বাংলাদেশে সাইবার অপরাধের শিকার ভুক্তভোগীদের ৫১.১৩ শতাংশ নারী এবং ৪৮.৮৭ শতাংশ পুরুষ। ক্রমেই সাইবার অপরাধের আখড়া হয়ে উঠছে ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম।
তবে সাইবার অপরাধের কারণে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন ১৮ থেকে ৩০ বছর বয়সী নারী ও মেয়েরা। আর প্রতিকারের উপায় নিয়ে স্বচ্ছ ধারণার অভাব এবং লোকলজ্জা ও ভয়-ভীতির কারণে সাইবার অপরাধ নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যাচ্ছে।
রবিবার রাজধানীর ঢাকা রিপোর্টাস ইউনিটির গোলটেবিল মিলনায়তনে সাইবার অপরাধ বিষয়ক এক গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে এই তথ্যগুলো তুলে ধরে সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশন কর্তৃপক্ষ।
গবেষণায় বলা হয়, ভুক্তভোগীদের মধ্যে ১৮ বছরের কম ১০.৫২ শতাংশ, ১৮ থেকে ৩০ বছরের কম ৭৩.৭১ শতাংশ, ৩০ থেকে ৪৫ বছর ১২.৭৭ শতাংশ এবং ৪৫ বছরের বেশি ৩শতাংশ। এতে উল্লেখ করা হয়, ব্যবহারের অসচেতনতার কারণে বাংলাদেশের ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর একটি বড় অংশই দেশের ভেতর ও বাইরে থেকে সাইবার হামলার শিকার হচ্ছেন। এতে তারা আর্থিক ক্ষতির পাশাপাশি সামাজিকভাবেও হেয় হচ্ছেন। মোট ১৩৩ জন ভুক্তভোগীর উপর পরিচালিত জরিপে দেখা গেছে, জেন্ডারভিত্তিক পরিসংখ্যানে অ্যাকাউন্ট জাল ও হ্যাক করে তথ্য চুরির মাধ্যমে অনলাইনে সবচেয়ে বেশি অনিরাপদ বাংলাদেশের নারীরা। গড়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভুয়া অ্যাকাউন্টে অপপ্রচারের শিকার হন ১৪.২৯ শতাংশ নারী। একই ধরনের অপরাধের শিকার হন ১২.৭৮ শতাংশ পুরুষ।
অবশ্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের আইডি হ্যাকিংয়ে তথ্য চুরির শিকার নারী-পুরুষের অনুপাতে পুরুষের অবস্থান দ্বিগুণের চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে ১৩.৫৩ শতাংশ পুরুষ আক্রান্ত হলেও নারী আক্রান্তের হার ৫.২৬ শতাংশ। অপরাধের ধরনে তৃতীয় অবস্থানে থাকা ছবি বিকৃতির মাধ্যমে অনলাইনে অপপ্রচারে নারী ভুক্তভোগীর হার ১২.০৩ শতাংশ এবং পুরুষ ভুক্তভোগী ৩.৭৬ শতাংশ। আবার হয়রানির শিকার হলেও ভুক্তভোগীদের ৩০ শতাংশই এর বিরুদ্ধে কিভাবে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হয় সে বিষয়ে জানেন না। বাকিদের মধ্যে ২৫ শতাংশ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে অভিযোগ করেও কোন লাভ হবে না ভেবে অভিযোগ করেন না। তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ২১ শতাংশের মধ্যে ৭ শতাংশ আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে নালিশ করে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। আর ২৩ শতাংশ আইনি ব্যবস্থা নিয়ে উল্টো হয়রানির ভয়ে পুরো বিষয়টিই চেপে যান। আবার সামাজিক মর্যাদা রক্ষায় পুরো বিষয়টি গোপন রাখেন ১৭ শতাংশ এবং প্রভাবশালীদের ভয়ে নিশ্চুপ থাকে ৫ শতাংশ ভুক্তভোগী।
প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সাইবার ক্রাইম অ্যাওয়ারনেস ফাউন্ডেশনের উপদেষ্টা প্রযুক্তিবিদ একেএম নজরুল হায়দার। গবেষণাটি উপস্থাপন করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক কাজী মুস্তাফিজ। এতে আরও উপস্থিত ছিলেন ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের যুগ্ম সম্পাদক মঈন উদ্দিন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক রাশেদা রওনক খান।