বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ: আসবনে না মমতা

Slider ফুলজান বিবির বাংলা

118676_mamamma

ঢাকা: আবার বেঁকে বসেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি যোগ দিচ্ছেন না আসানসোলে কাজী নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিটেতে শনিবারের সমাবর্তন অনুষ্ঠানে। নবান্ন থেকে এ বিষয়ে দুটি কারণ জানানো হয়েছে। এর যথার্থতা নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বজনপ্রীতি ও অনিয়মের অভিযোগ আছে। এ জন্য তিনি অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পারবেন না।

ওই অনুষ্ঠানেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ডি-লিট দেয়ার কথা ছিল। মমতার এমন সিদ্ধান্তে অনুষ্ঠানের অতিথি তালিকা শেষ মুহূর্তে পরিবর্তন করা হয়েছে। এ নিয়ে টাইমস অব ইন্ডিয়া একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছে। তাতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে পশ্চিমবঙ্গের কাজী নজরুল ইসলাম ইউনিভার্সিতে যে সমাবর্তন অনুষ্ঠানে শনিবার সম্মানসূচক ডি-লিট দেয়া হচ্ছে, শেষ মুহূর্তে এসে সেই অনুষ্ঠানের অতিথিদের তালিকা আকস্মিকভাবে পরিবর্তন করা হয়েছে। অনুষ্ঠানের মাত্র ৭২ ঘন্টা আগে ওই তালিকা থেকে বাদ দেয়া হয়েছে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম। তার অর্থ হলো শেখ হাসিনাকে কেন্দ্র করে ওই ইভেন্টকে পাশ কাটাচ্ছেন মমতা। আরো বলা হয়, শনিবারের ওই অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির নামও বাদ দেয়া হয়েছে। কি কারণে হঠাৎ করে এই সমাবর্তনের অতিথি তালিকায় পরিবর্তন! পরিবর্তিত অতিথির তালিকা পাঠানো হয়েছে বুধবার। তাতে বলা হয়েছে, রাজ্য সরকারের সিনিয়র একজন কর্মকর্তা কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর সাধন চক্রবর্তীকে ফোন কল করেছিলেন। তাতে অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রী উপস্থিত থাকতে পারবেন না বলে জানিয়ে দেয়া হয়। সমাবর্তন অনুষ্ঠানের যে আমন্ত্রণপত্র ছাপানো হয়েছে তাতে চিফ গেস্ট বা প্রধান অতিথি হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম রয়েছে। তার বক্তব্য রাখার জন্য সেখানে ২০ মিনিট সময় বরাদ্দ রাখা হয়। সেখানেই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তার সাক্ষাত হওয়ার কথা ছিল। ওই অনুষ্ঠানে মমতা যে যোগ দিচ্ছেন তা মঙ্গলবারও নিশ্চিত ছিল। তার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষাকারীরা অনুষ্ঠানস্থল, ভিভিআইপি এলাকা পরিদর্শন করেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তের মমতার সিদ্ধান্ত বদলের কথা জানিয়ে দেয়া হয়। ফলে অতিথি তালিকায় পরিবর্তন আসে। এমন ঘটনাকে অত্যন্ত অস্বাভাবিক ও সমাবর্তন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তকেও অস্বাভাবিক বলে উল্লেখ করছেন কর্মকর্তারা। বিশেষ করে এমন একটি অনুষ্ঠান যেখানে আমন্ত্রিত একটি দেশের প্রধান থাকছেন আমন্ত্রিতদের মধ্যে। এর জবাবে নবান্ন কর্মকর্তারা দুটি কারণ দেখিয়েছেন। এর একটি হলো ‘অফিসিয়াল রিজন’। দ্বিতীয়টি হলো ‘আনঅফিসিয়াল রিজন’। অফিসিয়াল রিজনে বলা হয়েছে, ওই বিশ্ববিদ্যালয় নবান্নের অনুমোদন ছাড়াই মুখ্যমন্ত্রীর নাম ব্যবহার করেছে। এটা একটা ভুল। অন্যদিকে আনঅফিসিয়াল রিজন সম্পর্কে নবান্ন কর্মকর্তারা যে কারণ দেখিয়েছেন তা আরো গুরুত্বর বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটি ক্যাম্পাসে মারাত্মক স্বজনপ্রীতি ও আর্থিক অনিয়মের অভিযোগ চলমান আছে। মুখ্যমন্ত্রী বিষয়টি জানতে পেরেছেন। এ জন্য তিনি ওই বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ওদিকে বুধবার নতুন করে আমন্ত্রিতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন পশ্চিমবঙ্গের গভর্নর ও বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর কেশরি নাথ ত্রিপাঠি। সম্মানিত অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী পার্থ চট্টপাধ্যায়। শুক্রবার সন্ধ্যা নাগাদ আসানসোলে পৌঁছার কথা রয়েছে কেশরি নাথের। তিনিই শনিবার বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে স্বাগত জানাবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে। ওদিকে কাজী নজরুল ইউনিভার্সিটির কর্মকর্তারা বলছেন, শেষ মুহূর্তে অতিথি তালিকা পরিবর্তন করা হলো যে দুটি কারণে সে সম্পর্কে তারা জানেন না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার সীতাংশু কুমার গুহ বলেছেন, নতুন আমন্ত্রণপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর নাম নেই। কারণ, এখনও সমাবর্তনে তার যোগ দেয়া অনিশ্চিত। তবে রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী পরিবর্তিত অতিথি তালিকার বিস্তারিত জানাতে অস্বীকৃতি জানান। বিশ্ববিদ্যালয় আর কোনো বিতর্কে যেতে চায় না। তাই তারা আমন্ত্রণ করেছে আসানসোলের বিজেপি দলীয় এমপি ও জুনিয়র কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়কেও।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *