কুষ্টিয়া: কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় নিজের বাড়ির শয়নকক্ষ থেকে ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আলমের (২৭) গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনাস্থল থেকে শটগানের গুলি উদ্ধার করা হয়। গতকাল মঙ্গলবার দিবাগত রাত সাড়ে তিনটার দিকে উপজেলার হাটশ-হরিপুর ইউনিয়নের হরিপুর ফারাজীপাড়া থেকে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে।
জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি নাজমুল নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টি করেছে। ঘটনার মাত্র দুদিন আগে তিনি বিয়ে করেন। তাঁর সঙ্গে দলের কারও কোন্দল বা শত্রুতাও ছিল না। সে ক্ষেত্রে কী কারণে, কারা তাঁকে হত্যা করতে পারে, তা বোঝা যাচ্ছে না। পুলিশও কোনো তথ্য দিতে চাইছে না। নাজমুলের নববিবাহিত স্ত্রী ঊর্মি খাতুন ও বাবা আলতাব হোসেনকে ঘটনার পরপর পুলিশি হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। এতে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী স্ত্রীর কাছ থেকেও কেউ কোনো তথ্য জানতে পারেনি।
পুলিশ, নাজমুলের পরিবার ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা গেছে, নাজমুল কুষ্টিয়া সরকারি কলেজ থেকে ২০১৫ সালে ব্যবস্থাপনা বিষয়ে স্নাতকোত্তর পাস করেন। কোনো চাকরি বা ব্যবসা করতেন না। নাজমুল জেলা ছাত্রলীগের সহসভাপতি ছিলেন। দুই ভাই ও তিন বোনের মধ্যে নাজমুল ছিলেন সবার বড়। নাজমুলের সবচেয়ে ছোট ভাই কয়েক বছর আগে অসুস্থ হয়ে নয় বছর বয়সে মারা যায়। তিন বোনের মধ্যে যমজ বোনের একজন বিয়ে করেছেন। অন্য দুই বোন পড়ালেখা করছেন। বাবা-মা ও বোনদের নিয়ে একই বাড়িতে থাকতেন নাজমুল। গত রোববার পারিবারের সম্মতিতে শহরের কানাবিল এলাকায় ঊর্মি খাতুনকে বিয়ে করেন তিনি।
নাজমুলের বোন ইসলামিয়া কলেজের ছাত্রী সালমা খাতুন বলেন, বাবা-মায়ের সঙ্গে একই কক্ষে ঘুমিয়ে ছিলেন তিনি। মধ্যরাতে প্রচণ্ড শব্দ পান। পরে কক্ষ থেকে বের হয়ে দেখেন, ভাইয়ের দরজা খোলা। মেঝেতে ভাইয়ের লাশ পড়ে আছে। আর ভাবি কাঁদছেন।
নাজমুলের মা নাজমা খাতুন বলেন, গতকাল ছেলে বউমাকে নিয়ে শহর ও গ্রামে ঘুরে বেড়িয়েছেন। রাত ১০টায় তাঁরা বাড়ি ফেরেন। খাওয়া শেষে দুজনই শোয়ার ঘরে যান। রাত তিনটার কিছু আগে হঠাৎ গুলির শব্দ পান। ঘর থেকে বের হতে গেলে নাজমুলের বাবা আলতাব হোসেন তাঁকে বাধা দেয়। কয়েক মিনিট পর ছেলের ঘরে গিয়ে দেখতে পান খাটের পাশে মেঝেতে ছেলে পড়ে আছেন। রক্তে ভেসে যাচ্ছে। তিনি বলেন, বাড়ির দুই দিকে দুটি প্রধান ফটক রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজাসহ ছেলের শোয়ার ঘরের দরজা খোলা ছিল।
কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আতিকুর রহমান বলেন, রাত সাড়ে তিনটার দিকে নাজমুলের শয়নকক্ষ থেকে লাশ উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে রাখা হয়েছে। নাজমুলের মাথার ডান পাশে একটা গুলির চিহ্ন রয়েছে। মনে হচ্ছে, গুলিটা বের হয়নি। নাজমুলের স্ত্রীর ডান হাতের একটা আঙুলে কাটার দাগ। তাঁকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কুষ্টিয়া পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ঘটনাস্থলে যাওয়া হয়েছে। সেখান থেকে শটগানের একটি তাজা গুলি উদ্ধার করা হয়েছে। তিনি দাবি করেন, নাজমুলের বাবা, মা ও স্ত্রী ভিন্ন ভিন্ন তথ্য দিয়েছেন। সেসব তথ্য যাচাই করা হচ্ছে।