কথায় বলে কানে হাত দিয়ে না দেখে চিলের পিছে দৌঁড়ে লাভ নেই। এটা প্রবাদ না হলেও, প্রবাদ হতে পারত। কারণ এই বাক্যের বাস্তবতা চিরায়ত। আমরা চিলের পিছে দৌঁড়াই বেশী, অথচ আমরা যারা দৌঁড়াচ্ছি প্রত্যেকেরই দেহে দুটি করে কান আছে। ওই কান দুটি প্রথম ছুঁয়ে দেখে দৌঁড়টা শুরু করলে অনেকের দৌঁড়ঝাপ কমে যেত। বার বার যদি চিল কানই নেয়, তবে কানকে বিশেষ নিরাপত্তায় রাখলে আর কান হারানোর ভয় থাকে না। তেমনি, সরষের মাঝে ভূত থাকলে, সরষে থেকে খাঁটি তৈল পাওয়া যায় না। তাই ভূত ছাড়িয়ে সরষার তৈল সংগ্রহ করলে আর ভেজালের ভয় থাকে না।
সম্প্রতি শুরু হয়েছে মাদক বিরোধী যুদ্ধ। “চল যাই যুদ্ধে মাদকের বিরুদ্ধে” এই শ্লোগানে আমরা এখন যুদ্ধ করছি। রাত-দিন বিরতিহীন যুদ্ধ। এই যুদ্ধে গত ১০দিনে নিহত হয়েছেন ৫২ জন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দাবি, তাঁদের মধ্যে ৪৬ জনই মাদক ব্যবসায়ী। এসব অভিযানে উদ্ধার হয়েছে অনেক মাদকদ্রব্য, টাকা ও অস্ত্র।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ১৪ মে ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে মাদক কেনাবেচায় জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে কঠোরতম আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
সরকারের এই যুদ্ধকে বিরোধীরা সমর্থন করছেন না। আবার মানবাধিকার কর্মীরাও বিরুদ্ধে কথা বলছেন সরকারের। আর সরকার সমালোচনাকে কোন পাত্তাও দিচ্ছে না। এরই মাঝে চলছে বিরতিহীন যুদ্ধ।
সম্প্রতি এই বিষয়ে আন্তর্জাতিকভাবেও সমালোচনা শুরু হয়েছে। আর বিরোধী পক্ষের জন্য সরকারের জবাব হল, মাদকের বিরুদ্ধে সকলেরই এগিয়ে আসা উচিত।
দাবী উঠেছে, সরকার দলীয় একজন সাংসদ ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। গণমাধ্যমে অনেক দিন ধরেই খবরটি মাঝে মাঝে আসছে। আর সরকারী একাধিক দপ্তরও তাদের তালিকায় বদির নাম যুক্ত করেছে। এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলছেন, বদির বিরুদ্ধে তথ্য আছে, প্রমান নেই। এ বিষয়ে সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ বলেছেন, আমাদের সাথেই অনেকে সংসদে আছেন। চলেন আইন করি, মাদকের শাস্তি মৃত্যুদন্ড।
তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, বাংলাদেশে মাদক এখন একটি ভয়ানক মহামারী। এই মহামারী আমাদের দেশকে অস্থির করে তুলেছে। মাদকের কারণে সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় শান্তি বিনষ্ট হচ্ছে। নীতি ও নৈতিকতার অধঃপতন হচ্ছে নিয়মিত। মাদকের ভয়াল ছোঁবলে অন্যান্য অপরাধও বাড়ছে হু হু করে। পরিচিতই শুধু নয় অপরিচিত অপরাধও বাড়ছে অনেকটা মাদকের কারণেই।
গণমাধ্যমে খবর এসেছে, আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর ইউনিট পুলিশের কতিপয় সদস্য মাদকের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত। তারা মাদকের ব্যবসা করেন ও করান। আবার অনেক সময় ভাল মানুষ ধরে পকেটে মাদক ঢুকিয়ে গ্রেফতার করেন। ফলে পুলিশের মাদক বিরোধী অভিযান প্রায়ই প্রশ্নবিদ্ধ হয়। সঠিকভাবে অভিযান হলেও প্রশ্ন এসে যায়।
সম্প্রতি মাদক নিয়ন্ত্রন অধিদপ্তর, তাদের কতিপয় কর্মকর্তাকেও মাদকের সঙ্গে যুক্ত থাকার অভিযোগে চিহিৃত করেছে বলে গণমাধ্যমে খবর এসেছে।
সুতরাং, আমরা বলতে পারি যে, যারা মাদক নিয়ন্ত্রন করেন তাদের মধ্যেই আসামী আছে। ওই আসামীদের সঙ্গে নিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রন করলে নিয়ন্ত্রন না হয়ে বিস্তারও বাড়তে পারে। তাই মাদকের আসামী বাদ দিয়ে মাদক নিয়ন্ত্রন করলে মাদক মুক্ত অভিযান সফলতার মুখ দেখবে। না হয়, মাদক ব্যবসায়যুক্ত কোন মাদক নিয়ন্ত্রন কর্মীর হাতে মাদকের বিরুদ্ধে প্রতিবাদকারী কেউ ক্রস ফায়ারে মারাও যেতে পারে। ফলে ভাল-মন্দ মিলে লাশের সংখ্যা বাড়বে, যার মধ্যে মাদক বিরোধী কোন প্রতিবাদকারীও ব্যবসায়ীর লাশের কাতারে থেকে চিরজীবন জাতির কাছে ইতিহাস হয়ে রবে।
লেখক,
ড. এ কে এম রিপন আনসারী
সভাপতি
অনলাইন প্রেসক্লাব বাংলাদেশ