভি স্ক্রিনের সামনে বসেছিল হাজার হাজার জার্মান সমর্থক। তাদের বিশ্বকাপ স্বপ্ন টিকেছিল ৯০ মিনিট। অতিরিক্ত সময়ের ৬ মিনিটে স্বপ্ন ভেঙে খান খান করে দেয় কোরিয়া। জার্মানির বিপক্ষে বরাবরই দুরন্ত ফুটবল খেলে থাকে কোরিয়া। এবারও জার্মানির গতির ফুটবলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে জয় নিয়ে দেশে ফিরছে কোরিয়া। ম্যাচটি দেখতে বার্লিন স্কোয়ারে উপস্থিত হয়েছিলেন হাজার হাজার সমর্থক। জার্মানি পতাকা ও জার্সি গায়ে চড়িয়ে খেলা দেখতে বসেছিলেন প্রিয় দলকে দ্বিতীয় রাউন্ডে নিয়ে যেতে। ম্যাট হামেলস, ক্রোজ, মুলারদের আক্রমণে শুধু বার্লিন নয়, মিউনিখসহ জার্মানির বড় বড় শহরগুলোয় সবাই খেলা দেখতে শুরু করে আনন্দমুখর পরিবেশে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে উন্মাতাল হয়ে উঠছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু ৯২ ও ৯৬ মিনিটে দুই গোলের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন সবাই। ম্যাচ শেষ স্কোয়ারে হারের কষ্টে উপস্থিত সবাই অবিশ্বাসের দৃষ্টিতে তাকিয়েছিলেন জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে। হারের বেদনায় সবাই কাঠগড়ায় তুলেছেন কোচ লো’কে। জার্মানি দলের কোচ হিসেবে লো’কে চাচ্ছেন না ৬৭ শতাংশ জার্মান। তাকে চাচ্ছেন মাত্র ২১ শতাংশ। কোনো সন্দেহ নেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন জার্মানির বিদায়ে রঙ হারিয়েছে রাশিয়া বিশ্বকাপ। বিপরীতে এটাও সত্যি, জার্মানির বিদায়ে আর কোরিয়ার অবিশ্বাস্য জয়ে জিতেছে ফুটবল।