লিওনেল মেসি, ক্রিস্তিয়ানো রোনালদো ও নেইমার—২০১৪ বিশ্বকাপের আবহে সবচেয়ে বড় তারকা। ২০১৮ বিশ্বকাপের আগেভাগেও এই তিনের ওপরে রাখার মতো তারকা কোথায়! চার বছর আগে এই ত্রিরত্নের বিশ্বকাপ ভালো
কাটেনি তেমন। রোনালদোর পর্তুগালের বিদায় প্রথম রাউন্ডে, নেইমার ইনজুরিতে পড়েন কোয়ার্টার ফাইনালে, তাঁকে ছাড়া ব্রাজিল বিধ্বস্ত হয় সেমিফাইনালে। আর আর্জেন্টিনাকে নিয়ে মেসি ফাইনাল পর্যন্ত গেলেও শিরোপার
হাসিতে শেষ করতে পারেননি বিশ্বকাপ। রাশিয়ার আসরে ওই অপ্রাপ্তি ঘোচানোর অভিযান এই ত্রিরত্নের। তাঁদের বিশ্বকাপ ভাবনায়ও সেই প্রত্যয়ের ছাপ…
প্রশ্ন : লিওনেল মেসি হয়ে থাকাটা কি খুব সহজ বিষয়?
লিওনেল মেসি : আমি কিন্তু আর দশজনের মতো সাধারণ একজন মানুষই, যে কিনা একটা সুন্দর পারিবারিক জীবনের মধ্যে থাকতে চেষ্টা করে। তবে হ্যাঁ, এটিও সত্যি যে আমি এমন একটি স্বাভাবিক জীবন চাই, যেখানে বাইরে বেরোলেই সবাই আমাকে ঘিরে ধরবে না বা তাকিয়ে থাকবে না।
প্রশ্ন : দুই সন্তান আপনার পারিবারিক জীবনকে কতটা বদলে দিতে পেরেছে?
মেসি : সব দিক থেকেই ওরা আমার জীবনে বিশাল পরিবর্তন এনেছে। বাবা হলে আপনি অনেক কিছুই ভিন্নভাবে দেখতে শুরু করবেন। সত্যি কথা হলো, বাবা হওয়াটাই আমার সারা জীবনে ঘটা সুন্দরতম ঘটনা। থিয়াগো আর মাতেওকে স্কুলে নিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়েই আমার সকালটা শুরু হয়। এরপর অনুশীলন সেরেই আবার থিয়াগোকে স্কুল থেকে আনতে যাই।
প্রশ্ন : ছেলেরা আপনাকে কিছু জিজ্ঞেস করে? মানে ওরা কি বোঝে যে লিওনেল মেসি কে?
মেসি : যখন কেউ এসে আমার সঙ্গে ছবি তুলতে বা অটোগ্রাফ নিতে চায়, তখন মাতেও অপার বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থাকে। ও তো আর কিছুই বোঝে না। তবে থিয়াগো পুরোটা না হলেও একটু একটু করে বুঝতে শুরু করেছে। ও স্টেডিয়ামে গিয়ে খেলা দেখতে পছন্দ করে; কিন্তু পুরোপুরি বোঝে না এখনো। মাঝেমধ্যে তো বাসায় আমাকে ভক্তদের মতো ‘মেসি’ বলে ডাকতেও শুরু করে।
প্রশ্ন : আপনার এক সতীর্থ একবার বলেছিলেন, প্রকৃতিগতভাবেই আপনার ওজনটা একটু বেশি। সে জন্য আপনি ডায়েট করেছেন নাকি জিমে বাড়তি অনুশীলন করেছেন?
মেসি : এটা তো নতুন কিছু নয় যে বহু বছর থেকেই আমি খাবারের বিষয়ে খুবই সতর্ক। এটা ঠিক যে অনুশীলনের পর পায়ের শক্তি বাড়ানোর জন্য কিছু ব্যায়াম করি। তাই বলে জিমে গিয়ে ঘাম ঝরানোর ব্যাপারটি আমার ধাতে নেই।
প্রশ্ন : প্রাত্যহিক জীবনে ‘সিয়েস্তা’ (ভাতঘুম বা বিকেলের ঘুম) কি এখনো দেন?
মেসি : নাহ, একদমই না। তবে সত্যি কথা হলো, আমি এটা খুব মিস করি। জাতীয় দলের সঙ্গে যখন থাকি, তখনই শুধু এই ঘুমটা দেওয়ার সুযোগ পাই আমি। এখন তো বাচ্চাদের জন্য সময়ই করে উঠতে পারি না।
প্রশ্ন : খুব বেশি ফুটবল ম্যাচ দেখার সুযোগ কি হয়?
মেসি : হ্যাঁ, প্রচুর ফুটবল ম্যাচ দেখি আমি।
প্রশ্ন : নির্দিষ্ট কোনো প্রতিযোগিতা বা লিগের কথা বলবেন?
মেসি : এমনিতে সবই দেখি। এর মধ্যে স্পেন, ইংল্যান্ড ও আর্জেন্টিনার লিগ অবশ্যই থাকে। যদিও আমার সূচি এমন ঠাসা যে সব কিছুই একটু একটু করে দেখা হয়।
প্রশ্ন : বাছাই পর্বের বাধা পেরোতে আর্জেন্টিনার ঘাম ছুটে যাওয়ার ব্যাপারটিকে ব্যাখ্যা করবেন কিভাবে?
মেসি : খুবই কঠিন সময় ছিল সেটি। ওই সময়টায় তিনজন কোচের অধীনে খেলেছি আমরা। প্রত্যেকের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার ব্যাপারটিও সহজ ছিল না। কারণ প্রত্যেকের ফুটবল দর্শন ও দৃষ্টিভঙ্গি আলাদা। এখন আছেন হোর্হে সাম্পাওলি, যাঁর অধীনে আমরা কিছু ফ্রেন্ডলিসহ মাত্র চারটি বাছাই পর্বের ম্যাচ খেলেছি। বাছাই পর্বটা এখন অনেক কঠিন। দিন দিন ফুটবলটা আরো কঠিন হচ্ছে বলে বাছাই পর্বের বাধা পেরনোও সহজ থাকছে না।
প্রশ্ন : ২০১৪-র ফাইনালে জার্মানির কাছে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয়েছিল আপনাদের। ২০১৮-তেও কি জার্মানিই ফেভারিট, নাকি অন্য দলেরও সম্ভাবনা দেখছেন?
মেসি : বরাবরের মতো জার্মানি অন্যতম ফেভারিট তো বটেই। তবে আরো কয়েকটি দলও শিরোপার দাবিদার। যেমন ব্রাজিল, স্পেন ও ফ্রান্স। ওরা শক্তিশালী দল এবং ছন্দে থেকেই বিশ্বকাপে আসছে।
প্রশ্ন : ব্রাজিল বিশ্বকাপে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে সেমিফাইনাল খেললেন আপনারা। অথচ সেই ডাচদের এবার বিশ্বকাপে না থাকার ব্যাপারটি আপনার কাছে কতটা বিস্ময়কর?
মেসি : একটু আগেই বললাম, প্রায় প্রতিটি দলকেই বাছাই পর্বে ঝামেলায় পড়তে হয়েছে। হোক সেটি দক্ষিণ আমেরিকা কিংবা ইউরোপের দল। এখন দলগুলোর ব্যবধান খুব কম এবং যেকোনো সুসংগঠিত ছোট দলও আপনার জীবন বিষিয়ে তুলতে পারে। নেদারল্যান্ডসের মতো ইতালিও এবার নেই, যারা যুগ যুগ ধরে বিশ্বকাপে খেলে আসছিল। তাদের না থাকাটা কারো কাছেই প্রত্যাশিত নয়।
প্রশ্ন : গত বিশ্বকাপটায় তো বলতে গেলে একক প্রচেষ্টায় দলকে তুলেছিলেন ফাইনালে, একটুর জন্য জিততে পারেননি শিরোপা। এবার কি শেষ বাধাটা অতিক্রম করার একটা চাপ অনুভব করছেন?
মেসি : আমাদের নিয়ে অনেক কথা বলা হয়েছে। সে সময় প্রচুর সমালোচনার ছোরা বিঁধেছে আমাদের পিঠে। তবে একই সঙ্গে আমাদের দলের কাছ থেকে প্রত্যাশাটা ক্রমেই বেড়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, আমরা যদি এবার কাপটা জিততে না পারি, তাহলে আরো অনেক সমালোচনাই আমাদের সহ্য করতে হবে। এবার না হলে হয়তো আর কখনোই নয়।