চোখের ঘুম-ঘুম ভাব কেড়ে নিয়ে মস্তিষ্ক সজাগ করে তুলতে পারে একটি বিশেষ রং। রং-টির নাম সায়ান- সবুজ আর নীল মেশালে যে রং হয় সে রকম।
জীব বিজ্ঞানীদের মতে, এই রং-এর মধ্যে এমন একটি গোপন উপাদান আছে, যেটা এক ঝটকায় মানুষের ঘুম তাড়িয়ে মস্তিষ্ককে সজাগ করে তুলতে পারে।
যুক্তরাজ্যের ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক জানিয়েছেন, চোখের সামনে এই সায়ান রং বেশি মাত্রায় থাকলে মানুষের ঘুম কমে যায়। অন্যদিকে এই রং সরিয়ে রাখলে ঘুমিয়ে পড়া সহজ হয়। এই রং-এর পরিবর্তন যদি তেমন একটা দৃশ্যমানও না হয় তাও এর প্রভাব অনুভব করা যায়।
গবেষকরা জানান, তারা কম্পিউটার এবং মোবাইলের স্ক্রিনের জন্য এমন কোন জিনিষ তৈরি করতে চান যেটা দিয়ে সায়ানের রং-এর মাত্রা কমানো বাড়ানো যাবে। তারা এরইমধ্যে ঘুমের সঙ্গে রং-এর একটি সম্পর্ক স্থাপন করেছেন। বিশেষ করে বিভিন্ন ডিভাইস থেকে যে নীল রং-এর আলো বিচ্ছুরণ হয় সেটা ঘুমের বিলম্ব করে বলে চিহ্নিত করেছে। এ কারণেই স্মার্টফোন বা ল্যাপটপের সেটিংসে নাইট মুড নামে একটি অপশন থাকে।
ম্যানচেস্টার বিশ্ববিদ্যালয়ের জীব বিজ্ঞানীরা সুইজারল্যান্ডের বাসেন শহরে একটি গবেষণা পরিচালনা তারা জানান,
যখন মানুষ চোখের সামনে কম বা বেশি পরিমাণ সায়ান রং দেখতে পায় তখন গবেষকরা তাদের লালার নমুনা থেকে ঘুমের জন্য দায়ী হরমোনের মাত্রার তারতম্য পরিমাপ করতে পারে।
অধ্যাপক রব লুকাস জানান, কারো জন্য এটা জরুরি নয় যে সে নিজে রং-এর পার্থক্য দেখতে পারছেন কি না। খালি চোখে এই পার্থক্য দৃশ্যমান না হলেও শরীর এই পরিবর্তনের কারণে কোন প্রতিক্রিয়া দেখাচ্ছে কিনা সেটা বেশি জরুরি। সায়ান রং-এর সাথে মিলিয়ে যদি অন্য কোন রং তৈরি করা হয় তাহলে সেটাও মানুষের ঘুমে প্রভাব ফেলতে পারে।
সবুজের এমন বিভিন্ন শেডে সায়ান রঙ মেশানো থাকতে পারে। সেক্ষেত্রে সায়ানের কাছাকাছি অন্য কোন রং মিশিয়ে কাঙ্ক্ষিত রং তৈরি করা যেতে পারে।
যদি মানুষকে জাগিয়ে রাখার লক্ষ্য থাকে, যেমন যেসব কাজে রাতের বেলা প্রতি মুহূর্তে সতর্ক থাকা প্রয়োজন।
সেক্ষেত্রে কম্পিউটারের স্ক্রিনে সায়ান রং বা এর সঙ্গে মিশিয়ে তৈরি করা অন্য কোন রং রাখার পরামর্শ দিয়েছেন গবেষকরা। তবে যদি লক্ষ্য থাকে ঘুম বাধাগ্রস্ত হওয়ার সমস্যা কমানো তাহলে কম্পিউটারে স্ক্রিনে এমন রং রাখতে হবে যেখানে সায়ানের কোন মিশ্রণ নেই।
গবেষকরা বলেছেন সায়ান রঙ ব্যবহার না করেই একই ধরণের রঙ তৈরি করা সম্ভব। যেখানে কিছু সিনেমার পর্দায় সায়ান রং ব্যবহার করা হয়েছে এবং কোনটিতে হয়নি। এতে দর্শকদের লালায় মেলাটোনিন হরমোনের মাত্রা এবং এতে ঘুমের তারতম্যে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়।
অধ্যাপক রব লুকাস এবং ডক্টর এনেটে অ্যালেন নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষক দলটি জানায়, এই আবিষ্কারের বিষয়ে কম্পিউটার, টেলিভিশন বা স্মার্টফোনের স্ক্রিনে বিশেষ অ্যাপ্লিকেশন থাকতে পারে।
অধ্যাপক লুকাস বলেন, ‘এই গবেষণা থেকে জানতে পেরেছি সায়ান রং পরিবর্তন না করে শুধু এই রং থেকে বিচ্ছুরিত আলোর সংবেদনশীলতা বা লাইট এক্সপোজার নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে আমরা কতটা ঘুম-ঘুম বোধ করবো সেটাকে প্রভাবিত করতে পারি। ‘সূত্র: বিবিসি বাংলা