ঢাকার শীর্ষ পাঁচ মাদক ব্যবসায়ীর অন্যতম রহিমা বেগম। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ তালিকাভুক্ত রহিমা এক যুগের বেশি সময় ধরে ধরাছোঁয়ার বাইরে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কোনো সংস্থাই এখন পর্যন্ত তার হদিস জানে না। রহিমার জন্ম ও বেড়ে ওঠা পুরান ঢাকার গেণ্ডারিয়ার ছোবা পট্টি বস্তিতে। সেখানে প্রায় দুই দশক আগে ছোট ছোট পুরিয়ায় গাঁজা ও হেরোইন বিক্রি দিয়ে তার মাদক ব্যবসা শুরু। বস্তিতে পুরিয়া বিক্রি করে রহিমা এখন অন্তত ১০টি নিজস্ব বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক। তার চলাফেরাও দামি গাড়িতে। ব্যাংকেও অঢেল টাকা জমানো রয়েছে বলে জানা গেছে। তার ফ্ল্যাট ও বাড়িগুলো— সিদ্ধিরগঞ্জ, গেণ্ডারিয়া, শনিরআখড়া, গুলশান, বাড্ডা, তেজগাঁও ও উত্তরা এলাকায়। পুলিশ জানায়, বছরের পর বছর ধরে মাদক ব্যবসা করে ‘মাদক সম্রাজ্ঞী’ হয়ে ওঠা রহিমার নামে বিভিন্ন থানায় মোট ১৪টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে একটি হত্যা মামলা।
তার স্বামী হজরত আলী ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তালিকাভুক্ত মাদক ব্যবসায়ী। ডিএনসি সূত্র জানায়, বছর তিনেক আগে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তৎপরতায় গেণ্ডারিয়া থেকে পালিয়ে নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের মামুদপুর ইউনিয়নের মিজমিজিতে একটি সাততলা বাড়িতে কিছু দিন ছিলেন রহিমা। সেখান থেকে সারা ঢাকায় মাদক ব্যবসা পরিচালনা করতেন। কিছু দিন পর সেখান থেকেও চলে যান তিনি। এখন কোথায় কী অবস্থায় আছেন তার কোনো তথ্য নেই। জানা গেছে, রহিমা অন্তত ৬০টি মোবাইল সিম ব্যবহার করতেন। একটি সিম এক মাসের বেশি ব্যবহার করতেন না। ওয়ারী বিভাগ পুলিশ জানায়, রহিমা এখন গুলশানের কোনো একটি ফ্ল্যাটে থাকেন। কিন্তু সুনির্দিষ্ট তথ্য তাদের কাছেও নেই। জানা যায়, ২০০০ সালে হজরতের সঙ্গে রহিমার প্রথম সাক্ষাৎ গেণ্ডারিয়াতে। তখন থেকেই দুজনে মিলে মাদক ব্যবসা চালিয়ে আসছেন। রহিমার মাদক ব্যবসায় অন্তত ৩৫ জন যুক্ত। এই বিশাল চক্রটি প্রতি মাসে মাদক থেকে কোটি কোটি টাকা আয় করে। চক্রটির বেশ কয়েকজন গ্রেফতার হলেও রহিমা বরাবরই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে নাগালের বাইরেই থেকে গেছেন। রহিমার বেশিরভাগ সম্পদ তার আত্মীয়দের নামে। রহিমার পুরনো এলাকা গেণ্ডারিয়াতে তার নামে কেউ কোনো কিছু বলার সাহস পায় না। আগে রহিমার বিরুদ্ধে কথা বলায় কয়েকজনের হাত-পা ভেঙে দেওয়া এমনকি হত্যার ঘটনাও ঘটেছে। অভিযোগ রয়েছে, রহিমার একটি ইয়াবা চালানের কথা পুলিশের কাছে ফাঁস করে দেওয়ায় জহির নামে একজনের হাত-পা ভেঙে দেয় তার লোকজন। তার আরেক সাবেক ঘনিষ্ঠ সহযোগী আসলাম তাকে পুলিশের হাতে ধরিয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা নেওয়ায় তাকেও খুন করায়। ২০১৪ সালের ৮ নভেম্বর কদমতলীর দনিয়া এলাকায় এক বাড়িতে আসলামের গুলিবিদ্ধ লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে রহিমার স্বামী হজরতসহ মোট ১১ জনকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে পাঁচজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছে। জবানবন্দিতে তারা রহিমার নির্দেশে আসলামকে হত্যার কথা স্বীকার করেছে। এর পর গত বছর জানুয়ারিতে রহিমাসহ ১০ জনের নাম উল্লেখ করে আদালতে চার্জশিট দেয় পুলিশ। দেশজুড়ে মাদকবিরোধী অভিযানের মধ্যেও রহিমার লোকজন রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, দনিয়া ও গেণ্ডারিয়া এলাকায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে বলে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন। তারা বলেছেন, মাদক ব্যবসায়ীরা দিনের বেলা গা-ঢাকা দিয়ে থাকলেও সন্ধ্যা নামতেই মাদক বিক্রি শুরু করে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের (ডিএনসি) অতিরিক্ত পরিচালক (গোয়েন্দা) নজরুল ইসলাম শিকদার এ প্রতিবেদককে জানান, শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে রহিমা একজন। তাকে আমরা দীর্ঘদিন ধরে ধরার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত তার অবস্থান শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। আমাদের নজরদারি বাড়ানো হয়েছে, আশা করছি খুব শিগগিরই সে ধরা পড়বে।