গ্রাম বাংলা ডেস্ক: আগামী অর্থবছর থেকেই সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়বে। সমাজে বসবাসরত বিশাল সংখ্যক অবসরভোগীর পাঁচ লাখ টাকা পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের ওপর বিনিয়োগে আর কোনো কর দিতে হবে না। মহিলাদের করমুক্ত আয়ের সীমা বাড়িয়ে দেয়া হলো। নতুন যারা কোম্পানি করবেন বা যেসব কোম্পানি শেয়ার বাজারে নেই তাদের করপোরেট কর কমিয়ে দেয়া হয়েছে ‘পাক্কা’ আড়াই শতাংশ। কৃষি খাতে বিনিয়োগকারীদের করমুক্ত আয়ের সীমাও বাড়িয়ে দেয়া হয়েছে চার গুণ। তৈরী পোশাক খাতের ব্যবসায়ীদের খুশি রাখতে হবে। তাই তাদের দেয়া বিদ্যমান সুবিধা আগামী ৩০ জুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে। আর বাজার নিয়ন্ত্রণ ও সাধারণ মানুষকে ‘খুশি’ রাখতে নিত্যপ্রয়োজনীয় ১৮টিরও বেশি পণ্য লোকাল এলসি করের আওতার বাইরে রাখার ঘোষণা দেয়া হয়েছে। একই সাথে এলসির কমিশন করও কমিয়ে দেয়া হয়েছে। আর ‘চুপি-চুপি’ কালো টাকা সাদা করার সুযোগটাও রেখে দেয়া হলো আগের মতো।
এ বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের নতুন বাজেটে। ফলে মনেই হতে পারে এ যেন নির্বাচনী বাজেট!। তা হলে কি সরকার মনে করছে একটি মধ্যবর্তী নির্বাচন আসন্ন? অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতির কী দশা হবে, সেই চিন্তা দূরে থাক, আপাতদৃষ্টিতে সবাইকে খুশি করার একটি চেষ্টা করা হয়েছে এই বাজেটে। মুখে স্বীকার না করলেও সবার অংশগ্রহণমূলক একটি নির্বাচনে ভোটারদের মন জয় করার জন্য বাজেটে তো একটি প্রচেষ্টা নিতেই হয়। ব্যাংক থেকে অধিক হারে ঋণ নিয়ে হলেও এই ‘প্রচেষ্টা’কে সমুন্নত রাখার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে বাজেটে। অদূর ভবিষ্যতে অর্থনীতির কী দশা হয় সেই চিন্তা দূরে থাক। ঋণের ‘সুদ’ পরিশোধ করতে করতে রাষ্ট্র ‘ফতুর’ হয়ে যাক। তাতে কার বা কী আসে যায়! একটি শুভঙ্করের ফাঁকি তো দেয়া গেল।
নিজের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ‘৮০ অতিক্রান্ত’ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত গতকাল জাতীয় সংসদে এ ধরনের একটি বাজেট প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন। নতুন ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের বাজেটের আকারটি নির্ধারণ করা হয়েছে দুই লাখ ৫০ হাজার ৫০৬ কোটি টাকা। বিশাল এই বাজেটে ঘাটতিই ধরা হয়েছে ৬৭ হাজার ৫৫২ কোটি টাকা, যা জিডিপির ৫ ভাগ। কিভাবে এই ঘাটতি মোকাবেলা করা হবে। ঘাটতি মোকাবেলায় অভ্যন্তরীণ উৎস থেকে ঋণ নেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে ৪৩ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৩১ হাজার ২২১ কোটি টাকাই নেয়া হবে ব্যাংক থেকে। অর্থাৎ এই পরিমাণ অর্থ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর পরিকল্পনা করা হয়েছে। বাকি ১২ হাজার ৫৬ কোটি টাকা নেয়া হবে সঞ্চয়পত্র ও অন্যান্য ব্যাংকবহির্ভূত খাত থেকে। ঘাটতি মোকাবেলায় বিদেশী উৎস থেকে অর্থ নেয়ার প্রাক্কলন করা হয়েছে ২৪ হাজার ২৭৫ কোটি টাকা। যদি এই পরিমাণ অর্থ না পাওয়া যায় তবে ব্যাংক থেকে আরো ঋণ নিয়ে বাজেট ঘাটতি মেটানোর কাজটি করতে হবে। যার অবশ্যম্ভাবী ফলটি হচ্ছেÑ দেশের ‘ইঞ্জিন’ হিসেবে বিবেচিত বেসরকারি খাত ঋণ বঞ্চনার শিকার হবে।
গতকাল বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে অর্থমন্ত্রী যখন বাজেট বক্তৃতা শুরু করেন তখন সংসদ নেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদও সংসদে উপস্থিত ছিলেন। আর প্রেসিডেন্ট গ্যালারিতে বসে বাজেট বক্তব্য শোনেন রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। এর আগে মন্ত্রিসভার বৈঠকে ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটটি অনুমোদন করিয়ে নেয়া হয়।
বাজেট বক্তৃতায় অনেক কিছুই অস্পষ্ট : ‘অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় সম্ভাবনাময় আগামী পথে বাংলাদেশ’ শীর্ষক বাজেট বক্তৃতায় অনেক কিছুই ছিল অস্পষ্ট। মোট ১৬৩ পৃষ্ঠার বাজেট বক্তৃতায় আগামী অর্থবছরের প্রবৃদ্ধি লক্ষ্যমাত্রা সাত দশমিক ৩ শতাংশ ধরে হলেও মূল্যস্ফীতি কত হবে তা বলা হয়নি। শুধু আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে মূল্যস্ফীতি ৭ শতাংশের নিচে থাকবে। অন্যান্য বার বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের বিপরীতে কত বরাদ্দ দেয়া হয়েছে তা ধারাবাহিক অনুচ্ছেদে দেয়া হতো। কিন্তু এবার তার ব্যতিক্রম। শুধু একটি ‘চার্ট’ দিয়ে সব ব্যয় বরাদ্দ দেখানো হয়েছে। বহুল আলোচিত জেলা বাজেট বা এমপিওভুক্তি নিয়েও বাজেট বক্তৃতায় তেমন কিছু নেই। শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপনের ক্ষেত্রে আগামী অর্থবছরে বিশেষ একটি বরাদ্দ রাখা হয়েছে বলে বাজেট বক্তৃতায় বলা হয়েছে। কিন্তু বরাদ্দের অঙ্কটি উল্লেখ করা হয়নি।
বাজেট বক্তৃতায় দর্শন ও প্রতিশ্রুতির ফুলঝুরি : বাজেটে অর্থমন্ত্রী সরকারের বেশ কয়েকটি দর্শনের কথা বলেছেন। কিন্তু তার বাস্তবায়ন কিভাবে হবে তা বলেননি। অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন, অনেকে এর সাথে সম্পর্ক খুঁজে পেতে পারেন আগাম নির্বাচনের সাথে। কারণ নির্বাচনের আগে সাধারণ এই ধরনের বাজেট দেয়া হয়ে থাকে। সেখানে মানুষজনকে খুশি করার জন্য অনেক প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়। বাস্তবায়নযোগ্য হোক বা না হোক। অনেকের কাছে এই প্রতিশ্রুতি শুধুই প্রতিশ্রুতি, অনেকটা ‘ছেলে ভোলানো’ কথা! এসব বাজেটে থাকে কথার ফুলঝুরি। অর্থমন্ত্রীর এবারকার বাজেট বক্তৃতায় তারই প্রতিফলন লক্ষ করা গেছে।
শুভঙ্করের ফাঁকি : বাজেটে রয়েছে অনেকে গোঁজামিল, যাকে শুভঙ্করের ফাঁকি হিসেবে ধরা যেতে পারে। জিডিপি প্রবৃদ্ধির কথাই ধরা যাক। আগামী অর্থবছরে জিডিপি প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত দশমিক ৩ শতাংশ। কিন্তু এই প্রবৃদ্ধি অর্জন করতে হলে বিনিয়োগ হতে হবে জিডিপির অংশ হিসেবে ৩৪ শতাংশ। কিন্তু বর্তমানে যা রয়েছে ২৯ শতাংশ। এক বছরের ব্যবধানে কী এমন জাদুকরি ঘটনা ঘটবে যাতে করে বিনিয়োগ বাড়বে পাঁচ শতাংশ। অতীতে যা হয়নি। কিন্তু অর্থমন্ত্রী তার কোনো ব্যাখ্যাই করেননিÑ কেন আগামী বছর ৭ দশমিক ২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হবে।
জিডিপির হিসেবে রয়েছে গোঁজামিল : বাজেট বক্তৃতায় আরো এক জায়গায় গোঁজামিল রয়েছে। তা হচ্ছে জিডিপি হিসেবে ভিত্তি বছর কোনটিকে বেছে নেয়া হবে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস) জিডিপি ভিত্তিবছর হিসেবে ২০০৫-২০০৬ অর্থবছরকে বেছে নিয়েছে। সে অনুযায়ী তারা চলতি অর্থবছরে জিডিপির প্রাক্কলন করেছে ৬ দশমিক ১২ শতাংশ। কিন্তু অর্থ মন্ত্রণালয় জিডিপির ভিত্তি বছর হিসেবে আগেরকার ১৯৯৫-১৯৯৬ সালকে এখন পর্যন্ত বেছে নিয়েছে। ফলে বিবিএসের সাথে অর্থ মন্ত্রণালয়ের জিডিপির আকারের কোনো মিল নেই।
অর্থমন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যানে আগামী ২০১৪-২০১৫ অর্থবছরে দেশের জিডিপির আকার প্রক্ষেপণ করা হয়েছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। কিন্তু পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) পরিসংখ্যানে চলতি ২০১৩-২০১৪ অর্থবছরের জিডিপির আকারই দেখানো হয়েছে ১৩ লাখ ৫০ হাজার ৯২০ কোটি টাকা। যেখানে চলতি অর্থবছরের জন্য অর্থ বিভাগের বাজেট সংক্ষিপ্তসারে জিডিপি আকার ধরা রয়েছে ১১ লাখ ৮৮ হাজার ৮০০ কোটি টাকা।
অর্থ বিভাগের প্রক্ষেপণ অনুযায়ী আগামী অর্থবছরে জিডিপির প্রবৃদ্ধি ধরা হয়েছে সাত দশমিক তিন শতাংশ। এই প্রবৃদ্ধি ধরে বিবিএসের পরিসংখ্যান অনুসরণ করলে আগামী অর্থবছরে জিডিপির আকার হওয়ার কথা ১৪ লাখ ৪৯ হাজার ৫১৮ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থ বিভাগের পরিসংখ্যানে জিডিপির আকার দেখানো হচ্ছে ১৩ লাখ ৩৯ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এই হিসেবে ধরা হলে, আগামী অর্থবছরের জিডিপির প্রবৃদ্ধি ‘শূন্য’ শতাংশ হওয়ার কথা। আর চলতি অর্থবছরে এই জিডিপি প্রবৃদ্ধি হার ছয় শতাংশের নিচে নেমে যাবে। অর্থমন্ত্রী তার বাজেট বক্তৃতায় ভিত্তিবছর ভিন্নতা স্বীকারও করেছেন। কিন্তু নিজের সুবিধা বছরকে বেছে নিয়েছেন জিডিপি হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে। অনেকে একে ‘নৈতিক অসাধুতা’ হিসেবেও দেখতে পারেন।
পিপিপি আইনই হয়নি, তবুও ৩৪ প্রকল্প : সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব (পিপিপি) একটি জনপ্রিয় শব্দ। সরকারি-বেসরকারি উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে এর সাহায্যে। এ নিয়ে বিস্তর কথাও হয়েছে গত ছয়-সাত বছর ধরে। কিন্তু এখন পর্যন্ত এ জন্য কোনো পিপিপি আইনই তৈরি করা সম্ভব হয়নি। তাতে কী, এর আওতায় প্রকল্প নিতে তো আর দোষ নেই। হয়েছেও তো তাই, এবার বাজেটে উল্লেখ করা হয়েছে পিপিপির আওতায় ৩৪টি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পগুলোর বিপরীতে ‘ঢাউস’ বরাদ্দও রাখা হয়েছে। কিন্তু প্রকল্পে বেসরকারি বিনিয়োগই বা কী হবে, কবে নাগাত প্রকল্পগুলো শেষ হবে তার কিছুই উল্লেখ করা হয়নি।
সরকারি চাকরিজীবীদের বেতন বাড়ছে : বাজেট বক্তৃতায় অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘দ্রব্যমূল্যের সাথে সামঞ্জস্য রেখে যথোপযুক্ত জীবনমান নিশ্চিত করার জন্য প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যথাযথ বেতনভাতা প্রদানের জন্য বেতন ও চাকরি কমিশন, ২০১৩ গঠন করা হয়েছে। আশা করছি চলতি বছরের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে কমিশন তাদের প্রতিবেদন সরকারের কাছে দাখিল করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আমরা ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকেই নতুন বেতন কাঠামো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করব। পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সরকারি মালিকানাধীন ব্যাংকগুলোর জন্যও স্বতন্ত্র বেতনভাতা প্রবর্তনের বিষয়টিও বর্তমানে চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। নতুন স্কেলে বেতনভাতা নির্ধারিত হওয়ার পর সব বেতনভাতার ওপর আয়কর আরোপের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’
মহিলাদের আয়করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি : আগামী অর্থবছরের মহিলা, প্রতিবন্ধী ও মুক্তিযোদ্ধাদের আয়করমুক্ত সীমা বৃদ্ধি করা হয়েছে। তবে সাধারণ করদাতাদের আয়করমুক্তসীমা অপরিবর্তিত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এই অনুযায়ী সাধারণ করদাতাদের আয়করমুক্ত সীমা দুই লাখ ২০ হাজার অপরিবর্তিত থাকছে। তবে মহিলা ও ৬০ বছর ঊর্ধ্ব করদাতাদের বিদ্যমান আয়করমুক্ত সীমা দুই লাখ ৫০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে দুই লাখ ৭০ হাজার টাকা করার প্রস্তাব করা হয়েছে। একই সাথে প্রতিবন্ধী করদাতার আয়করমুক্ত সীমা বিদ্যমান তিন লাখ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। গেজেটভুক্ত যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধারদের করমুক্তসীমা দুই লাখ ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চার লাখ করা হয়েছে।
করপোরেট কর হার কমানো হয়েছে : নন-পাবলিকলি ট্রেডেড (শেয়ার বাজারে নেই) কোম্পানি করপোরেট কর বর্তমানে রয়েছে সাড়ে ৩৭ শতাংশ। এটি কমিয়ে ৩৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। এ ছাড়া কোম্পানি ও অংশীদার ব্যবসার টার্নওভারের ওপর প্রদেয় ন্যূনতম করের হার শূন্য দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমিয়ে শূন্য দশমিক ৩০ শতাংশ করা হয়েছে। আর অন্যান্য কোম্পানির কর হার অপরিবর্তিত রাখার কথা বলা হয়েছে বাজেটে।
বাজেট ব্যয়ে শীর্ষে রয়েছে সুদ পরিশোধ : আগামী অর্থবছরে অনুন্নয়ন বাজেটের আকার ধরা হয়েছে এক লাখ ৬৮ হাজার ৬৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে ঋণের সুদ পরিশোধে ব্যয় হবে ৩১ হাজার ৪৩ কোটি টাকা, যা মোট অনুন্নয়ন ব্যয়ে ১৮ দশমিক চার শতাংশ। অনুন্নয়ন ব্যয়ে দ্বিতীয় বৃহৎ খাতে রয়েছে বেতনভাতা। এখানে ব্যয় দেখানো হয়েছে ২৮ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা। অনুন্নয়ন বাজেটের ১৭ শতাংশ।
উচ্চাভিলাষী রাজস্ব লক্ষ্যমাত্রা
আগামী বাজেটে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে এক লাখ ৮২ হাজার ৯৫৪ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল এক লাখ ৬৭ হাজার ৪৫৯ কোটি টাকা। আদায়ের ব্যর্থতার কারণে পরে তা সংশোধন করে করা হয়েছে এক লাখ ৫৬ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা। আগামী অর্থবছরে কর থেকেই আদায়ের প্রাক্কলন করা হয়েছে এক লাখ ৫৫ হাজার ২৯২ কোটি টাকা। এর মধ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) থেকে রাজস্ব আদায় ধরা হয়েছে এক লাখ ৪৯ হাজার ৭২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল এক লাখ ৩৬ হাজার ৯০ কোটি টাকা। আদায় ব্যর্থতার কারণে তা সংশোধন করে করা হয়েছে এক লাখ ২৫ হাজার কোটি টাকা। আগামী এনবিআর-বহির্ভূত খাত থেকে আদায় ধরা হয়েছে পাঁচ হাজার ৫৭২ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত প্রাপ্তি ২৭ হাজার ৬৬২ কোটি টাকা। বৈদেশিক অনুদান হিসেবে পাওয়া যাবে আরো ছয় হাজার ২০৬ কোটি টাকা।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) : আগামী অর্থবছরে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার ধরা হয়েছে ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকা। তবে এর সাথে স্বায়ত্তশাসিত সংস্থার বাজেট ধরলে তা বেড়ে হবে ৮৬ হাজার কোটি টাকা।
বিদেশে ঋণ : প্রস্তাবিত বাজেটে বিদেশী নিট ঋণের লক্ষ্যমাত্রাও নির্ধারণ করা হয়েছে উচ্চাভিলাষী। এ খাত থেকে আসবে মনে করা হচ্ছে ১৮ হাজার ৬৯ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে যা ছিল ১৪ হাজার ৩৯৮ কোটি টাকা। তবে বিদেশী ঋণ আশানুরূপ না পাওয়ায় ঋণ প্রাপ্তি সংশোধন করে করা হয় ১২ হাজার ৬১৩ কোটি টাকা।
অর্থমন্ত্রী আশাবাদ কী পূরণ হবে?
বাজেটে বক্তৃতার শেষে অর্থমন্ত্রী বলেছেন, ‘অনেকেই জানেন যে, আমি কর্মব্যস্ত আশি বছর অতিক্রম করেছি। অর্জন ও ব্যর্থতার দোলাচলে আমার যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে। তবে আমি কখনো আশাবাদ ব্যক্ত করতে এবং রাখতে কার্পণ্য করিনি। আমি আগেও বলেছি যে, কালো মেঘের আড়ালে আমি সোনালি রেখা দেখতে পাই। বাংলাদেশের অপরিমেয় সম্ভাবনায় এ দেশের তরুণদের মতো আমিও দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি। এই অপরিমেয় সম্ভাবনার স্বার্থে আমরা চাই একটি অসাম্প্রদায়িক এবং গণতান্ত্রিক সমাজ ও রাষ্ট্র। বাংলাদেশের জনগণও প্রতিটি কঠিন সময়ে এই আদর্শে বিশ্বাস রেখে এগিয়ে গেছেন এবং সাফল্য অর্জন করেছেন। এবারেও তার কোনো হেরফের হবে বলে আমি মনে করি না। সেই বিশ্বাসে অটুট থেকে আমি আহ্বান জানাব আমাদের দেশের সব রাজনৈতিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়ন এবং মঙ্গলের স্বার্থে সব রকম সহিংসতা থেকে বিরত থাকতে। প্রতিবাদ ও সমালোচনা অবশ্যিই হবে, কিন্তু সে জন্য কোনো সহিংস পথ অবলম্বন করা চলবে না। একটি জাগ্রত ও উদ্বুদ্ধ জাতি কোনোমতেই হত্যা এবং ভাঙচুরের রাস্তা সহ্য করবে না।’
এখন প্রশ্ন জাগতেই পারে, অর্থমন্ত্রীর এ আশাবাদ পূরণে সরকার কতখানি আন্তরিক। কারণ প্রতিবাদ ও সমালোচনার জন্য মানুষ তো রাস্তায় শান্তিপূর্ণভাবে দাঁড়াতেই পারছে না।
লেখক সৈয়দ সামসুজ্জামান নীপু
সূত্র নয়াদিগন্ত