ঢাকা: গাজীপুর সিটি নির্বাচনে কোনো ধরনের বিশৃঙ্খলা হবে না বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম। বিএনপি আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, বিএনপি গাজীপুরের পুলিশ সুপার হারুন অর রশিদকে প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছে। তারা দাবী জানালেই তা মেনে নিতে হবে এমন কোনো কথা নেই।
আজ সোমবার দুপুরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধিদল আজ সিইসির সঙ্গে বৈঠক করে।
গাজীপুরের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থীকে দেখা গেছে পুলিশের গাড়িতে চড়ে তিনি নির্বাচনী এলাকায় প্রচার চালাচ্ছিলেন—এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা একেবারে ডাহা মিথ্যা কথা। তিনি এতটা কাণ্ডজ্ঞানহীন হবেন যে পুলিশের গাড়িতে চড়বেন? তাঁর কি গাড়ির অভাব আছে নাকি?’
গাজীপুরের নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে নির্বাচন কমিশন সন্তুষ্ট জানিয়ে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘নির্বাচনী পরিবেশ নিয়ে আমরা যেমন সন্তুষ্ট, নির্বাচন কমিশনও সন্তুষ্ট। তাঁরা নিজেরাই বলেছেন, সেখানে অত্যন্ত সুন্দর পরিবেশ বিরাজ করছে। অত্যন্ত বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ দেখছেন কমিশন।’
নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করবেন উল্লেখ করে এইচ টি ইমাম বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নির্বাচন নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করছে।’
পুলিশ সুপার প্রসঙ্গে এই উপদেষ্টা বলেন, ‘বিএনপি এসপি হারুনকে প্রত্যাহার করতে বললেই করতে হবে এমন তো কোনো কথা নেই। হারুনের বিষয়ে নির্দিষ্ট করে প্রমাণ থাকতে হবে তো। কেন খারাপ, সেটাও বলতে হবে। প্রমাণ ছাড়া এসব বললে তো হবে না।’
বিএনপি বিভিন্ন ধরনের কথা বলে আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সিইসি নিজেই ডিআইজি ও পুলিশ সুপারকে এমন কড়া নির্দেশ দিয়েছেন, যাতে সবাই ভয়ে আছেন। এবং আমি মনে করি না, এখানে কোনো ধরনের ঝামেলা হওয়ার সুযোগ আছে।’
এ ছাড়া গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে নেতিবাচক খবর প্রকাশ না করার জন্য সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানান আওয়ামী লীগের এই উপদেষ্টা।
এইচ টি ইমাম বলেন, ‘আপনারা (সাংবাদিকরা) সব সময় যদি নেগেটিভ নিউজ করতেই থাকেন, তাহলে জাতি বিভ্রান্ত হবে। অনেকেই বিভ্রান্ত হবেন। তা না করে যেটি ভালো সেটি করুন।’
আওয়ামী লীগের প্রতিনিধিদলে ছিলেন দলের কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য রিয়াজুল কবীর কাউসার, ঢাকা বিভাগের আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল, সাবেক সচিব রাশেদুল ইক এবং আওয়ামী লীগের উপদপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।
প্রস্তুত ইসি
আগামীকাল গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ৮টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ চলবে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ভোটাররা যাতে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন নির্বাচন কমিশন (ইসি) ইতোমধ্যে এর সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে। নির্বাচনের দিন ভোট দেয়ার সুবিধার্থে সংশ্লিষ্ট এলাকায় সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হয়েছে এবং এলাকার গার্মেন্টসসহ অন্যান্য শিল্প কারখানাও বন্ধ থাকবে।
ইসি সচিবালয়ের সচিব হেলালুদ্দীন আহমদ বাসসকে বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের সকল প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। ভোটাররা যাতে নির্বিঘেœ ভোট কেন্দ্রে এসে ভোট দিতে পারেন তা নিশ্চিত করা হয়েছে। নির্বাচনে কোন ধরনের অনিয়ম বরদাস্ত করা হবে না বলে তিনি জানান।
এবারই প্রথম ভোট গ্রহণ পরিস্থিতির তথ্য তাৎক্ষণিক জানার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রিসাইডিং কর্মকর্তারা মোবাইল এসএমএসের মাধ্যমে দু’ঘণ্টা পরপর প্রয়োজনীয় সার্বিক তথ্য কমিশন সচিবালয়কে জানাবেন। কোনো কেন্দ্রে জাল ভোট বা সিল মারার ঘটনা ঘটলে বা তথ্য পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে কমিশন। ভোট কেন্দ্রে কোনো অঘটন বা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে গেলে তা তাৎক্ষণিকভাবে কর্মকর্তারা এসএমএসের মাধ্যমে কমিশনকে জানাবেন। এক্ষেত্রে কমিশন ঢাকায় বসে এসব এসএমএসের তথ্য অনুযায়ী তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবে।
ভোটের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট কার্যক্রমের গতি-প্রকৃতি, ভোটার, প্রার্থী-কর্মী-সমর্থকদের গতিবিধি এবং সর্বোপরি নির্বাচনী কর্মকর্তাদের দায়িত্ব পালনসহ সব কিছু সাধারণ পোশাকে ঘুরে ঘুরে পর্যবেক্ষণ করবেন ইসির নীরব পর্যবেক্ষকরা। ভোটে কোনো ধরনের অনিয়ম দেখলে তাৎক্ষণিক হস্তক্ষেপ, রিটার্নিং কর্মকর্তাকে অবহিত এবং প্রয়োজনে তারা কমিশনকে ঘটনার তথ্য জানাবেন।
নির্বাচনের নিরাপত্তায় মাঠে টহল দিচ্ছেন কয়েক হাজার বিজিবি, র্যাব ও পুলিশ সদস্য। আচরণবিধি দেখভাল করতে নির্বাচনী এলাকায় রয়েছেন নির্বাহী ও জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট।
গত ১৫ মে গাজীপুর ও খুলনা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট গ্রহণের কথা থাকলেও আইনি জটিলতায় গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যায়। পরে আপিল বিভাগের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে এ সিটি নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত বড় কোনো সহিংস ঘটনা না ঘটায় স্থানীয় ভোটাররা স্বস্তিতে রয়েছেন।
নির্বাচন কমিশন সূত্র জানায়, দেশের সবচেয়ে বেশি ভোটার গাজীপুর সিটিতে। এ সিটি কর্পোরেশনে ১১ লাখ ৩৭ হাজার ৭৩৬ জন ভোটার রয়েছেন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ৫ লাখ ৬৯ হাজার ৯৩৫ জন ও নারী ভোটার ৫ লাখ ৬৭ হাজার ৮০১ জন। এ নগরীতে নতুন ভোটার ১ লাখ ১১ হাজার।
রিটার্নিং কর্মকর্তা রকিব উদ্দিন বাসসকে জানান, নির্বাচনের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো ও উৎসবমুখর রয়েছে। ভোট গ্রহণের সব প্রস্তুতি শেষ করা হয়েছে। আজ প্রতিটি কেন্দ্রে ভোট গ্রহণের মালামাল পৌঁছে যাবে। ভোটারদের নিরাপত্তায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সদস্য কাজ করবেন। তিনি নির্ভয়ে পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেয়ার জন্য ভোটারদের প্রতি আহবান জানিয়েছেন।
নির্বাচন উপলক্ষে যে কোনো পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এই সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এ নির্বাচনে পুলিশ, র্যাব, বিজিবি ও আনসারের প্রায় সাড়ে ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন করা হয়েছে।
এর মধ্যে কেন্দ্র পাহারায় থাকছেন পুলিশ, আনসার ও আর্মস পুলিশ ব্যাটালিয়নের সমন্বয়ে কয়েক হাজার সদস্য। কেন্দ্রের বাইরে ২৯ প্লাটুন বিজিবি, র্যাবের ৫৮টি টিম এবং পুলিশের ৫৭টি মোবাইল ও ২০টি স্ট্রাইকিং ফোর্স মোতায়েন করা হচ্ছে। গুরুত্বপূর্ণ ভোট কেন্দ্র পাহারায় ২৪ জন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য মোতায়েন করা হবে। বাকি সাধারণ ভোট কেন্দ্রে ২২ জন করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য থাকবেন।
রোববার মধ্যরাত থেকে নির্বাচনী প্রচারণা বন্ধ এবং মোটরসাইকেল চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। আজ মধ্যরাত থেকে সব ধরনের যানবাহন চলাচলের ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করা হবে। তবে হাইওয়ে ও জরুরি সেবা দেয়ার গাড়ি এর আওতামুক্ত থাকবে। এর আগে শনিবার মধ্যরাত থেকে বহিরাগতদের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন এলাকায় অবস্থান নিষিদ্ধ করা হয়।
গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে সাতজন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এরা হলেন- আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মো. জাহাঙ্গীর আলম (নৌকা), বিএনপির মো. হাসান উদ্দিন সরকার (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের ফজলুর রহমান (মিনার), ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. নাসির উদ্দিন (হাতপাখা), বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্টের মো. জালাল উদ্দিন (মোমবাতি), বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির কাজী মো. রুহুল আমিন (কাস্তে) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ফরিদ আহমদ (টেবিল ঘড়ি)।
৫৭টি সাধারণ ও ১৯টি সংরক্ষিত ওয়ার্ড নিয়ে গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন গঠিত। এসব ওয়ার্ডে কাউন্সিল পদে ৩৩৮ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এর মধ্যে ৫৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ২৫৪ জন। এছাড়া সংরক্ষিত ১৯টি ওয়ার্ডে ৮৪ নারী কাউন্সিলর নির্বাচন করছেন।
এ নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন ৮ হাজার ৭০৮ জন। এর মধ্যে প্রতি কেন্দ্রে একজন প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ৪২৫ জন, প্রতিটি কক্ষে একজন সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার হিসেবে ২ হাজার ৭৬১ জন এবং প্রতিটি কক্ষে দু’জন পোলিং অফিসার হিসেবে ৫ হাজার ৫২২ জন থাকবেন।
এই সিটিতে ৬ কেন্দ্রে ইভিএমে ভোট নেয়া হবে এবং ঝুঁকিপূর্ণ ও স্পর্শকাতর বিবেচনায় সিটির কয়েকটি ভোট কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরার সহায়তায় নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কমিশন।