যানজটের নগরী সিলেটে ভোগান্তি বাড়াচ্ছে মৌসুমী রিক্সা চালকরা

Slider সিলেট

IMG_20180527_005418

সিলেট প্রতিনিধি : সিলেট নগরীতে রিক্সা ভাড়া নিয়ে প্রায়ই যাত্রী ও চালকদের মাধ্যে কথা কাটাকাটি হয়, এছাড়া রিক্সার যত্রতত্র চলাচলে বেড়ে যায় যানজট। তাই সিলেট নগরবাসীর সুবির্ধাতে মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরের গুরুত্বপূর্ণস্থানে স্থাপন করেন রিকশা ভাড়ার তালিকা যথাযথ তদারকির অভাবে তালিকার থাকার পরেও নগরবাসী এর কোন সুফল পাচ্ছেনা। বরং বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নগরবাসী।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দায়িত্বশীরা যদি তাদের কাজে দায়িত্ববান হন তাহলে নগরবাসীকে আর ভোগান্তিতে পড়তে হবে না। শুক্রবার (২৬ মে দুপুরে নগরের ব্যস্ততম এলাকা কোর্ট পয়েন্ট থেকে কাজীরবাজার যেতে রিকশা ভাড়া করতে চাইছিলেন নগরের কুমারপাড়ার বাসিন্দা আব্দুল হাকিম।

রিকশাচালকের কাছে তিনি ভাড়া জানতে চাইলে চালক দাবি করেন ৩৫ টাকা। এক কিলোমিটার দূরত্বের ভাড়া ৩৫টাকা শুনেই কপালে চোখ উঠে যায় হাকিমের। শুরু হয় চালক ও যাত্রীর মধ্যে কথাকাটাকাটি। এক পর্যায়ে রিকশাচালক স্বীকার করেন, তিনি কাজীর বাজার কোথায় চেনেন না।

পরে ১৫ টাকা ভাড়াতেই তিনি যেতে রাজি হন জানান হাকিম। শুধু রিকশাচালক সুমনসহ আসন্ন ঈদ উল ফিতরকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্নস্থান থেকে ইতোমধ্যে দেড় শতাধিক রিকশাচালক সিলেটে এসেছেন। যাদেরকে বলা হয় ‘মৌসুমী রিকশা চালক’। তবে এসব রিকশা চালকদের প্রতি নজর রেখেছে পুলিশ। তারা যাতে সিলেটে থেকে কোন ধরণের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারে সেদিকে নজর রেখে চলছে পুলিশের কার্যক্রম।

সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আব্দুল ওয়াহাব (গণমাধ্যম) বলেন, সিলেট মহানগরী এলাকায় অচেনা মানুষদের প্রতি পুলিশের বিশেষ নজর রয়েছে। সে রিকশা চালক হউক আর সাধারণ মানুষ হউক পুলিশ তার ওপর নজর রাখবেই। এসময় কাউকে সন্দেহ হলে পুলিশ তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে।

জমির নামের আরেক রিকশাচালক বন্দবাজার থেকে মিরাবাজার যেতে ২০ টাকার পরিবর্তে ৪০ টাকা ভাড়া দাবী করেন। এসময় রিকশা চালক জমির যাত্রীকে বলেন মিরাবাজারে যাওয়ার রাস্তাগুলো তাকে দেখিয়ে দিতে হবে।
রমজানে সিলেট নগরে হঠাৎ রিক্সা চালকের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় এমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হতে হয় অনেক যাত্রীদের।

অনুসন্ধানে জানা যায়, এসব চালকদের অধিকাংশই ঈদকে কেন্দ্র করে সিলেট নগরে নতুন এসেছেন। যারা পেশাদার রিক্সাচালক নন। নগরের চৌহাট্রা পয়েন্টে কথা হয় এক রিক্সা চালকের সাথে। তিনি জানান, ঈদকে কেন্দ্র করে ভালো রোজকারের আসায় তিনি সিলেট এসেছেন এক সাপ্তাহ আগে।

প্রতি বছর রমজান মাসে বাড়তি আয়ের আশায় দশের বিভিন্ন জেলা থেকে সিলেট নগরে আসেন তাদের মতো অনেক রিক্সা চালক। এদের অধিকাংশই গ্রামে কৃষিকাজ বা দিনমজুরের কাজ করেন, ঈদকে সামনে রেখে বাড়তি কিছু আয়ের আশায় সিলেটে নগরে রিক্সা চালাতে এসেছেন। ঈদ শেষে আবার তারা বাড়ি ফিরে যাবেন।

সিলেট নগরের এক রিক্সার গ্যারেজ মালিক বলেন, ইতোমধ্যে তার গ্যারেজে প্রায় ১০জন রিকশা চালক নতুন এসেছেন। প্রতিবছর রমজানে সিলেট নগরে অতিরিক্ত ৫শতাধিক রিকশা চালক আসেন। আবার ঈদ শেষে তারা চলেও যান। এদের বেশিরভাগই আসে দেশের উত্তরাঞ্চলের বিভিন্ন জেলা থেকে।

নগরীর কোর্ট পয়েন্টে কথা হয় এক চালকের সঙ্গে। তিনি গত ৩০ মে নোয়াখালী থেকে সিলেট এসেছেন। তিনি বলেন, প্রতিবেশী আরমান তিন বছর আগে রমজানে সিলেট এসে রিকশা চালাতে শুরু করে। এখন সিলেটেরই তিনি স্থায়ী। ‘তার পরামর্শেই প্রথমবারের মত আমিও এসেছি’ বলে জানায় সে।

ফলে মৌসুমী রিক্সা চালকরা ভাড়া এবং রাস্তাঘাট না চিনার কারনে যেমন বাড়ছে যাত্রীদের ভোগান্তি, তেমনি বাড়ছে ব্যস্ত নগরী সিলেটে তীব্র যানজট। এক রিক্সা গ্যরেজের মালিক জানান, সাধারণ সময়ে গ্যারেজগুলোতে বেশকিছু রিকশা ভাড়া হয় না। কিন্তু রোজার মাসে প্রতিটি গ্যারেজের সব রিকশা ভাড়া হয়ে যায়। অপরিচিত চালকদের রিকশা ভাড়া দেয়া হয় বিশ্বাসের ওপর বা পরিচিত কোনো রিকশা চালকের জিম্মায়। নগরের প্রায় ৩ হাজার নিয়মিত রিকশা চালক রয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, রমজানে এর সঙ্গে আরও প্রায় ৩ হাজার চালক যোগ হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *