ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নির্ধারিত সফরের দুইদিন পূর্বে সামরিক অভিযান স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছেন সেদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং। বুধবার এক টুইট বার্তায় তিনি এ ঘোষণা দেন।
তবে রাজনাথ সিংয়ের এ সিদ্ধান্ত ঘোষণার পর স্বাধীনতাকামীদের রাজনৈতিক জোট হুরিয়াত কনফারেন্সর নেতা মিরওয়াইজ ওমর ফারুক প্রশ্ন রাখেন, এক মাস সামরিক অভিযান স্থগিতের পর কী হবে? এরপর তাদের (ভারতীয়) লক্ষ্য কী হবে? এরপর কি ভারতীয় সামরিক বাহিনী আবার আমাদের হত্যা করবে? আমাদের বিরুদ্ধে তাদের বন্দুক, বুলেট, টিয়ার গ্যাস, পিপার স্প্রে, পেলেট গান এক মাস পর আবারো গর্জে উঠবে?
হুরিয়াত আয়োজিত এক সম্মেলনে মিরওয়াইজ ওমর ফারুক রাজনাথ সিংয়ের প্রতি প্রশ্ন রেখে বলেন, আপনি বলেন বন্দুক নামিয়ে রাখা উচিত। আমাদের শিক্ষিত ছেলেরা যে বন্দুক তুলে নিয়েছে তার কারণ কি? এর মূল কারণ কাশ্মির সংঘাত। আমরা বিশ্বাস করি যে, জম্মু ও কাশ্মির একটি বিতর্কিত অঞ্চল। এখানে ভারত এবং পাকিস্তান দুটি পক্ষ এবং তারা স্বীকার করে নিয়েছে যে কাশ্মিরের ভবিষ্যত গণভোটের মাধ্যমে মীমাংসিত হবে।
তিনি বলেন, ‘কাশ্মিরের আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার যা আর্ন্তজাতিকভাবে স্বীকৃত অধিকার। এই সঙ্কটের মূল কারণটি সমাধান করুণ।
গত বুধবার ভারত অধিকৃত জম্মু কাশ্মিরে রমযান মাস উপলক্ষে ভারতীয় বাহিনী কোনো অভিযান পরিচালনা করবে না বলে জানান রাজনাথ সিং। তিনি বলেন, মুসলিমরা যাতে রমযান মাসে তাদের রোজা শান্তিপূর্ণভাবে পালন করতে পারে তার জন্য রমজান মাসে অভিযান পরিচলনা না করতে বাহিনীগুলোর প্রতি নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র। মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতিকে কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্ত জানানো হয়েছে।
তবে আরেকটি টুইটে বলা হয়, ভারতীয় বাহিনী শত্রু বাহিনী বা বিচ্ছিন্নতাবাদী কোন গ্রুপ দ্বারা আক্রমণের শিকার হলে পাল্টা জবাব দেবে।
রাজনাথের টুইটের আধাঘন্টা পর জম্মু কাশ্মিরের মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি রাজনাথ সিংয়ের টুইটকে স্বাগত জানান। তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও রাজনাথ সিংকে কাশ্মির বিষয়ে ব্যক্তিগত হস্তক্ষেপ করার জন্য কৃতজ্ঞতা জানান।
বিশ্লেষকরা বলেন,জম্মু-কাশ্মিরের ক্ষমতাসীন দল পিপলস ডেমোক্রেটিক পার্টি (পিডিপি) চায় অভিযান বন্ধ করার সাময়িক প্রস্তাব; কিন্তু সুুশীল সমাজের লোকরা বলেন, রাজনাথ সিংয়ের প্রস্তাব কোন যুদ্ধবিরতি বা যুদ্ধের অবসান নয়।
এশিয়ান ফেডারেশন জম্মু কাশ্মির জোটের বেসামরিক সোসাইটির সহকারি দপ্তর ও প্রোগ্রাম সমন্বয়কারী খুররম পারভেজ বলেছেন, যুদ্ধের অবসান মানে ছয় শ’ রাজনৈতিক বন্দীর মুক্তি, সব ধরনের সহিংসতার অবসান, মানুষকে অত্যাচার, গ্রেপ্তার, ঘেরাও, অভিযান পরিচালনা ইত্যাদির মাধ্যমে ভয় দেখানো বন্ধ করা এবং অর্থবহ সংলাপের জন্য সকল পক্ষের সাথে বিবাদপূর্ণ কাশ্মির নিয়ে আলোচনা করা।
খুররম পারভেজ আরো বলেন, রাজনাথ সিংয়ের প্রস্তাব যুদ্ধবিরতির কোন ঘোষণা নয়, যুদ্ধবিরতি মানে শুধুমাত্র স্বাধীনতাকামীদের বিরুদ্ধে অভিযান বন্ধ করা নয়। স্বাধীনতাকামী জনগণের নিরাপত্তাবিরোধী আইন কি বৈরিতা নয়? রাজনৈতিক কারণে ছয়শ রাজবন্দীকে কারাগারে রাখা কি বৈরিতা নয়?
এমন কি কাশ্মিরে সক্রিয় ভারতপন্থী রাজনীতিবীদরাও বিরোধপূর্ণ অঞ্চলটিতে সাময়িক স্থগিতের চেয়ে বেশি কিছু চায়। তারাও চান এখানে স্থায়ী শান্তি আসুক।
মূলধারার বিরোধী দল ন্যাশনাল কনফারেন্সের নেতা নাসির আসলাম ওয়ানি(সোগামি) বলেন, নয়াদিল্লীর প্রস্তাবকে স্বাগত জানানো হবে যদি বিরোধপূর্ণ কাশ্মির অঞ্চলের সব পক্ষ সমস্যা সমাধানে অর্থবহ আলোচনা করে। কিন্তু এক মাসের সাময়িক অভিযান বন্ধের পর যদি আবারো তাদের বন্দুকগুলো নিরীহ মানুষের উপর গর্জন করে তাহলে এই একমাস সাময়িক অভিযান বন্ধ অর্থহীন।
পিডিপির প্রধান মুখপাত্র রাফি আহমেদ মীর বলেন, সাময়িক যুদ্ধ বিরতি হলো শান্তি স্থাপনের পূর্বশর্ত এবং এটা একটা সুযোগ কাশ্মিরের বিবাদ নিয়ে অর্থবহ আলোচনা করার।
প্রসঙ্গত ২০১৬ সালে কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনের নেতা বুরহান ওয়ানির নিহত হওয়ার পর এ পর্যন্ত ৪৬০ জন কাশ্মিরি নিহত হয়েছেন। সেই থেকেই উত্তপ্ত কাশ্মিরে প্রতিনিয়ত হতাহত হচ্ছে বেসামরিক মানুষ।