টাঙ্গাইল : ‘আমি পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ছিলাম মুক্তিযোদ্ধা, আর আমি এখন রাজাকার। রাজাকার অর্থ সাহায্যকারী। পাকিস্তানে ইসলামের সাহায্যকারী আর আমাদের রাজাকার।’
সরকারি কুমুদিনী কলেজের সঙ্গে জমি নিয়ে বিরোধের বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর আব্দুল কাদের সিদ্দিকী।
রোববার সন্ধ্যায় টাঙ্গাইল শহরের নিজ বাসভবন সোনার বাংলায় তিনি এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, এটা সরকারি কলেজ। এই কলেজের যদি কোন জায়গা জমি থাকে তবে সেটা খাতার মাঝে থাকতে হবে। হঠাৎ করে কোন জমি পাওয়া যাবে না। আর যদি সেই জমিটা তালিকায় থাকে তবে তা কি অবস্থায় আছে, সেখানে কি ধান চাষ হচ্ছে নাকি সেখানে কেউ বসে চা খায় সেটাও লিপিবদ্ধ থাকবে। আর সেই জায়গা থাকলেও সেখানে হোস্টেল করবে নাকি শ্রেণীকক্ষ করবে নাকি সায়েন্স বিল্ডিং করবে সেটা তাদের বিষয়।
তিনি বলেন, ১৬ বছর আওয়ামী লীগের সঙ্গে আমার কোন সম্পর্ক নাই। জামায়াতের লোকজন আওয়ামী লীগ থেকে সুযোগ-সুবিধা পায়, বিএনপি পায়, আর জাতীয় পার্টিতো দিবালোকের মতো স্পষ্ট সুযোগ-সুবিধা পায়।
কাদের সিদ্দিকী বলেন, আমি দীর্ঘদিন আওয়ামী লীগ করেও এখন তাদের শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হয়েছি। আমার বড় ভাই লতিফ সিদ্দিকী যখন মন্ত্রীত্ব হারিয়েছেন, আওয়ামী লীগের সদস্য পদ হারিয়েছেন তখন আমাদের নিয়ে অনেকে অনেক কথা বলার চেষ্টা করছে। এ সময় তিনি টাঙ্গাইল জেলা সহকারী জজ আদালতের রায় পড়ে শোনান।
তিনি আরো বলেন, অনেক পত্রিকায় লেখা হয়েছে যে, আওয়ামী লীগ আমাকে বহিষ্কার করেছে। আওয়ামী লীগের আমেরিকা জয় করার সামর্থ হতে পারে, চীনকে দখল করতে পারে, ভারতকে জয় করতে পারে। কিন্তু আওয়ামী লীগের আমাকে বহিষ্কার করার সামর্থ হয় নাই আর তারা সেই ক্ষমতাও রাখে না। আমি আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করে কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ গঠন করি।
প্রসঙ্গত, দির্ঘদিন ধরে সরকারী কুমুদিনী কলেজের সাথে কলেজের সামনে মূল চত্বরের বাইরে ৩২ শতাংশ জায়গা নিয়ে কাদের সিদ্দিকীর সাথে দ্বন্ধ চলে আসছিলো। গত বৃহস্পতিবার কাদের সিদ্দিকী জমিটির চারপাশে সিমেন্টের খুঁটি ও বাঁশের বেড়া দিয়ে বেষ্টনী তৈরি করান।
এ ঘটনায় কলেজের অধ্যক্ষ শরিফা রাজিয়া টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসককে লিখিতভাবে বিষয়টি জানান। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা নিতে তিনি জেলা প্রশাসককে অনুরোধ করেন।
এরপর জেলা প্রশাসকের পক্ষে নির্বাহী হাকিম ও সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) আসলাম মোল্লা পুলিশ নিয়ে গত শুক্রবার ওই জমিতে যান এবং ‘মালিকানা নির্ধারিত না হওয়া পর্যন্ত কোনো প্রকার স্থাপনা/নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ না করার জন্য নির্দেশনা’ সম্বলিত নোটিশ টাঙিয়ে দিতে যান।
একপর্যায়ে কাদের সিদ্দিকী তাঁর পক্ষে আদালতের দেওয়া রায়ের কপি ও সংশ্লিষ্ট কাগজপত্র নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সেগুলো দেখিয়ে তিনি জমিতে ওই নোটিশ না টাঙানোর অনুরোধ করেন। তবে অনুরোধ উপেক্ষা করে নির্বাহী হাকিম নোটিশ টাঙিয়ে দিয়ে চলে যান। কিছুক্ষণ পরই কয়েক যুবক নোটিশটি খুলে নিয়ে যান। এ খবর জানার পর কলেজের শিক্ষকেরা কয়েক শ’ শিক্ষার্থীকে এনে বিরোধপূর্ণ জমির সামনে অবরোধ করেন।
কলেজ কর্তৃপক্ষের দাবি কলেজের কলেজের প্রতিষ্ঠাতা রণদা প্রসাদ সাহা ১৯৫৪ সালের ১৬ জুলাই বেলা রানী সিংহের কাছ থেকে কলেজের সামনের ৩২ শতাংশ জায়গা কলেজের জন্য কেনেন। ১৯৭৯ সালে কলেজটি সরকারীকরণ হওয়ার পর জমিটিও সরকারি সম্পত্তি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হয়।
জমিটি কলেজের নিয়ন্ত্রণেই রয়েছে।
তবে মালিকানা দাবি করে আসছেন কাদের সিদ্দিকীও। তার দাবি, তিনি ১৯৭২ সালে মালিক কালিদাস রায়ের কাছ থেকে তিনি এ জমি কেনেন। ২০০৩ সালে পুকুরের কিছু অংশ তিনি ভরাটও করেন। তখন এটি অর্পিত সম্পত্তির ‘খ’ শ্রেণির তালিকায় ছিল। পরে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণ ট্রাইব্যুনালে তিনি অবমুক্তির মামলা করেন। ট্রাইব্যুনাল গত বছর ৩০ জুন তার পক্ষে রায় দেন। ২৯ জুলাই খাজনাও দিয়েছেন তিনি।