দেশের সবচেয়ে বড় ঈদের জামাতের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত রাখা হয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দানকে। এখানে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে সকাল ১০টায়। মুসল্লীদের সার্বিক নিরাপত্তায় থাকবে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি বিজিবি।
এদিকে প্রথমবারের মতো নিরাপত্তা কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে ড্রোন। এ ছাড়া দূরের মুসল্লীদের জন্য থাকছে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন সার্ভিস।
১৮২৮ সালে ঈদের জামাতে এখানে সোয়া লাখ মুসল্লী একসাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় সোয়া লাখিয়া। যা এখন শোলাকিয়া নামে পরিচিত।
এবার শোলাকিয়ায় অনুষ্ঠিত হবে ১’শ ৯১ তম ঈদ-উল ফিতরের জামাত। এতে ইমামতি করবেন বাংলাদেশ ইসলাহুল মুসলেমিন পরিষদের চেয়ারম্যান মাওলানা ফরিদ উদ্দিন মাসউদ।এরই মধ্যে শেষ হয়েছে মাঠ সংস্কারের কাজসহ সব ধরনের প্রস্তুতি। শোলাকিয়ায় ঈদের নামাজ পড়লে বেশি সওয়াব পাওয়া যায়, এমন বিশ্বাসে প্রতিবছর দেশ-বিদেশের লাখো মানুষের ঢল নামে এখানে। ।
এ দিকে ঈদ জামাত নির্বিঘ্ন করতে নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েছে প্রশাসন। ২০১৬ সালে শোলাকিয়া মাঠের পাশে ভয়াবহ জঙ্গি হামলার বিষটি মাথায় রেখে নতুন করে ঢেলে সাজানো হয়েছে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা। কঠোর নিরাপত্তা বলয় পার হয়ে আর্চ ওয়ের ভেতর দিয়ে মুসল্লীদের মাঠে প্রবেশ করতে হবে। চার স্তরের নিরাপত্তা বলয়ে র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি থাকছে ৫ প্লাটুন বিজিবি। ঈদগাহ মাঠ ও এর আশপাশের এলাকাকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করে বসানো হবে ২৪টি নিরাপত্তা চেকপোস্ট। মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। নামাজের আগে পুরো মাঠ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে সুইফট করা হবে। এরই মধ্যে মাঠের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।
কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মাশরুকুর রহমান খালেদ জানান, ঈদের দিন র্যাব-পুলিশের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করবে সাদা পোশাকের নিরাপত্তা বাহিনী। মাঠের প্রতিটি প্রবেশ পথে থাকছে ক্লোজসার্কিট ক্যামেরা। নামাজ শুরুর আগে পুরো মাঠ মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে তল্লাশী করা হবে। মাঠের চারপাশে থাকবে বিজিবি সদস্যরা। নিরাপত্তার সার্থে পাতলা জায়নামাজ ছাড়া অন্য কিছু সঙ্গে নিয়ে মাঠে প্রবেশ করা যাবে না বলেও জানান তিনি।
তিনি আরো জানান, চারস্তরের নিরাপত্তায় বলয়ে পুরো এলাকাকে ১০টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। ২৪টি চেকপোস্ট স্থাপন করা হয়েছে। ২০১৬ সালের জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে পুরো নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজানো হয়েছে।
জেলা প্রশাসক সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী জানান, ১২ জন ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে ৫ প্লাটুন বিজিবি নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে। তিনি বলেন, ২০১৬ সালে জঙ্গি হামলার বিষয়টি মাথায় রেখে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নতুন করে সাজানো হয়েছে। মাঠের চারপাশ সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হয়েছে। এবার শান্তিপূর্ণভাবে ঈদের নামাজ শেষ হবে বলে আশা করেন তিনি।
জনশ্রতি আছে, কোনো এক ঈদের জামাতে শোলাকিয়ায় এক লাখ ২৫ হাজার বা সোয়া লাখ মুসল্লী এক সাথে নামাজ আদায় করেছিলেন। সেই থেকে এ মাঠের নাম হয় ‘সোয়া লাখিয়া’। যা এখন শোলাকিয়া নামেই পরিচিত।
১৯৫০ সালে শোলাকিয়া ইদগাহের জন্য জমি ওয়াকফ করেন, ঈশাখার বংশধর দেওয়ান মান্নান দাদ খান। তারও দু’শ বছর আগে থেকে শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছে। প্রায় ৭ একর জমির উপর অবস্থিত শোলাকিয়া মাঠের পশ্চিম সীমারেখা উত্তর-দক্ষিণে ৩শ’ ৩৫ ফুট এবং পূর্ব সীমা রেখা উত্তর দক্ষিণে ৩শ’ ৪১ ফুট, উত্তর সীমারেখা পূর্ব পশ্চিমে ৭শ’ ৮৮ ফুট এবং দক্ষিণ সীমারেখা পূর্ব-পশ্চিমে ৯শ’ ১৪ ফুট।
শোলাকিয়া ঈদগাহ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল্লাহ আল মাসউদ জানান, মুসল্লিদের যাতায়তের সুবিধার্থে ঈদের দিন ভোরে ময়মনসিংহ ও ভৈরব থেকে শোলাকিয়া স্পেশাল নামে দুটি বিশেষ ট্রেন কিশোরগঞ্জ আসবে।
রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, ভৈরব থেকে ভোর ৬টা একটি ট্রেন শোলাকিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাবে। পৌঁছবে সকাল ৮টায়। ভোর পৌনে ৫টায় ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে আসা অপর ট্রেনটি কিশোরগঞ্জ পৌঁছবে সকাল সাড়ে ৮টায়। নামাজ শেষে দুপুর ১২টায় ট্রেন দু’টি আবার মুসল্লিদের নিয়ে মংমনসিংহ ও ভৈরব ফিরে যাবে।