শিরোনামটা দেখে অবাক হতে পারেন! এরদোগান আবার ফুটবল খেলেন নাকি। হ্যাঁ খেলেছেন।
বিশ্বকাপের হাওয়া লেগেছে তুরস্কেও। আর এরই অংশ হিসেবে একটি প্রীতি ম্যাচে অংশ নিয়েছেন প্রেসিডেন্ট এরদোগান। আর তুরস্কের প্রেসিডেন্ট যে নৈপুণ্য দেখালেন বলতে পারেন তা মেসি-নেইমারদের চেয়েও দুর্দান্ত। কারণ ৬৪ বছর বয়সেও এরদোগান যেরকম ফুটবল নৈপুণ্য দেখিয়েছেন তাতে চোখ কপালে ওঠার মতো অবস্থা।
ডান ডানপ্রান্ত দিয়ে আক্রমণ রচনা করে কমলা জার্সিধারীরা। লম্বা ক্রসে ডান প্রান্তে পাস দেন এক মিডফিল্ডার। উচুঁ হয়ে আসা বলটি বাম পায়ে রিসিভ করেন ১২ নম্বর জার্সিধারী ফরোয়ার্ড। রিসিভ করেই ডান পায়ের প্লেসিং শটে জালে জড়ান বল। প্রতিপক্ষে দুই ডিফেন্ডারের চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া কিছুই করার ছিলো না।
গোল… বলে উল্লাসে ফেটে পড়েন দর্শকরা। সতীর্থরা অভিনন্দন জানায় গোলদাতাকে। সেই গোলদাতা আর কেউ নন, স্বয়ং তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়্যেপ এরদোগান। একটি প্রীতি ম্যাচে দেখা গেছে তার এমন দুর্দান্ত ফুটবল নৈপুণ্য।
ভিডিওর শুরুতেই দেখা যায় এরদোগান ড্রেসিং রুম থেকে তার দল নিয়ে মাঠে আসেন। ম্যাচের শুরুতে অবশ্য তিনি ছিলেন সাইডবেঞ্চে। তবে দল ৩-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার পর মাঠে নামেন তিনি। নেমেই দুর্দান্ত হ্যাট্রিক করে দলকে সমতায় ফেরান। এরপর জয়ও পায় তার দল। শেষ দিকে পেনাল্টি পেয়ে জয় পায় তার দল।
প্রথম প্রচেষ্টায়ই প্রতিপক্ষের ভুল পাস থেকে বল পেয়ে দুই ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বক্সের বাম পাশ দিয়ে শট নেন। তবে এরদোগানের বাম পায়ের শটটি ধরে ফেলেন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক। পরমূহুর্তে নিজেদের সীমানা থেকে আবার আক্রমণ রচনা করে তার দল। তবে এবার আর ব্যর্থ হতে হয়নি তাকে। ডান পায়ের শটে করেন প্রথম গোল। একটু পরই মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে অনেকটা দৌড়ে গিয়ে বা পায়ের শটে করেন দ্বিতীয় গোল। গোলরক্ষকের মাথার ওপর দিয়ে জালে জড়ায় বল। এরদোগানের করা তৃতীয় গোলটি বক্সের ডান প্রান্ত দিয়ে করা । এই গোলটির মাধ্যমে হ্যাটট্রিক পূরণ করেন তিনি। অবশ্য গোলটি দেখে খটকা লাগতে পারে দর্শকদের। ভিডিও দেখে মনে হয়েছে, তার দলের অন্য খেলোয়াড়রা গোল করার সুযোগ পেয়েও গোলে শট নেননি। হয়তো এরদোগানকে হ্যাটট্রিক পূরণ করার সুযোগ দিতেই তাদের এই ত্যাগ!
শেষ দিকে আবার বক্সের বাম পাশে উচু হয়ে আসা বল বুক দিয়ে পায়ে নামিয়ে ডান পায়ের দারুণ এক সাইড ভলিতে বক্সের মধ্যে ক্রস ফেলেন। এসময় গোলের সুযোগ থাকলেও এরদোগানের সতীর্থকে ফাউল করে প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডার। পেনাল্টি পায় দল। পেনাল্টি গোল থেকেই থেকে ৪-৩ ব্যবধানে জয় পায় তার দল।
এক সময় আধাপেশাদার ফুটবল খেলতেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট। পনের বছর বয়সে ক্লাব পর্যায়ে ফুটবল খেলতে শুরু করেন এই রাষ্ট্রনেতা। খেলোয়াড়ি জীবনে খেলেছেন ইস্তাম্বুলের এরোস্কপর, কামিয়ালটি ও আইইটিটি স্পোর ক্লাবে। এর মধ্যে কামিয়ালটিতেই খেলেছেন টানা সাত বছর। এরপর আইইটিটি স্পোরে যোগ দিয়ে খেলেছেন আরো সাত বছর। সেখানে ক্লাবটির হয়ে জিতেছেন পাঁচটি শিরোপা। এক পর্যায়ে পেশাদার ক্লাব পেনেরবাচ তাকে দলে টানতে চাইলেও তিনি আর আগ্রহ দেখাননি।
তুরস্কে টিভি চ্যানেল এনটিভি স্পোরকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এরদোগান জানিয়েছেন তার খেলোয়াড়ি জীবনের অনেক ঘটনা। মজা করে বলেছেন, পুরো ক্যারিয়ারে একবার মাত্র লাল কার্ড দেখেছিলেন তিনি। ফুবলার হওয়ার বিষয়ে পরিবারের অবস্থান সম্পর্কে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমার মা কখনো বাধা দিতেন না। তিনি সব সময় আমার জার্সি ধুয়ে, লন্ড্রি করে রাখতেন। তবে বাবাকে ম্যানেজ করতে কষ্ট হতো। তিনি পড়াশুনা নিয়ে উদ্বিগ্ন ছিলেন। অনেক পরে জেনেছেন যে আমি ক্লাব পর্যায়ে খেলি।
২০১৪ সালে ইস্তাম্বুলে একটি স্টেডিয়ামের উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিলো প্রীতি ম্যাচটির। তবে ইউটিউবের কল্যাণে ভিডিওটি আবার আলোচনায় এসেছে সম্প্রতী। ইস্তাম্বুলের বাসাকসেহির ক্লাবের নিজস্ব ফুটবল স্টেডিয়াম উদ্বোধন উপলক্ষে ম্যাচটি খেলেছেন এরদোগান। ম্যাচে এরদোগানের দলে ছিলেন ইস্তাবম্বুলের মেয়র কাদির তোপবাস, বাক্সেটবল তারকা হেদায়েত তোরকোগলু, এরদোগানের পুত্র বিলাল। ম্যাচের বেশির ভাগ খেলোয়াড়ই অবশ্য পেশাদার ক্লাব বাসাকসেহির এর খেলোয়াড়।
ইউটিউবে ভিডিওটিতে দর্শকদের প্রতিক্রিয়াও ছিলো দেখার মতো। বিভিন্ন দেশী দর্শকরা এরদোগানের ফুটবল নৈপুণ্যের প্রশংসা করেছেন। এক আবেগী দর্শক তো লিখেই ফেলেছেন, ‘প্লিজ আপনি মাদ্রিদে আসুন’।
২০০৩ সাল থেকে তুরস্কের প্রথমে প্রধানমন্ত্রী ও পরে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় আছেন এরদোগান। আগামী মাসের নির্বাচনেও তার দল জয় পাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।