সূর্যমুখীর হাসিতে হাসছে পাহাড়

Slider জাতীয়

images[1]

সূর্যমুখীর হাঁসিতে হাসছে পাহাড়। ভোর হলেই সোনা রোদে চোখ মেলে ঝলমলে সূর্যমুখী।

সূর্য মামার সঙ্গে রাঙামাটির বরকল উপজেলায় সূর্যমুখীর বাগানও জেগে উঠেছে। এখানে পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে মাইলের পর দিগন্ত বিস্তৃৃত ক্ষেতে সূর্যমুখীর চাষ। যতদূর চোখ যায় সোনা রোদের সঙ্গে সূর্যমুখীর হলুদ আভা। সবুজ পাতার আড়ালে মুখউচু করে আছে সূর্যমুখী। দেখতে কিছুটা সূর্য্যের মত। সূর্য্যের দিকে মুখ করে থাকে বলে তাই এ ফুলের নাম সূর্যমুখী। এ ফুলে বাগানে প্রায় প্রতিদিন বসে প্রজাপতি আর মৌমাছির মেলা। নয়ন জুড়ানো এ দৃশ্য মোহিত করছে সবাইকে। এ ফুল দেখতে যেমন অদ্ভূত আকষর্ণীয়, তেমনি রয়েছে তার হাজারো গুনাগুণ।
তাই কম খরচে বেশি লাভের আশায় সূর্যমুখী চাষে আগ্রহ বেড়েছে বরকল উপজেলার চাষীদের।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাঙামাটি জেলার বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণা এলাকার কাপ্তাই হ্রদের পাড় ঘেষে কৃষকরা সূর্যমুখী ফুলের বাগান করেছে প্রায় ৬০ হেক্টর জমিতে। বাগান জুড়ে ফুলের আবাদ হয়েছে ব্যাপক। কৃষি বিভাগের সহায়তায় উপযুক্ত চাষাবাদের কারণে প্রথম চাষে বাম্পার ফলন ফেয়েছে কৃষকরা। ফুলে ফুলে ভরে গেছে পুরো মাঠ। তাই দেখে কৃষকের মুখে ফুটেছে হাসি। কম খরজে বেশি লাভের সূর্যমূখী চাষের দিকে ঝুঁকছে অনেক চার্ষী। তাই বরকল উপজেলা জুড়ে সূর্যমুখী চাষাবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে।

কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, সূর্যমুখী একধরণের একবর্ষী ফুলগাছ। সূর্যমুখী গাছ লম্বায় ৩ মিটার (৯.৮ ফুট) হয়ে থাকে। ফুলের ব্যাস ৩০ সেন্টিমিটার (১২ ইঞ্চি) পর্যন্ত হয়। এ বীজ হাঁস মুরগির খাদ্যরূপে ও তেলের উৎস হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বীজ যন্ত্রে মাড়াই করে তেল বের করা হয়। সূর্যমুখীর চাষ সারা বছর করা যায়। তবে অগ্রহায়ণ মাসে (মধ্য-নভেম্বর থেকে মধ্য-ডিসেম্বর) চাষ করলে ভাল ফলন পাওয়া যায়। দেশের উত্তর ও পশ্চিম অঞ্চলে তাপমাত্রা ১৫ ডিগ্রী সে. এর নিচে হলে ১০-১২ দিন পরে বীজ বপন করতে হয়। খরিপ-১ মৌসুমে অর্থাৎ জ্যৈষ্ঠ (মধ্য-এপ্রিল থেকে মধ্য-মে) মাসেও এর চাষ করা যায়। এক হাজার বীজের ওজন ৬০-৬৫ গ্রাম। বীজের রঙ কালো এবং লম্বা ও চেপ্টা। প্রতি গাছে একটি করে মাঝারি আকারের ফুল ধরে থাকে। বপনের পর ফসল সংগ্রহ করতে ৯০-১০০ দিন সময় লাগে। প্রতি হেক্টরে ১.৩-১.৫ টন ফসল পাওয়া যায়।

বরকল উপজেলা সূর্যমুখী চাষী কামাল ও রহিম জানান, অল্প পুঁজি দিয়ে পরীক্ষামূলকভাবে সূর্যমুখীর চাষ শুরু করেছিলাম। প্রথম চাষে আবাদ হয়েছে বাম্পার। এ ফুলে চাষে লাভ বেশি। আমাদের দেখে স্থানীয় অন্যান্য কৃষকরাও সূর্যমুখীর বাগান গড়ে তুলেছে। তাই এ ফুলের চাষাবাদ আরও বৃদ্ধি করার চিন্তাধারা আছে। তবে সূর্যমূখী বীজ ভাঙানোর জন্য মেশিন না থাকার কারণে আমাদের একটু কষ্ট করতে হয়। যদি সরকারি উদ্যোগে সূর্যমূখী বীজ ভাঙানোর মেশিন ও সেচ ব্যবস্থা থাকলে এ অঞ্চলের সব কৃষকরা সূর্যমুখী চাষে এগিয়ে আসতো। কৃষকদের কষ্ট দূর হতো। তাছাড়া তামাকের চেয়ে সূর্যমুখী চাষের লাভ বেশি। কারণ সূর্যমুখীর ফলও বীজ দুটোই বিক্রিযোগ্য। অনেক কৃষক-কৃষাণী এখন সূর্যমুখী চাষ করে নতুনভাবে বেঁচে থাকার পথ খুঁজছেন। এখানকার কয়েকটি গ্রামের চাষীরা লাভের আশায় এ সূর্যমুখী ফুলের চাষ করেছেন। এর মাধ্যমে ভাগ্য বদলের স্বপ্ন দেখছেন তারা।

বরকল উপজেলার উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা অনুপ কুমার দত্ত জানান, পাহাড়ের মাটি ও আবহাওয়া উপযুক্ত থাকায় বরকল উপজেলার সীমান্তবর্তী হরিণা এলাকায় সূর্যমুখীর বাম্পার আবাদ হয়েছে। পাহাড়ের মাটি সূর্যমুখী চাষের জন্য খুবই উপযোগী। মাটি উর্বর হওয়ায় পাহাড়ের সুর্যমুখী চাহিদার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছে। তবে গাছের পরিচর্যা প্রয়োজনীয় পুষ্টি চাহিদা পূরণের জন্য সার ও ঔষধ প্রয়োগের কলাকৌশল চাষীদের জানা থাকলে এ ফুলের উৎপাদন আরও বৃদ্ধিপাবে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *