ফল নিংড়ে রস বার করে খেয়ে বিরাট আত্মপ্রসাদ অনুভব করি আমরা ৷ আর সেই অবসরে স্বাস্থ্যকর খাদ্যটি পরিণত হয় অস্বাস্থ্যকর পানীয়ে ৷ অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট–ভিটা ভরপুর হওয়া সত্ত্বেও শুধুমাত্র চিনি ও ক্যালোরির দোষে দুষ্ট হয়ে সে আমাদের ক্ষতি করতে উঠেপড়ে লাগে ৷
ধরুন, ডাক্তার আপনাকে সারা দিনে ৪০০ গ্রাম ফল খেতে বলেছিলেন ৷ অর্থাৎ ৮০ গ্রাম করে পাঁচটা সার্ভিং ৷ একটা সার্ভিং মানে ছোট একটা টেনিস বলের মাপ ৷ এবং রস করে নয়, তিনি বলেছিলেন কামড়ে, চিবিয়ে বা চুষে খেতে, যাতে ফলটা শেষ করতে খানিকটা সময় লাগে ও ফলের ছোবড়াটুকুও শরীরে যায় ৷ কিন্তু আপনার তো অত সময় নেই ৷ কাজেই ৩–৪টি ফল জুস করে ঢক ঢক করে খেয়ে নিলেন ৷ আর নিমেষের মধ্যে তিন–চার গুণ ফ্রুকটোজ শরীরে ঢুকে শোষিত হয়ে সোজা গিয়ে হাজির হল লিভারে!
এ রকমই হওয়ার কথা ৷ কারণ অন্য সব চিনি, যেমন গ্লুকোজ, সুক্রোজ ইত্যাদিকে ভাঙতে যেমন শরীরের সব কোষ সক্রিয় হয়ে ওঠে, ফ্রুকটোজকে মেটাবলাইজ করতে পারে একমাত্র লিভার ৷ মাপমতো এলে তার কাজে ব্যাঘাত হয় না, কিন্তু যতখানি সে হ্যান্ডেল করতে পারে তার চেয়ে বেশি এসে গেলে চিনির বেশ খানিকটা ফ্যাটে (ট্রাইগ্লিসারাইডে) পরিণত হয়ে রক্ত ও লিভারে জমতে শুরু করে৷ সূত্রপাত হয় সেন্ট্রাল ওবেসিটি (পেট–কোমরে চর্বি জমা) ও ফ্যাটি লিভারের ৷ রক্তে ট্রাইগ্লিসারাইড এবং এলডিএল (খারাপ কোলেস্টেরল) বাড়ার আশঙ্কা তৈরি করে দেয়৷ একই সঙ্গে বাড়ে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সের আশঙ্কা, যা কি না ডায়াবেটিসের পূর্ব শর্ত৷ বাড়তে পারে ইউরিক অ্যাসিডও ৷
না, তার মানে ফলের রস একেবারে খাওয়া যাবে না এমন নয় ৷ আপনি যদি রোগাপাতলা ও অ্যাকটিভ হন, সপ্তাহে দু’–চার বার ছোট এক গ্লাস (১০০ মিলি) খেতে পারেন ৷ কিন্তু ওজন বেশি হলে ও কোনও মেটাবলিক সমস্যা, যেমন, হাই প্রেশার, ডায়াবেটিস, ফ্যাটি লিভার, হাই কোলেস্টেরল–ট্রাইগ্লিসারাইড ইত্যাদি থাকলে, মোটামুটি সপ্তাহ দশেকের মধ্যে সমস্যা বাড়বে ৷ যত বেশি খাবেন, তত বেশি বাড়বে৷’’ মোটামুটি ওভার ওয়েট এক জন মানুষ যদি দিনে ৪৮০ মিলি আঙুরের রস মাস তিনেক ধরে খান, তার কোমরের মাপ ও ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স বাড়ে চোখে পড়ার মতো৷ আবার দিনে দুই সার্ভিংয়ের বেশি ফলের রস খেলে মহিলাদের মধ্যে গাউটের রিস্ক প্রায় দ্বিগুণ হয়ে যায় ৷
এ বার দেখা যাক, গোটা ফল খেলে কী হয় ৷ ফলের ছোট একটি টুকরো যখন কামড়ে, চিবিয়ে ও গিলে খাওয়া হয়, এক এক বারে শরীরে অল্প করে ফ্রুকটোজ ঢোকে৷ সেটুকুও আবার ফাইবারে মিশে থাকে বলে ধীরে ধীরে শোষিত হয় শরীরে ৷ পেট অনেক ক্ষণ ভরা থাকে, তৃপ্তি হয় ৷ লিভারেরও কোন অসুবিধে হয় না ৷ কিন্তু তার বদলে যদি এক গ্লাস ফলের রস খান, যা বানাতে কম করে ৩–৪টি ফল লাগে, সেই অনুযায়ী ক্যালোরিও বাড়ে, (৩৫০ মিলি কোক–এ যেখানে ১৪০ ক্যালোরি থাকে, ৩৫০ মিলি অ্যাপেল জ্যুসে থাকে ১৬৫ ক্যালোরি) কিন্তু তরল খাদ্য বলে খিদের তেমন সুরাহা হয় না ৷ খানিক ক্ষণের মধ্যে আবার কিছু খাওয়ার প্রয়োজন হয় ৷ ফলে টোটাল ক্যালোরি ইনটেক অনেক বেড়ে যায় ৷ তার উপর যদি সঠিক জ্যুসার ব্যবহার না করেন বা নিয়ম মেনে ফল না ধুয়ে নেন, বিপদ আরও বাড়ে৷