শেরপুর: কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরীকে নিয়ে শেরপুরে চলছে পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি। তাকে জেলা কমিটি ও সংসদীয় এলাকা থেকে প্রত্যাহার করতে কেন্দ্রে জেলা কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে দুই পক্ষ মুখোমুখি। সেখানে বিরাজ করছে উত্তেজনা। শনিবার বিকালে জেলা আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় মতিয়া চৌধুরী, শেরপুর-৩ আসনের এমপি একেএম ফজলুল হকসহ পাঁচ জনকে জেলা কমিটি থেকে বহিষ্কার ও নালিতাবাড়ী উপজেলা কমিটি বিলুপ্তির সুপারিশ করা হয়। জেলা আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক আবদুল্লাহ আল মামুন স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এসব সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও হুইপ মো. আতিকুর রহমান আতিকের সভাপতিত্বে সভায় জেলা কার্যনির্বাহী পরিষদের ৭১ সদস্যের মধ্যে ৫২ জন উপস্থিত ছিলেন বলে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে সভার সিদ্ধান্ত জানার পর মতিয়া চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষুব্ধ হয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছেন। কর্মসূচির মধ্যে গতকাল জেলা ও উপজেলা সদরে বিক্ষোভ মিছিল ও হুইপ আতিকের কুশ পুত্তলিকা দাহ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগের একটি বৃহৎ অংশ মতিয়া চৌধুরীর পক্ষ নিয়ে মাঠে নেমেছে। প্রতিবাদে তারা গতকাল সংবাদ সম্মেলনসহ জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিকের অপসারণের দাবিতে ঝাড়ু মিছিল ও তার কুশ পুত্তলিকা দাহ করেছে। শহরের খরমপুরস্থ দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জেলা আওয়ামী লীগের ওই সিদ্ধান্তকে তথাকথিত, অগণতান্ত্রিক ও অবৈধ বলে উল্লেখ করে বলা হয়, কৃষিমন্ত্রী বেগম মতিয়া চৌধুরীকে শেরপুর থেকে প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জেলা আওয়ামী লীগের এখতিয়ার বহির্ভূত। এছাড়া সম্প্রতি দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি সাক্ষরিত এক পত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী, কোন কমিটি বা কোন নেতার বিরুদ্ধে শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ উঠলেও সেই কমিটি বাতিল বা সেই নেতাকে কোনক্রমেই বহিষ্কারের সুযোগ নেই কেন্দ্রীয় কমিটির অনুমোদন ব্যতীত। অর্থাৎ ওই নির্দেশনা অনুযায়ী দলের কাউকে বহিষ্কার করার এখতিয়ার একমাত্র কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদেরই রয়েছে। কাজেই জেলা আওয়ামী লীগের ওই সিদ্ধান্তই কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সিদ্ধান্তের পরিপন্থি। সংবাদ সম্মেলনে অবিলম্বে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আতিউর রহমান আতিককে ‘দুর্নীতিবাজ, অযোগ্য ও রাজাকারের সন্তানদের আশ্রয়-প্রশ্রয়দাতা’ হিসেবে উল্লেখ করে তাকে দলীয় দায়িত্বসহ জাতীয় সংসদের হুইপ পদ থেকে অপসারণের দাবি জানানো হয়। জেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল, মেয়াদোত্তীর্ণ হওয়ার পরও পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠিত না হওয়ায় শেরপুর সদর, শহর, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদী উপজেলা আওয়ামী লীগের কমিটি বাতিল এবং জেলার দলীয় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতাদের দিয়ে হুইপ আতিকের দুর্নীতি-অপকর্মের তদন্তের জন্য কেন্দ্রীয় নেতাদের সমন্বয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠনসহ জেলা আওয়ামী লীগের তথাকথিত সভার সিদ্ধান্ত বাতিলের দাবি জানান নেতারা। অন্যথায় সর্বস্তরের দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে ‘দুর্নীতিবাজ’ হুইপ আতিককে অবাঞ্চিত ঘোষণাসহ বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হুমায়ুন কবীর রুমান। ওইসময় সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ছানুয়ার হোসেন ছানু, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি এডভোকেট মুহাম্মদ আখতারুজ্জামান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি, জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক এডভোকেট রফিকুল ইসলাম আধার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সমাজকল্যাণ সম্পাদক তাপস সাহা, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামছুন্নাহার কামাল, জেলা যুবলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান হাবিব, জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ইফতেখার হোসেন কাফি জুবেরী, জেলা কৃষক লীগের সভাপতি আব্দুল কাদির, সদর উপজেলা ভাইস-চেয়ারম্যান বায়েযীদ হাছান, জেলা যুব মহিলা আওয়ামী লীগের আহবায়ক এডভোকেট ফারহানা পারভীন মুন্নী, জেলা পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান সাব্বির আহমেদ খোকন, সদস্য আব্দুল হান্নান ও আয়েশা সিদ্দিকা রূপালী, পৌর প্যানেল মেয়র তৌহিদুর রহমান বিদ্যুৎ, নেপোলীস্থ আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি জয়নাল আবেদীন হাজারী, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক নাজমুল ইসলাম সম্রাটসহ বিপুল সংখ্যক দলীয় নেতা-কর্মী উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনের পর বিক্ষুব্ধ দলীয় নেতা-কমীরা রাস্তায় হুইপ আতিকের কুশপুত্তলিকা দাহ করে। পরে ঝাড়ুসহ এক বিক্ষোভ মিছিল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এদিকে নকলা ও নালিতাবাড়িতেও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন নেতা-কর্মীরা।