হাফিজুল ইসলাম লস্কর, সিলেট প্রতিনিধি: সিলেটে অধিক মুনাফার লোভে কতিপয় অসাধু ব্যবসায়ী অপরিপক্ষ কাচা আমের উপর বিষাক্ত কার্বাইড প্রয়োগ করে আমগুলো পাঁকাতে শুরু করেন। তাদের পাঁকানো আম গুলো দীর্ঘ মেয়াদী করতে বিষাক্ত ফরমালীন যুক্ত করে পচন রোধে মওজুদ করেন এবং তারপর শুরু করেন বাজারজাত করণ।
আর সেই বিষাক্ত আমগুলোতে এখন বাজার সয়লাভ। এখন সারা দেশের অলিতে গলিতে আটি বিহীন পাঁকা আম। আর এসকল আম মানব দেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। বাংলাদেশের উত্তর পশ্চিম সীমান্তে অবস্থিত বৃহত্তর রাজশাহী বিভাগের চাঁপাই নবাবগঞ্জকে আমের সম্রাজ্য বলা হয়। সেখাকার ৩টি উপজেলা শিবগঞ্জ, ভোলাহাট এবং নাচুল জোড়ে মাঠের পর মাঠ ব্যাপী সারি সারি আমের বাগান। সেখান থেকে প্রতি দিন লক্ষ লক্ষ টন আম দেশের বিভিন্ন স্থানে এনে বাজারজাত করা হয়।
চাহিদা মেটানো হয় সমগ্র বাংলাদেশের লোকজনের। কিন্তু সঠিকভাবে বাজার জাত না করার ফলে হিতে বিপরীত হয়ে দাড়াতে শুরু করেছে। যার ফলে এসকল আম খেয়ে সৃষ্টি হচ্ছে মানব দেহে মরণ ব্যাধি ক্যান্সারের মত কঠিণ রোগ।
উল্লেখ্য, বিগত দিনে চাঁপাই নবাবগঞ্জে হঠাৎ করে ঝড় বয়ে যাওয়ায় শিবগঞ্জ, কানসাট, ভোলাহাট, সোনা মসজিদ ও নাচুলসহ বিভিন্ন আম বাগানে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি সাধিত হয়। অপরিপক্ষ আম গাছ থেকে খসে পড়লে বাগানের মালিকরা কাঁচা আম বিক্রি করেন বিভিন্ন আড়ৎদারের কাছে।
আড়ৎদাররা কাঁচা আম ৮ থেকে ১০ টাকা কেজি দরে ইতিপূর্বে বাজারে বিক্রি করে অনেকেই লাভবান হয়েছেন। আর গোটাকয়েক অসাধু ব্যবসায়ী সেই অপরিপক্ষ কাচা আম মজুদ করে রেখে এখন রমজানকে বেচে নিয়ে কাঁচা আমের উপর বিষাক্ত কার্বাইড প্রয়োগ করে আমগুলো পাঁকাতে শুরু করেন। তাদের পাঁকানো আম গুলো দীর্ঘ মেয়াদী করতে বিষাক্ত ফরমালীন যুক্ত করে পচন রোধে মওজুদ করেন। শুরু হয় বাজারজাত করণ।
বাজারে চোখ রাখলেই লকনা এবং হিমসাগর জাতের পাঁকা আমবাজারে পাওয়া যাচ্ছে, অথচ এ আমগুলো সরকারীভাবে ৮ জনু থেকে ১৫ জুনের পূর্বে পরিপক্ক হবে না বলে বিশেষজ্ঞদের নির্দেশ রয়েছে।
নিম্নে আমের নাম ও সরকারীভাবে বাজারজাতের তারিখ উল্লেখ করা হল:-
গোবিন্দভোগ ২৫ মে‘র পর, গুলাব খাস ৩০ মে‘র পর, গোপাল ভোগ ১লা জুনের পর, রাণী পছন্দ ৫ জুনের পর, হিমসাগর বা ক্ষিরসাপাত ১২ জুনের পর, ল্যাংড়া ১৫ জুনের পর, লক্ষণভোগ ২০ জুনের পর, হাড়ি ভাঙ্গা ২০ জুনের পর, আম্রপালী ১লা জুলাই থেকে, মল্লিকা ১লা জুলাই থেকে, ফজলি ৭ জুলাই থেকে এবং আশ্বিনা ২৫ জুলাই’র পর।
চাঁপাই নবাবগঞ্জে প্রকৃত পাঁকা আম এখনো গাছে গাছে শোভা পাচ্ছে। সময় হলে তা বাজারজাত করা হবে। চাঁপাই নবাবগঞ্জ থেকে সিলেট এসে এ আমগুলো বিক্রি হতে পারে প্রতি কেজি ৮০ থেকে ৯০ টাকা মূল্যে।
অতচ এ আমগুলো সময়ের অনেক আগেই বাজারে পাওয়া যাচ্ছে। আর বর্তমানে এ লকনা ও হিমসাগর জাতের পাঁকা আম বাজারে বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়। এ থেকে প্রতিয়মান হয়, ঝড়ে আক্রান্ত অপরিপক্ক আমের উপর কার্বাইড ও ফরমালিন ব্যবহার করে তা বাজারজাত করা হচ্ছে। যারা এসকল আম পবিত্র রমজান মাসে আহার করছেন তারা বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন বলে অনেকে জানিয়েছেন।
এদিকে সিলেটের প্রতিটি এলাকায় গিয়ে দেখা যায় লকনা এবং হিমসাগর আমে বাজারগুলো ভরপুর। তাই প্রত্যেকটি এলাকায় মোবাইল কোট পরিচালনা করে এসকল অসাধু ব্যবসায়ীদের আমের উপর নিরিক্ষণ করা হলে সঠিক রহস্য বের হবে বলে বিজ্ঞজনেরা মনে করেন।
বিশেষজ্ঞরা জানান কোন বস্তুকে দীর্ঘ মেয়াদী সতেজ রাখতে হলে এর উপর ফরমালিন প্রয়োগ করতে হয়। যেমন মৃত ব্যক্তির লাশ হিমাগারে রাখতে হলে ফরমালিন ব্যবহার করা হলে লাশের পচনরোধে সহায়ক ভুমিকা থাকে। ইদানিং ফলের উপর বিষাক্ত ফরমালিন ব্যবহারে মানবদেহে বিভিন্ন কঠিন রোগের প্রকোপ বেড়েই চলছে।