শত বছরের লালিত স্বপ্ন; শেখপাড়া-চুয়েট সড়ক

শিক্ষা

CUET-SHEIKHPARA-SARAKjpg(1)রাউজান (চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি,
রাউজান উপজেলার পাহাড়তলী ইউনিয়নের শেখপাড়া গ্রামের পূর্ব প্রান্তে রেলপথ মন্তানালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এ.বি.এম ফজলে করিম চৌধুরী (এমপি)’র আন্তরিক প্রচেষ্টায় এলজিইডি, ইউনিয়ন পরিষদ ও এলাকাবাসী অর্থায়নে পাহাড় আর তলীর বন্ধনে শেখপাড়া-চুয়েট সড়ক নির্মাণের মধ্য দিয়ে পূর্ণ হল শেখপাড়াবাসীর শত রবছরের লালিত স্বপ্ন।
কাপ্তাই সড়কের প্রায় এক কিলোমিটার দক্ষিণে শেখপাড়া গ্রাম।
এই গ্রামের দক্ষিণে মহামুনি গ্রাম উত্তরে খানপাড়া পশ্চিমে বিস্তীর্ণ বিল আর পূর্বে সুবিশাল পাহাড় আর রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র। ইতিপূর্বে কাপ্তাই সড়ক হয়ে শেখপাড়া গ্রামে প্রবেশের একমাত্র ছিল হাফেজ বজলুল রহমান সড়ক। এই সড়ক থেকে সৃষ্ট পাঁচটি অভ্যন্তরিণ সড়কের তিনটি পূর্ব দিকে নবনির্মত শেখপাড়া-চুয়েট সড়কের সাথে যুক্ত হয়েছে।
অপর দুটি সড়কের মধ্যে ত্রিবেণী সুন্দরী ছাড়ার ড্রেন সংলগ্ন পাঁচ নং সড়কটি বর্তমানে বসতবাড়িতে বিলীন প্রায়। সুদুর অতীত থেকে শেখপাড়া সহ পার্শ্ববর্তী মহামুনি ও বহলপুর গ্রামের লোকেরা শেখপাড়া-চুয়েট সড়কটিকে হাফেজ বজলুল সড়কের বিকল্প পথ ব্যবহার করে আসছে। রাস্তাটি ছিল উচুনিচু খানাখন্দর পুর্ণ , এছাড়াও কোথাও কোথাও পাহাড় ঘামনো পানি ও মটির নিচ উঠা পানি কাদা মাখা রাস্তার উপর ছলছল করত। এই রাস্তা দিয়ে গাড়ি চলাচল ছিল পঙ্খিরাজ ঘোড়ায় ছড়ার মত স্বপ্নের ব্যাপার।
তবুও প্রতিদিন এই এলাকার শত শত শিক্ষার্থী, চাকুরিজীবীরা কম দুরুত্ব ও সময় সাশ্রয়ের জন্য কাধেঁ ব্যাগ, একহাতে জুতা আর এক হাতে প্যান্ট আগলে ধরে স্ব-স্ব গন্তব্যে চলাফেরা করত। শেখপাড়ার পূর্বভাগে বসবাসকারীদের যাথায়তে চরম দূর্ভোগ পোহাতে হত।অনেকে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করে স্বপ্নের বসতবাড়ী করলেও গাড়ি করে বাড়ি যাওয়ার স্বপ্ন অধরা থেকে যেত। অসুস্থ রোগীকে কোলে করে বসতবাড়ি হতে বেশ কিছু দূের নিয়ে গাড়িতে উঠানো হত।
অবশেষে এই অধরা স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিল।
এই এলাকায় বসবাসকারী তথা যাথায়তকারীদের এই অসহনীয় দূর্ভোগ অনুধাবন করে সদ্য প্রয়াত মো ইব্রহীম চেয়ারম্যানের উদ্যোগে স্থানীয় সাংসদ এ.িব.এম ফজলে করিম চৌধুরীর জোর প্রচেষ্টায় এলজিইডি’র অর্থায়নে ১৪,৭৬০০০/=(চৌদ্দ লক্ষ ছিয়াত্তর হাজার) টাকা ব্যয়ে নির্মিত হল শেখপাড়া-চুয়েট সড়ক। কাজটি সম্পন্ন করেন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এম কে আর বি এন্টারপ্রাইজ।
সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায়, প্রায় ৯২৫ মিটার দীর্ঘ ৮-১০ ফুট প্রস্থ সড়কটি চুয়েট গেইট সম্মুখস্থ কাপ্তাই সড়ক থেকে সৃষ্টি হয়ে দক্ষিনে শেখপাড়া ৩নং সাথে যুক্ত হয়েছে। সড়কটিতে ডবল ইট বসানো হয়েছে। এছাড়াও ২টি কালভার্ট ও কিছু ঝুকিপূর্ণ জায়গায় রাস্তার পাশে গার্ডওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল করিম চৌধুরী বাবু জানান, “এলজিইডি’র অর্থায়নে প্রকল্পটির কজের পরিমান ছিল কাপ্তাই সড়ক হতে ৬৬০ মিটার রাস্তায় ডবল ইটের সলিং করা। কিন্তু এলাকাবাসীর দাবীর প্রেক্ষিতে মাননীয় এমপি মহোদয়ের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের অর্থায়ন ও এলাকাবসীর আর্থিক ও শারিরীক সহযোগীতায় প্রায় ৩,০০,০০০/=(তিন লক্ষ) টাকা ব্যয়ে অতিরিক্ত ৬৫ মিটার রাস্তায় ডবল ইটের সলিং , দু’টি কালভার্ট ও রাস্তা সুরক্ষার জন্য খুব বেশি ঝুকিপূর্ণ জাগায় গার্ড-ওয়াল নির্মাণ করা হয়েছে।”
জানা যায়, রাস্তাটির প্রস্থতা ঠিক রাখার জন্য অনেকে স্বেচ্ছায় বসতবাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে রাস্তায় জায়গা ছেড়ে দেন। এদের মধ্যে প্রবাসী হাজী জহির আহম্মদ তালুকদার ও হাজী এজহার মিয়া ভ্রাতৃদ্বয় জানান, সুপ্রসস্থ রাস্তাঘাট এলাকার সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করে। এলাকার মানুষের যাতায়তের সুবিধা ও এলাকার সৌন্দর্য্য বর্ধনে বাড়ির সীমানা প্রাচীর ভেঙ্গে রাস্তার জন্য জায়গা দিতে পেরে নিজেদের ধন্য মনে করছি।
মৌলানা জসীম নামের আরেকজন জানান, রাস্তার জন্য সামান্য পরিমান জায়গা দিতে পেরে আমরা খুশি। এই রাস্তা দিয়ে যতদিন মানুষ চলাচল করবে, তা ছদকায়ে জারিয়া হিসাবে থাকবে। আর কেয়ামতের দিন এটাই হতে পরে আমাদের নাজাতের উছিলা।
স্থানীয় অভিবাভক সংগঠন পাহাড়তলী নজরুল ক্লাবের সভাপতি রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “ শেথপাড়া-চুয়েট সড়ককে গাড়ি চলাচলের উপযোগী করে তোলাই ছিল শেখপাড়াবাসীর দীর্ঘদিনের প্রাণের দাবী। এই সড়কটি নির্মাণের মধ্যদিয়ে শেখপাড়াকে রাউজানের একটি আদর্শ গ্রাম হিসাবে গড়ে তুলতে একধাপ এগিয়ে নিল। এজন্য আমি শেখপাড়াবাসীর পক্ষ হতে মাননীয় এমপি মহোদয়ের প্রতি কৃজ্ঞতা প্রকাশ করছি।”
শেখপাড়া-চুয়েট সড়কটি নির্মিত হওয়ায় এই এলাকায় বসবাসকারীদের যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজতর হয়েছে । সেই সাথে হাফেজ বজলুল রহমান সড়কের উপর চাপও কমেছে। সড়কটি দক্ষিণে ইটের সলিং সহকারে বর্ধিত করে শেখপাড়া ৪নং ও ৫নং সড়কের সাথে যুক্ত করা গেলে ইতিহাস ও ঐতিহ্য সমৃদ্ধ মহামুণি বিহার সাথে যোগাযোগ স্থাপন হবে। মহামুণি গ্রামের একটি বিরাট অংশ কষ্টকর যাথায়ত ব্যবস্থা থেকে মুক্তি পাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *